প্রাথমিক শিক্ষায় যুগান্তকারী সংস্কার ও উন্নয়ন করেছে সরকার

বাসস
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১০:২১

সাইফুল ইসলাম

ঢাকা, ৯ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : শিক্ষার ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে বিবেচিত প্রাথমিক শিক্ষা খাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একাধিক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

চলতি বছরে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬ হাজার ২৪৭টি অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ, ১৫  হাজার ১৪৪টি ওয়াশব্লক, ৪ হাজার ২৬১টি সীমানা প্রাচীর এবং ৬ হাজার ১৪০টি নলকূপ স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে ৩০টি নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হবে।

কক্সবাজারে দশতলা বিশিষ্ট একটি লিডারশীপ ট্রেনিং সেন্টারের নির্মাণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে শিগগিরই কার্যক্রম শুরু হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫ চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সহকারী শিক্ষক, শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত বিষয়ে মোট ১৬ হাজার ২৭টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

প্রধান শিক্ষকের ২ হাজার ৩৮২টি পদে বিসিএস (নন-ক্যাডার) থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে গ্রেডেশন তালিকা সফটওয়্যারে হালনাগাদ করা হবে এবং মামলা নিষ্পত্তির পর সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদান করা হবে।

চলতি অর্থবছরে ৭ হাজার ১১৫ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। শিক্ষার্থীদের শিখন অবস্থা মূল্যায়নের জন্য বেইজলাইন সার্ভে পরিচালনা করা হবে। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৫ সাল থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা পুনরায় চালু করেছে। বৃত্তি পরীক্ষার আওতায় ৮২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হবে, যার মধ্যে ৩৩ হাজার ট্যালেন্টপুল এবং ৪৯ হাজার ৫০০ জন সাধারণ বৃত্তির অন্তর্ভুক্ত। প্রস্তাবিত বৃত্তির হার ট্যালেন্টপুলে জনপ্রতি ৭ হাজার ৭০০ টাকা এবং সাধারণ বৃত্তিতে ৫ হাজার ৯০০ টাকা। 

এদিকে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ৯ কোটি ২০ লাখ পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে দেশের ১ কোটি ৮৬ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮ কোটি ৪২ লাখ পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণে ৬২২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। 

১৫০টি উপজেলায় স্কুল ফিডিং কার্যক্রমে চালু করা হবে সেপ্টম্বরে, যা শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত ও বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বাকি ৩৪৯টি উপজেলায় স্কুল ফিডিং কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১ কোটি শিক্ষার্থী উপকৃত হবে।

শিক্ষার মানোন্নয়ন ও স্থায়িত্ব রক্ষায় চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি৪) ধারাবাহিকতায় পঞ্চম কর্মসূচি (পিইডিপি৫) শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৩টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ের পুনঃনির্মাণ, মডেল বিদ্যালয় গঠন, মাঠ উন্নয়ন, চা বাগান এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপন, সৌরবিদ্যুৎ সংযোগ, শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ এবং আইসিটি সক্ষমতা বৃদ্ধি।

উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে ১ কোটি ১৪ লাখ শিক্ষার্থী উপকৃত হবে এবং এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৬৭৫ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা। শিক্ষার্থীদের শতভাগ ইএফটি'র মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।

প্রি-সার্ভিস প্রশিক্ষণ চালু করে ভবিষ্যৎ শিক্ষকদের পেশাগত প্রস্তুতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ১০টি পিটিআই-তে ১ বছর মেয়াদী কোর্স চালু করা হবে।

একীভূত শিক্ষাকে সামনে রেখে পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা, এসিস্টিভ ডিভাইস নীতিমালা হালনাগাদ, গারো ও সাদরি ভাষায় প্রশিক্ষণ এবং সেন্ড ম্যানুয়ালসহ ২৭ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পাঠদানে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় মনিটরিং ও শ্রেণিকক্ষ সজ্জা, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও এডুকেশন ইন ইমারজেন্সি খাতে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ এবং বিদ্যালয়ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় ৬৫ হাজার ৩৫৭টি বিদ্যালয়ের জন্য ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ৩ হাজার ইন্টারএকটিভ ফ্ল্যাট প্যানেল (আইএফপি) সরবরাহ, ডিজিটাল কন্টেন্ট স্টুডিও নির্মাণ, সার্ভার স্টেশন উন্নয়ন এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আইএমডি এর জনবল এবং আইপিএমএস সফটওয়্যার ব্যবস্থাও উন্নত করা হবে।

পিইডিপি৪-এর আওতায় শিক্ষার্থীদের আইকিউ টেস্ট চালু করা হবে। এটি ৫ ধাপে বাস্তবায়িত হবে এবং প্রথম দুই ধাপে ব্যয় হবে এককোটি টাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহায়তায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাদরি ও গারো ভাষায় পূর্বে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের সহায়ক হিসেবে বাংলায় উচ্চারণসহ ডিজিটাল কনটেন্ট প্রস্তুত করা হবে, যাতে মাতৃভাষায় পাঠদান সহজতর হয়।

মাঠ পর্যায়ের মনিটরিং কার্যক্রম আরও কার্যকর করতে ই-মনিটরিং অ্যাপস হালনাগাদ ও ইউজার ফ্রেন্ডলি করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সকল শিশুর জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার যে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
রাজশাহী বিভাগীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম পরিদর্শন করলেন  যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা
আগামীকাল বগুড়ায় দুদকের গণশুনানি
সিটিটিসির অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার
গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উদিত গণতন্ত্রের সূর্যকে অস্তমিত হতে দেয়া যাবে না : ড. মঈন খান
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের সততার ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে: মির্জা ফখরুল
উত্তর কোরিয়া সীমান্ত থেকে মাইক সরিয়ে নিচ্ছে : সিউল সেনাবাহিনী
সাংবাদিক তুহিন হত্যা: আওয়ামী লীগ নেতার গেস্ট হাউস থেকে শহিদুল গ্রেফতার
পারমাণবিক বোমা হামলার ৮০ বছর পূর্তি স্মরণ করল জাপান
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন অভিযান
বারিধারা পার্কে ‘পল্লী কবি জসীমউদ্দীন পাঠাগার' উদ্বোধন
১০