সাগর-রুনি হত্যা: সাবেক বিচারপতি মানিককে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ

বাসস
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১৯:৩০
সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পতি। ছবি : সংগৃহীত

।। জাহাঙ্গীর আলম ।।

ঢাকা, ১ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহাইলকে তদন্তের স্বার্থে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা যে তথ্য দিয়েছেন তা যাচাই করা হচ্ছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজুল হক গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদলতে আবেদন করেন।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদন মঞ্জুর করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এরপর জেলগেটে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে আজ তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজুল হক বাসসকে নিশ্চিত করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজুল হক বলেন, ‘বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও মোহাম্মদ সোহাইলকে সাক্ষী হিসেবে সাগর-রুনি হত্যা মামলায় জিজ্ঞেসাবাদে আবেদন করি। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদ তারা যে তথ্য দিয়েছেন তা যাচাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া মামলায় হাজতী আসামি এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবীরকে একদিনের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি যে তথ্য দিয়েছেন তা যাচাই করা হচ্ছে।’

মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম বাসসকে বলেন, ‘আমি ন্যায় বিচার চাই। এপ্রিল মাসে টাস্কফোর্স যে প্রতিবেদন দিবেন তা যেন সুষ্ঠুভাবে দেওয়া হয় এই প্রত্যাশা আমার।’

তদন্তকারী কর্মকর্তা আবেদনে উল্লেখ করেন, শামসুদ্দিন মানিক (৭৪) বাড্ডা থানার একটি হত্যা মামলায় গত ৩০ অক্টোবর পুনঃ গ্রেফতার দেখানো হয়। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে আছেন। তাকে সাগর-রুনি হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করলে অত্র হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

এ ছাড়া মো. সোহাইল পল্টন থানার একটি হত্যা মামলায় গত ২১ আগস্টে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেল হাজতে আছেন। তিনি মামলার তদন্ত কার্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। তদন্তাধীন সময় সোহাইল র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব) পরিচালক (লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অত্র হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি তাদের শেরেবাংলা নগর থানাধীন পশ্চিম রাজাবাজারস্থ ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হয়। এটি বহুল আলোচিত সাগর-রুনি হত্যা মামলা। মামলাটি হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক টাস্কফোর্স গঠন পূর্বক বর্তমানে পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তরের নিকট তদন্তাধীন আছে। উল্লেখিত ব্যক্তিদের টাস্কফোর্স কর্তৃক অত্র মামলা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা বিশেষ প্রয়োজন।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব র‌্যাব থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গঠিত একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বহুল আলোচিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত চেয়ে আনা রিটের আদেশ মডিফিকেশন চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে এ আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।

বিষয়টি নিয়ে শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, ‘আশা করি এবার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং তদন্তের জন্য দেয়া এবারের ছয় মাস মানে ছয় মাস।’ এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৬ এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে হাইকোর্টে।

সাগর-রুনি হত্যা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। পরবর্তীতে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে র‌্যাব পায় তদন্তের দায়িত্ব।

এই হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

ঘটনার দুই মাস পরেও মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন। ইতোমধ্যে একযুগ পার হলেও মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা।

সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুর রহমান প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২ মার্চ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করেন। এ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ১১৫ বার সময় নেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
গাজায় আরও ১৫ ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দিল ইসরাইল
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার পানির ন্যায্য বণ্টন দাবি 
দশ বছর পূর্তিতে ১৪ নভেম্বর সমাবেশ ও মাথাল র‌্যালি করবে গণসংহতি আন্দোলন
হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারকে অপসারণ
আইজিপির সঙ্গে আয়ারল্যান্ড এবং ইইউ প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭৫ শতাংশ অগ্রগতি : প্রধান উপদেষ্টার কাছে রিপোর্ট পেশ
বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ১ কোটি তরুণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে: আমীর খসরু 
নির্বাচনের পর দেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে: সেনাসদর  
জুলাই যোদ্ধারা মিডিয়া ইকোসিস্টেমে যুক্ত হলে মিডিয়ার গুণগত পরিবর্তন আসবে : তথ্য উপদেষ্টা
মানিকগঞ্জ পরিদর্শনে সিআরপি’র প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর 
১০