বরগুনা, ১ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : জেলার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন খালে ২০০৮ সালে একজন ঠিকাদারের নির্মাণ করা ১০টি আয়রণ সেতু গত আট মাসে ভেঙ্গে পড়েছে। এ ১০ সেতুর মধ্যে শুক্রবার রাতে চর রাওঘা সেতুটি ভেঙ্গে গেছে। সেতুগুলো ভেঙ্গে পড়ায় চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৬৫ হাজার মানুষ যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই ১০ সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার হলদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম মৃধার শাস্তি দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন খালে ২১ টি আয়রণ সেতু নির্মাণে দরপত্র আহবান করে। প্রত্যেক সেতু ২ কোটি টাকা করে বরাদ্দ হয়। ওই সেতুগুলোর কাজ পান তৎকালীন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম মৃধা। অভিযোগ রয়েছে সেতু নির্মাণকালে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা প্রভাব খাটিয়ে দায়সারা কাজ করেছেন।
লোহার রেল পাতির বিম ও অ্যাঙ্গেল দেয়ায় কথা থাকলেও উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সঙ্গে আঁতাত করে নিম্নমানের লোহার বিম ও অ্যাঙ্গেল দিয়ে সেতু নির্মাণ করেছেন। সেতু নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর বিম নড়বড়ে হয়ে যায়। গত ১৩ বছর ধরে ওই নড়বড়ে সেতু দিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়াসহ উপজেলার অন্তত ৬৫ হাজার মানুষ চলাচল করে আসছেন। গত বছর জুন মাসে সেতুগুলো ভেঙ্গে পড়া শুরু হয়। ওই বছর ২২ জুন বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস নিয়ে হলদিয়া হাট সেতু ভেঙ্গে ১০ জন নিহত হয়। দেশ ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রকৌশল অধিদপ্তর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ সেতু ভেঙ্গে যাওয়ার ৫ দিন পড়েই মল্লিকবাড়ীর টেপুড়া খালের সেতু ভেঙ্গে পড়ে। এরপর এক এক করে বাঁশবুনিয়া, সোনাউডা, হলদিয়া বড় মোল্লা বাড়ী, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া নজরুল সিকদার বাড়ী, কাঁঠালিয়া বাজে সিন্ধুক, কাঁঠালিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন, চন্দ্রা আউয়াল নগর ও সর্বশেষ শুক্রবার রাতে চর রাওঘা সেতু ভেঙ্গে পড়েছে। গত আট মাসে ১০ টি সেতু ভেঙ্গে পড়ায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এভাবে ১০ সেতু ভেঙ্গে পড়লেও উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও প্রশাসন ঠিকাদার আওয়ামীলীগ নেতা শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। অপর দিকে ভেঙ্গে পড়া সেতুগুলো খালে পড়ে আছে। এ গুলো অপসারণের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ।
শনিবার হলদিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখাগেছে, সেতুগুলোর ভাঙ্গা অংশ খালে পড়ে আছে। মানুষ খালের মধ্যে বিকল্প বাঁশের সাকো নির্মাণ করে পারাপার হচ্ছে। চাওড়া চন্দ্রা গ্রামের নাশির হাওলাদার জানিয়েছেন, চাওড়া নদীতে নির্মিত দুইটি সেতু গত আট মাসের মাথায় ভেঙ্গে পড়েছে। এভাবে হলদিয়া ইউনিয়নের অনেক সেতু ভেঙ্গে পড়েছে। নির্মাণের ১৮ বছরের মাথায় এভাবে সেতু ভেঙ্গে যাবে তা মেনে নেয়া যায় না। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। স্থানীয় জালাল মীর বলেন, পরপর হলদিয়া ইউনিয়নে সেতুগুলো ভেঙ্গে পড়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। দ্রুত সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। চর রাওঘা গ্রামের খলিলুর রহমান বলেন, গত ১৫ বছর ধরেই সেতুটি নড়বড়ে ছিল। স্থানীয়রা ওই সেতুটি খেঁজুর গাছ দিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছে। শুক্রবার রাতে সেতুটির মাঝের অংশ ভেঙ্গে খালে পড়ে গেছে।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. হারুন অর রশিদ বজানান, গত আট মাস আগে সোনাউডা সেতু ভেঙ্গে পড়লেও উপজেলা প্রকৌশল অফিস কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে যোগাযোগ বিছিন্ন থাকায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানান হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক।
অভিযুক্ত ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। গত ৫ আগষ্ট থেকে তিনি পলাতক। তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।
আমতলীর উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী জানিয়েছেন, ওই সেতুগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে। সেতুর মেয়াদকাল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, এতো কিছু আমি জানিনা। তবে না জেনে কীভাবে মন্তব্য করলেন এমন প্রশ্নের সদুত্তর না দিয়ে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার বিরুদ্ধে সেতু নির্মাণের অনিয়ম তুলে ধরে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বরগুনার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো মেহেদী হাসান জানান, সেতু নির্মাণ কালেই ঠিকাদার অনিয়ম করেছেন। এতে সেতুগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।