শিরোনাম
দিনাজপুর, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার ১৩টি উপজেলায় এবার ভুট্টার চাষে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। শীতের প্রকোপ কম থাকা, সঠিক সময়ে বৃষ্টি এবং রৌদ্রের প্রখরতা না থাকায় ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ার আশা করছেন কৃষকেরা।
দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরের ভুট্টা চাষ নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নুরুল হুদা আজ মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, চলতি বছর রবি মৌসুমে জেলার ১৩ টি উপজেলায় ৭৫ হাজার ৭৫২ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টন ভুট্টা। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৯ লক্ষ ৮ হাজার ২৬৬ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা নির্ধারণ করা হয়।
কৃষি বিভাগের সূত্রটি জানায়, এবারে জেলায় অনুকূল আবহাওয়া ও সুস্থ পরিবেশ চলমান থাকায় জেলা ৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এবারে রবি মৌসুমে মোট ৭৯ হাজার ৪০২ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ অর্জিত হয়েছে। ফলে অতিরিক্ত ফলল উৎপাদন হবে ৪৩ হাজার ৭৬৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন ভুট্টা।
কৃষি বিভাগের সূত্রটি জানায়, গত বছর জেলায় ৭৫ হাজার ৭১৬ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় এবারে ৩ হাজার ৬৮৬ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, গত বছর জেলায় বাজারে প্রতি মণ কাঁচা ভুট্টা ৯'শত থেকে এক হাজার টাকা দরে কৃষকেরা বিক্রি করেছে। শুকনা ভুট্টা প্রতি মণ এক হাজার ২'শত থেকে এক হাজার ৪'শত টাকা পর্যন্ত কৃষকেরা বিক্রি করেছে। গত বছর ভুট্টার ভালো ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় জেলায় ভুট্টার আবাদ বেড়েছে ।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া বলেছেন, তিনি গত কয়েক দিন জেলার ১৩টি উপজেলার এবারে সরেজমিনে ভুট্টা চাষের বিষয় ঘুরে দেখেছেন। জেলার উঁচু জমিসহ নদীর ধারে চরগুলোতে ব্যাপক হারে কৃষকেরা ভুট্টা চাষ করেছে। জেলার নদীগুলোর দু'পাশে চরের জমিতে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ভুট্টার ক্ষেতের মনোরম দৃশ্য ফুটে উঠেছে।
তিনি বলেন কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীদের পরামর্শে ভালো ফসল পেতে কৃষকরা ভুট্টা ক্ষেতের গাছের আগা ও পাতা ছেঁটে ফেলেছেন। যেন ভুট্টা গাছের ফলের গায়ে রোদের তাপ ভালো করে লাগতে পারে। এছাড়া ভুট্টা গাছের সব ধরনের পরিচর্যায় কৃষকেরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সব মিলিয়ে এবার জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন অর্জিত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি বিভাগের সূত্রটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে দূরবর্তী ঘোড়াঘাট উপজেলার আদর্শ কৃষক শামসুর রহমান জিন্না (৬৭) বলেন, ভুট্টা চাষে লাভ বেশি টেনশন কম থাকে। ধান চাষ করলে ধান ক্ষেতে যত ধরনের বালাই আক্রমণ মোকাবেলা করতে হয় এবং ধান কাটা শ্রমিকের সংকটের পাশাপাশি মজুরি বেশি। তাই ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। ধানের চেয়ে ভুট্টা চাষে অনেক বেশি লাভ হচ্ছে। তিনি বলেন ভুট্টা পরিপক্ক হওয়ার পর জমি থেকে ভুট্টার মশা নিষ্কাশন করে আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে সহজে মাড়াই করা যায়। তাই প্রতি বছর ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের।
দিনাজপুরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভুট্টার আবাদ। গত ৫ বছরে জেলা শহরে গড়ে উঠা ৫টি ফিড মিল স্থাপন করা হয়েছে। ওই সব মিলগুলোতে চাহিদা বেড়েছে ভুট্টার। ফলে ভুট্টার চাহিদা বেড়ে যাওয়া ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা আবাদে ঝুঁকেছেন ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, সাধারণত নদীর ধারে পলিমিশ্রিত ঢালু জমি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। দীর্ঘদিন যে জমিগুলো অনাবাদি থাকত, কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে সেসব জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে। তাছাড়া ভুট্টার আবাদ বাড়াতে সরকারি প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় কৃষকদের কৃষি প্রণোদন দেওয়া হচ্ছে।
চলতি রবি মৌসুমে এ জেলায় সাড়ে ১২ হাজার কৃষককে ২ কেজি করে ভুট্টার বীজ ও ২০ কেজি ডিএফপি ১০ কেজি এমওপি রাসায়নিক সারসহ প্রতিজন কৃষককে ৩০ কেজি করে সার সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারি প্রণোদনায় এসব কৃষক ৫০ শতক জমিতে ভুট্টা চাষ করতে পারছেন। ফলে কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।