সূর্যমুখীর ফুলের হাসিতে কৃষকের আনন্দ, সৌন্দর্য পিয়াসীদের ভিড়

বাসস
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:২৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সূর্যমুখী ফুলের বাগান। ছবি: বাসস

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২৮  ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): সূর্যমুখী ফুলের হাসিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষকের মুখে মুখে এখন হাসির ঝলক। গত ১০ বছর ধরে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। 

এ বছর জেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়া কারণে ৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে ৯৭ মেট্রিক টন তেল উৎপাদন করা হবে। প্রতিদিন সকাল-বিকেল শহরসহ আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসীরা দল বেধে আসেন এই সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। অনেকেই বাগানে ঢুকে শখ করে ছবি তুলেন। দেখা যায়, কেউ সেলফি তুলতে ব্যস্ত কেউবা পরিবারের ছবি তুলতে ব্যস্ত, আবার কেউ ঘুরে ঘুরে বাগান দেখছেন। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

এদিকে কৃষকরা বলছেন অল্প পুঁজিতে সূর্যমুখী চাষে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছে আগামী দিনে ভালো ফলনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সরেজমিনে সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের খেওয়াই গ্রাম, রামরাইল ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রাম, ও পৌর এলাকার ভাদুঘর, নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের রসুলপুর ঘুরে দেখা গেছে সূর্যমুখী ফুলের বাগান। চাষিরা জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন গ্রামের জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। চারিদিকে হলুদ রঙের ফুলের মন মাতানো ঘ্রাণ, হলুদের সমাহার। প্রতিটি বাগানেই মৌমাছির দল গুনগুন শব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

মৌমাছিরা সূর্যমুখী ফুল থেকে মধু নেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। গ্রামে সূর্যের মতো হাসি দেওয়া হলুদ আভা ছড়ানো ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে প্রতিদিন বাগানে আসছেন ভ্রমণ পিপাসু নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

রসূলপুর সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে আসা জেলা শহরের কাজীপাড়ার রফিক বলেন, এখানে আসার পর দেখলাম জায়গাটি খুব সুন্দর। সূর্যমুখী বাগানে প্রথমবারের মতো আসলাম পরিবার নিয়ে। আমরা খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারছি। সূর্যমুখী ফুল দেখেও খুব ভালো লাগল।

তমা নামে আরেকজন বলেন, ফুল দেখে খুব ভালো লেগেছে। এখানে ঘুরতে আসলে মানুষ নিরাস হবে না। এই ফুল থেকে আবার তেলও তৈরি হয়। এই তেল খুব দামি। একই সঙ্গে তেল ও ফুল দুইটাই খুব ভালো। মানুষের উচিত বেশি বেশি করে সূর্যমুখী চাষ করা।

ভাদুঘর সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে আসা মহিনী বেগম জানান, বাবার বাড়ি বেড়াতে এসেছি। ফেসবুকে অনেকেই দেখি সূর্যমুখী বাগানে ঘোরার ছবি দিচ্ছে। সেই লোভেই বাগানে ঘুরতে আসা। এখানে এসে খুব ভালো লেগেছে। এই প্রথম সূর্যমুখী বাগান দেখলাম।

রসূলপুর বাগান মালিক জয়নাল আবেদিন জানান, এখানে ৩ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। তিন বিঘা জমি চাষে আমাদের প্রয় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যে ফুল এখন গাছে আছে তা দিয়ে আশা করছি লাভবান হতে পারব।

পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামের সূর্যমুখী ফুলের চাষি শাহানুর ভূইয়া জানান, আগে তিনি তার জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করতেন। গত কয়েক বছর ধরে সদর উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে তিনি তার জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছিলেন। বেশ ভালোই ব্যবসা হয়েছে। তাই এই বছর ও সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করেছি। 

তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশাকরি এবারও সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে। লাভবান হতে পারব।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার শাহানা বেগম বলেন, বিগত ১০ বছর ধরে সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় সূর্যমুখীর চাষাবাদ করা হয়। সদর উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে ৩০ জন কৃষক প্রমোদনার আওতায় এই সূর্যমুখী চাষাবাদ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুনসী তোফায়েল হোসেন জানান, সূর্যমুখী চাষ জমির উর্বরতার জন্য ভালো। এতে পোকামাকড় আক্রমণ করে কম। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক চাষাবাদ হলে পর্যটকদের আগমন ঘটবে।

সূর্যমুখী চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আগামী দিনে উন্নত জাতের সূর্যমুখী চাষাবাদের পরিকল্পনার কথা জানান কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।

তিনি আরও জানান, চলতি বছর ১০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়া কারণে ৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে ৯৭ মেট্রিক টন তৈল উৎপাদন করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
খুলনায় এনসিপির জুলাই পদযাত্রা বাস্তবায়নে ৬ সেল গঠন
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক হলেন মো. জাহাঙ্গীর কবির
গণহত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে : নাহিদ ইসলাম
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চলাচল সংস্থায় পুনঃনির্বাচনে বাংলাদেশের প্রার্থিতা ঘোষণা
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার ওপর প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বারোপ
নির্বাচনের আগেই ফ্যাসিস্টদের বিচার হবে : আইন উপদেষ্টা
সাবেক সিইসি শামসুল হুদার দাফন সম্পন্ন
জুলাই শহীদদের প্রেরণা অনুসরণ করলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ সম্ভব : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা
উপজেলা পর্যায়ে অধঃস্তন আদালত সম্প্রসারণে একমত রাজনৈতিক দলগুলো : আলী রীয়াজ
বাংলাদেশ নারী দলকে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা ক্রীড়া উপদেষ্টার
১০