সাতক্ষীরা, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেনকে দেশের প্রথম ভাষা শহীদের স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবিতে মানববন্ধন এবং প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। আনোয়ার হোসেন স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে গতকাল আশাশুনি উপজেলার আশাশুনি-সাতক্ষীরা সড়কে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন ১৯৩০ সালে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নানার বাড়ি বুধহাটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিল কনুই গাজী ও মায়ের নাম পরীজান বিবি। তিন ভাইয়ের মধ্যে আনোয়ার হোসেন ছিলেন সবার বড়।
মেধাবী আনোয়ার হোসেন বাড়ি সংলগ্ন বুধহাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন এবং ১৯৪৬ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে খুলনার বিএল কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ খুলনার তৎকালিন গান্ধী পার্কে (বর্তমানে হাদিস পার্ক) ভাষা আন্দোলনের পক্ষে ইস্তেহার পাঠ করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েকদিন পর তিনি মুক্তি পান। পরে ভাষা আন্দোলনের মিছিল থেকে ১৯৪৯ সালে পুলিশ তাকে আবারও গ্রেপ্তার করে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে পাকিস্তান সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়ণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন তিনি।
১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল আন্দোলন চলাকালে রাজশাহী কারাগারে গুলি চালিয়ে সাত বন্দীকে হত্যা করে তৎকালীন শাসক বাহিনী। এদের মধ্যে ছাত্রনেতা আনোয়ার হোসেন ছিলেন অন্যতম। আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ এবং সেখানে গুলিতে নিহত হওয়ার কারণে মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেনকেই প্রথম শহীদ বলে মনে করে তার স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি।
যদিও রাষ্ট্রীয়ভাবে এর কোন স্বীকৃতি নেই। তাই শহীদ আনোয়ার হোসেনকে দেশের প্রথম ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের দাবী জানায় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।
পাশাপাশি ‘শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেনের’ নামে আশাশুনি সরকারি কলেজের নামকরণ, সাতক্ষীরা, আশাশুনি, বুধহাটাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা, সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক তার নামে নামকরণ করা ও সরকারিভাবে তার নামে ট্রাস্ট গঠন কারার দাবী জানায় কমিটি নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধন শেষে এসব দাবীদাওয়া নিয়ে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায়ের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।