মহেশপুরে ইছামতী নদীতে বাঁশের সাঁকোয় ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

বাসস
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১৬:৩৮
ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ইছামতী নদীতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার হচ্ছে মানুষ। ছবি : বাসস

ঝিনাইদহ, ৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : জেলার মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ইছামতী নদীতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার হচ্ছে মানুষ। 

শ্যামকুড় ইউনিয়নের শ্রীনাথপুর হালদারপাড়ায় এমনই চিত্র দেখা গেছে। এতে বহু বছর ধরে ভোগান্তিতে আছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। তিন পাশে ইছামতী নদী হওয়ায় হালদারপাড়া গ্রামে প্রবেশের একমাত্র উপায় বাঁশের সাঁকো। বহুকাল ধরে হালদারপাড়ার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোয় পারাপার হচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রীনাথপুর হালদারপাড়ার তিনপাশে ইছামতি নদী। পশ্চিমে কেবল ভারতীয় স্থল সীমান্তের কাটাতার। হালদার পাড়ায় প্রবেশের জন্য ইছামতি নদী পার হওয়ার বিকল্প নেই। তবে ইছামতি নদী পার হয়ে হালদার পাড়ায় প্রবেশের জন্য নেই কোনো সেতু বা সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে হালদার পাড়ার বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে বাঁশের সাঁকোয় পারাপার হচ্ছেন। ফল, ফসল ও ভারী জিনিসপত্র বহনেও চরম ঝুঁকিতে পড়েন হালদার পাড়ার বাসিন্দারা।

গ্রামের স্কুল-কলেজগামী শিশু শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোতে পার হয় ইছামতি নদী। বর্ষাকালে নদীতে পানি বেড়ে গেলে দেখা দেয় আতঙ্ক। বিভিন্ন সময় সাঁকো দিয়ে পারাপারের সময় ঘটে দুর্ঘটনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ইছামতি নদীতে একটা ব্রিজ তৈরির দাবি জানিয়ে আসছে গ্রামের লোকজন। কিন্তু আজও একটা ব্রিজ নির্মাণ হয়নি। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী জানায়, দেশের সরকার আসে, সরকার যায়। কিন্তু ইছামতির বুকে একটা ছোট্ট বিজ্র কেউ করে দেয়না। হালদারপাড়ায় চাষাবাদ করতে যান আশেপাশের গ্রামের মানুষ। তাদেরও একমাত্র পারাপারের অবলম্বন বাঁশের সাঁকো।

এছাড়া চাষাবাদের জন্য আধুনিক মেশিন হালদারপাড়ায় নেয়া যায় না। উৎপাদিত ফসল আনা-নেয়ার কাজেও প্রায়ই ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক। গ্রামে নেই কোনো রাস্তা। ব্রিজ না হওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

পার্শ্ববর্তী মাঠপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ (৬০) বলেন, ছবি তুলে আর কি করবেন। মাঝেমধ্যেই লোকজন এসে ছবি তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু আজও আমাদের ব্রিজ হলো না। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে ভয় পায়। বর্ষাকালে নদীতে পানি বেড়ে গেলে বয়স্ক, নারী ও শিশুরা চলাফেরা করতে পারেনা। ব্রিজ না থাকায় হালদার পাড়ায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাঘাট হয়নি। হালদারপাড়ার বাসিন্দারা ঘর-বাড়ি করতে পারছেনা। ব্রিজ না থাকায় নদী পার করে ইট-বালুর মতো ভারী জিনিসি তারা গ্রামে নিতে পারে না। এলাকার জনপ্রতিনিধি বদলায়, কিন্তু আমাদের গ্রামের এই বাঁশের সাকো আজও বদলালো না।

হালদারপাড়ার বাসিন্দা রতন হালদার বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে ভয় পায়। নদী পার হতে গিয়ে বাচ্চারা অনেক সময় পানিতেও পড়ে যায়। বাঁশের সাঁকো পার হওয়া তো কঠিন। সরকারের কাছে আবেদন, আমাদের একটা ছোট্ট ব্রিজ হলেও যেন তারা বানিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মো. খালিদ হাসান বলেন, বছরের পর বছর একটি গ্রামের মানুষ একটা মাত্র ব্রিজের জন্য মানবেতর জীবনযাপন করছে, এটা খুবই কষ্টকর। আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি জানা ছিল না। দ্রুতই এ বিষয়ে কাজ করব।

তিনি আরও বলেন, হালদারপাড়ায় ইছামতি নদীতে ব্রিজ নির্মাণের জন্য আমি দ্রুত একটি প্রস্তাব তৈরি করছি। সেটি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে যতদ্রুত সম্ভব পৌঁছানোর ব্যবস্থা করব।

এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার বলেন, মহেশপুরে আমি নতুন যোগদান করেছি। তবে হালদারপাড়ায় ব্রিজের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
রিমান্ড শেষে সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ ও চাখারী কারাগারে
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত
দূষিত প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জনসচেতনতার বিকল্প নেই : সেমিনারে বক্তারা
বান্দরবানে ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা আটক
রাজশাহীতে ১,৩৩,৬১৩ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা দেবে
বরগুনায় বাস চাপায় একই পরিবারের তিনজন নিহত
স্থানভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন কার্যক্রম এগিয়ে চলছে
হত্যা মামলায় কারাগারে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার
তুর্কি সাংবাদিক উজায় বুলুতের প্রবন্ধ প্রোপাগান্ডামূলক ও ভিত্তিহীন : প্রেস উইং
ঝিনাইদহ চিনিকলের পাঁচ কর্মী সাময়িক বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠিত
১০