কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক এমপি জাফর আলম গ্রেপ্তার 

বাসস
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৪৫ আপডেট: : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৩:২৪
সাবেক এমপি মো. জাফর আলম। ফাইল ছবি

কক্সবাজার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি  মো. জাফর আলমকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক এমপি মো. জাফর আলমকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জাফর আলম কক্সবাজার-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। জানা গেছে এই দুই পদের অপব্যবহার করে চকরিয়া-পেকুয়া সংসদীয় এলাকায় তিনি কায়েম করেছেন রামরাজত্ব। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজস্ব গুন্ডা বাহিনী। এই বাহিনী দিয়ে অবৈধভাবে দখল করছেন সরকারি জমি, জলাশয়, নদী এবং বিক্রি করছেন পাহাড় কেটে মাটিও। তার এসব কুকীর্তির অনুসন্ধানও শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।

দুদক ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, জাফর আলম এমপি হওয়ার পর ফুলে-ফেঁপে উঠেছে তার সম্পদ।

২০১৮ সালে প্রথমবার  সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাফর আলম। অল্প সময়ে মালিক হয়েছেন বিপুল অর্থ-সম্পদের। এমপি হওয়ার পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে দশ গুণ। তার স্ত্রী শাহেদা বেগম স্কুল শিক্ষিকা। স্বামী এমপি হওয়ার পর ফুলে-ফেঁপে উঠেছে তার সম্পদও। অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এমপি জাফর ও তার পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর অংশ হিসাবে ইতিমধ্যে দুদকের কক্সবাজার কার্যালয়ে জাফর আলম, তার স্ত্রী শাহেদা বেগম, ছেলে তানভির সিদ্দিকী তুহিন ও মেয়ে তানিয়া আফরিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 

দুদকের একটি সূত্র বলছে, জাফর আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সরকারি জমি ও জলমহাল দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে ২৩টি দলিলে ২৪ একর জমি নামে-বেনামে কিনে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া চকরিয়া ও পেকুয়ায় তিনটি মার্কেট রয়েছে তার, গাড়ি রয়েছে কয়েকটি। সব মিলিয়ে প্রায় শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় তার বার্ষিক আয়, অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ ছিল ১ কোটি ৫৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যেখানে তার নিজের নামে ছিল ৯৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার সম্পদ আর স্ত্রীর নামে ছিল ৬২ হাজার ৪০ টাকার সম্পদ। যৌথ মালিকানা বা তার আয়ের ওপর নির্ভরশীলদের কোনো আয় ছিল না। ২০২৩ সালে এসে তার বার্ষিক আয়, অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। যেখানে রয়েছে তার নিজের নামে ১০ কোটি ৭৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সম্পদ। স্ত্রীর নামে রয়েছে ২ কোটি ২১ লাখ ৭১ হাজার টাকা, যৌথ মালিকানায় রয়েছে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং তার আয়ের ওপর নির্ভরশীলদের রয়েছে ৩৩ লাখ ৯ হাজার টাকার সম্পদ।

হলফনামার তথ্য মতে, এমপি জাফর আলমের পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৭ গুণ। তিনি পেকুয়ায় সরকারি জলাশয় ও ড্রেন ভরাট করে তার মেয়ে তানিয়া আফরিন ও তার স্বামীর নামে নিউমার্কেট নির্মাণ করেছেন। যার বাজার মূল্য প্রায় আট কোটি টাকা। এই মার্কেট নির্মাণে সদর ইউনিয়নের বাইম্যাখালীর মো. আলমগীরের এক একর জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে এই সংসদ-সদস্যের বিরুদ্ধে। মো. আলমগীর বলেন, ‘২০১৫ সালে জায়গাটি ক্রয় করি। পাঁচ বছর আমার ভোগ দখলে ছিল। জাফর আলম এমপি হওয়ার পর ২০২০ সালে আমার এই জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ শুরু করেন। তার ক্যাডার বাহিনীর কাছে তখন অসহায় ছিলাম। পরে এ ব্যাপারে আদালতে মামলা করি।’

এই মার্কেট নির্মাণে পেকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ৬০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ মিটার প্রস্থের রাস্তাটিও দখল করার অভিযোগ উঠেছে এমপির বিরুদ্ধে। এতে ১২-১৫টি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। অন্যের জমি দখল করে চকরিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ছেলে তুহিন ও মেয়ে তানিয়ার নামে আরেকটি মার্কেট নির্মাণ করছেন এমপি জাফর আলম, যার বাজার মূল্য দুই কোটি টাকা। তিনি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তানিয়া আফরিনের নামে দুই একর জমি কিনে তা ভরাট করে দখলে নিয়েছেন। এটির মূল্য দুই কোটি টাকার বেশি। তানিয়া আফরিন ও তুহিনের নামে পৌরসভার চিরিংগার বিভিন্ন স্থানে জায়গা কিনেছেন। জমির মালিককে অনেকটা বিপদে ফেলে এসব জমি কিনেছেন তিনি। ‘সিস্টেম প্লাজা’ নামে আরেকটি মার্কেট রয়েছে তার, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। স্ত্রী শাহেদা বেগমের নামে রয়েছে শপিংমল ‘শাহেদা কমপ্লেক্স’। এছাড়া ছেলে তুহিনের নামে তিনি তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন বলে জানান স্থানীয়রা।

এমপি জাফর আলমের  বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ হলো, তিনি চকরিয়া বাস টার্মিনালের পূর্ব পাশে জলাশয় দখল ও ভরাট করে কয়েকজনের কাছে বিক্রি করেছেন। রামপুর মৌজায় গ্রামীণ ব্যাংকের নামে বরাদ্দ ৩০০ একরের চিংড়ি প্রজেক্ট এক চেয়ারম্যানকে দিয়ে রাতারাতি দখল করে নিয়েছেন। বরইতলী-মগনামা সড়কে নব নির্মিত বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সড়কে মাটি দেওয়ার নাম করে মছনিয়া কাটা এলাকায় সাবাড় করেছেন বিশাল পাহাড়। ছেলেকে মালয়েশিয়ায় পড়ানোর আড়ালে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে এমপি জাফরের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য তার ছেলে তানভির সিদ্দিকী তুহিনের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ঘোষণা করে ইসির গেজেট প্রকাশ
রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল থেকে উৎখাত হয়নি ইউক্রেন : দাবি জেলেনস্কির
আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল ঘোষণা করে বিচার দাবি মামুনুল হকের
জবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ছাত্রদলের বুকশেলফ প্রদান
সেবা নিশ্চিত ও অনিয়মের বিরুদ্ধে দুদকের পৃথক অভিযান
ট্রাম্পের হুমকিকে অসম্মানজনক বললেন গ্রিনল্যান্ডের নেতা
ডিএনসিসি প্রশাসকের সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ
শহীদকন্যা লামিয়ার খুনিদের মৃত্যুদণ্ড চান সারজিস
প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে দরকার কার্যকর, টেকসই ব্যবস্থাপনা 
বিচার ব্যবস্থা সংস্কারে করণীয় সম্পর্কে ব্লাস্টের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
১০