দিনাজপুর হাবিপ্রবির গবেষণায় রাসায়নিক ও কীটনাশকমুক্ত ধান উৎপাদনে সফলতা

বাসস
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ১২:১৯
ছবি : বাসস

দিনাজপুর, ২০ মে, ২০২৫ (বাসস): হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) গবেষণায় রাসায়নিক ও কীটনাশকমুক্ত ধান উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গেছে।

হাবিপ্রবির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মোঃ খাদেমুল ইসলামের পাঠানো বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। তিনি জানান, ‘হাবিপ্রবির বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল এই সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।’

অধ্যাপক ড. আজিজুল হক জানান, ব্রি-২৮, ব্রি-২৯, ব্রি-৯২, ব্রি-৩৪ ও জিরাশাইলসহ মোট ৬টি জাতের ধানের ওপর গবেষণা চালিয়ে এই সফলতা পেয়েছেন। প্লান্ট এন্ডোফাইটিক ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারে রাসায়নিক ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে এনে দ্বিগুণ ফলনের লক্ষ্যে কাজ করছে তারা। ইতোমধ্যে কৃষিকাজে এই পদ্ধতির মাধ্যমে বেগুন ও টমেটো চাষেও সাফল্য পেয়েছে গবেষক দলটি।

কৃষক ও গবেষক সূত্র জানায়, প্রচলিত ব্রি-২৮ (বোরো) এবং ব্রি-৩৪ (আমন) জাতের ধান ব্লাস্টসহ অন্যান্য রোগের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হওয়ায় এসব ধানে প্রায় চার থেকে ছয়বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এমনকি ধান ঘরে তোলার ১৫ দিন আগেও ব্লাস্ট প্রতিরোধে উচ্চমাত্রায় বিষ প্রয়োগ করতে হয়। এতে ধান উৎপাদন প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ কমে যায় এবং চালের নিউট্রিয়েন্ট ফোর্টিফিকেশন ব্যাহত হয়।

এছাড়াও প্রতি বছরই ইউরিয়া সার ব্যবহারে কৃষকের উৎপাদন খরচও কয়েকগুণ বাড়ছে। যা এই সার উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারের ভর্তুকি ও গ্যাসের ব্যবহার বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যার সমাধানে গবেষকরা ইউরিয়া ও রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে বায়োফার্টিলাইজার ব্যবহার করে ধান চাষ শুরু করেন। গবেষকরা জানান, ধান গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিতকারী এন্ডোফাইটিক ব্যাকটেরিয়া গাছের শিকড়, কাণ্ড, শাখা ও প্রশাখা বৃদ্ধির মাধ্যমে নাইট্রোজেনের বাড়তি জোগান বায়ুমণ্ডল থেকে সংগ্রহ করে। ফলে ইউরিয়া সারের প্রয়োগ ৫০ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।

গবেষকরা বলেন, এই গবেষণায় কিছু এন্ডোফাইটিক ব্যাকটেরিয়ার মিশ্রণ তৈরি করা হয়েছে, যা অক্সিন হরমোন, এসিসি ডি-অ্যামিনেজ এনজাইম তৈরি করে। এছাড়াও তারা বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন স্থিতিশীল করতে (ফিক্সেশন) সক্ষম। উক্ত ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগে ব্রি-২৮ ধানের উৎপাদন গড়ে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে ধানের খড়ে সেলুলোজ বৃদ্ধির ফলে খড়ের শক্তি দ্বিগুণ বেড়েছে এবং আরও সবল ও সুস্থ থাকছে।

গবেষক দল কৃষকের সঙ্গে ফিল্ড ট্রায়ালের মাধ্যমে ৫০ ভাগ ইউরিয়া সার কমিয়ে, ধান রোপণের প্রথম মাসে মাত্র একবার বিষ প্রয়োগ করে ধানের উৎপাদন ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান।

প্রধান গবেষক ড. আজিজুল হক আরো জানান, ‘আমরা মূলত তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করছি। এগুলো হল, রাসায়নিক ও কীটনাশকের ওপর নির্ভরতা কমানো, অধিক ফলন এবং ধানের গুণগত মান বাড়ানো। ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে রাসায়নিক ও কীটনাশকের ব্যবহার কমানো হয়েছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ।

এছাড়াও আমরা ব্রি-৩৪ জাতের ধানের ফলন ২৫ থেকে ৩০ ভাগ পর্যন্ত বাড়াতে পেরেছি। গবেষণালব্ধ ধানের গুণগত মান অনেক ভালো হয়েছে। এতে ধানে চিটার পরিমাণ অনেক কমে আসে এবং ধানের শীষে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান পাওয়া যায়। ধান নির্ধারিত সময়ের আগেই কাটার উপযোগী হয়ে ওঠে, যা হাওর অঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।’

শুধু যে ব্যাকটেরিয়া দিয়ে বায়োফার্টিলাইজার তৈরি হয়েছে তা নয়, গবেষক দলটি ওই ব্যাকটেরিয়া উৎপাদনের নতুন কৌশল ও প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছে। ফলে এখন কৃষিজমিতে বৃহৎ পরিসরে ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগের জটিলতা অনেকটাই কমে গেছে।

ড. আজিজুলের নেতৃত্বে এ গবেষণায় সম্পৃক্ত ছিলেন যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর, শাহরিয়ার, মেহেদী ও রোকন। এতে খুব কম খরচে কৃষক নিজের বাড়িতে সহজভাবে ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে নিজের জমিতে প্রয়োগ করতে পারবেন। ড. আজিজুল হকের এই গবেষণায় আর্থিক সহায়তা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (আইআরটি)।

সম্প্রতি গবেষক দলের সঙ্গে সরাসরি কৃষক পর্যায়ে গবেষণা মাঠ পরিদর্শন করেছেন আইআরটি পরিচালক প্রফেসর ড. এস. এম. হারুন-উর-রশিদ, কৃষি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র হালদার, সহযোগী গবেষক ড. ইয়াসিন প্রধান এবং অধ্যাপক ড. শাহ মইনুর রহমান।

এ সময় আইআরটি পরিচালক প্রফেসর ড. এস. এম. হারুন-উর-রশিদ বলেন, ‘আমরা সরাসরি মাঠ পরিদর্শন করে খুবই সন্তুষ্ট হয়েছি। আশেপাশের জমির সঙ্গে তুলনা করে দেখেছি, যেসব জমিতে কৃষক ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করেছেন, সেগুলোর ফলন অন্য সাধারণ সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত জমির তুলনায় অনেক বেশি। আমরা কৃষকদের কাছ থেকেও খুবই সন্তোষজনক সাড়া পেয়েছি। আগামী বছর আরও কৃষক এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধান চাষে আগ্রহী হবেন।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় সেনাবাহিনীর মেডিকেল ক্যাম্পেইন 
 শেরপুরে টানা বৃষ্টিতে বাড়ছে নদ নদীর পানি, পাহাড়ি ঢলে বন্যার আশঙ্কা
ঈদুল আযহায় টানা ৩ দিন কাজ করবেন সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা
আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে ডিএমপি’র আহ্বান
ব্রিটিশ কাউন্সিল ‘কানেকশনস থ্রু কালচার গ্রান্টস ২০২৫’ অনুদানের আবেদন গ্রহণ শুরু 
প্রেমিকার শিরশ্ছেদকারী প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড বহাল পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতে
জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বৃদ্ধি নগর ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলছে : কেসিসি প্রশাসক
শিবলির সেঞ্চুরিতে প্রথম দিন বাংলাদেশের
নৌবাহিনীর অভিযানে নাবিক ভর্তির প্রতারক চক্রের ৯ সদস্য আটক 
তরুণরাই নতুন বাংলাদেশ গড়ার মূল চালিকাশক্তি : আসিফ মাহমুদ
১০