লালমনিরহাট, ১৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শুরুতে জেলার বিভিন্ন বাজারে সীমিত পরিসরে উঠতে শুরু করেছে রসালো ও লোভনীয় ফল লিচু। যদিও বর্তমানে সরবরাহ কম, তবে বাজারে লিচুর উপস্থিতি ইতিমধ্যেই ফলপ্রেমীদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে। লিচুর দাম কিছুটা বেশি হলেও ক্রেতাদের মাঝে উত্তেজনার কমতি নেই।
এই সময়ে আম, কাঁঠালসহ অন্যান্য মৌসুমি ফলের সরবরাহও বাড়ছে। কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, অন্যান্য বছরের মতো এবারও মৌসুমি ফলের উৎপাদন ও বিপণন জেলার অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনবে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাজারে ইতোমধ্যে স্থানীয় জাতের লিচু উঠেছে। অচিরেই বোম্বাই, চায়না-৩ ও মাদ্রাজ জাতের লিচুও বাজারে আসবে। এই জাতগুলো চাষে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহও বাড়ছে।
লিচু চাষি ইয়াকুব আলী জানান, তার ১৬টি লিচুগাছে প্রচুর গুটি এসেছে। তিনি বলেন, ‘একেকটি পাঁচ বছরের গাছ থেকে বছরে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ কেজি লিচু পাওয়া যায়। গড়ে দুই থেকে পাঁচ হাজার লিচু হয় প্রতিটি গাছে।’
শহরের বিভিন্ন এলাকায়, বিডিআর গেট, মিশন মোড়, পৌরবাজার, গোশালা বাজার, চাঁদনী বাজার, বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন ও কোর্ট বাজারে—মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন। এসব দোকানে ক্রেতারা আকর্ষণীয় ও মানসম্মত লিচু পাচ্ছেন।
বর্তমানে আকার ও গুণগত মানভেদে প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা কমবে।
লিচু ব্যবসায়ী লোকমান হাকিম বলেন, ‘আমি আট বছর ধরে লিচু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রতি বছর ভালো লাভ হওয়ায় নিজেও এখন লিচুর জমির পরিমাণ বাড়াচ্ছি।’
অপর ব্যবসায়ী মোতালেব আলী জানান, ‘এ বছর ৫০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে চায়না-৩, বোম্বাই ও মাদ্রাজ জাতের লিচুর চাষ করছি। রাজধানী ঢাকা থেকে পাইকাররা ইতোমধ্যে আমার বাগান থেকে লিচু কিনতে শুরু করেছেন।’
জেলার বিভিন্ন স্থানে বসতবাড়ির আঙিনাতেও গড়ে উঠছে ছোট ছোট লিচুর বাগান। কৃষক ইদ্রিস আলীর ভাষায়, ‘চলতি বছরের আবহাওয়া লিচুর জন্য খুবই অনুকূল। আশা করছি ফলনও ভালো হবে।’
লিচু চাষ থেকে প্রতিবছর ভালো আয় করেন চাষি উলিয়াল রহমান। তার মতে, লিচু বিক্রির আয় পারিবারিক অর্থনীতিকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, ‘এ বছর জেলায় ২৪৪ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। শুধু বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেই নয়, বসতবাড়ির আঙিনাতেও লিচু চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘লালমনিরহাটে আম ও লিচুর বাণিজ্যিক চাষ দিন দিন বাড়ছে, যা জেলার কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।’