গাজীপুর, ২২ মে, ২০২৫ (বাসস) : জেলার শ্রীপুরে উপজেলার কৃষকের স্বপ্নের ফল দেশীয় চায়না-৩ জাতের লিচুর ফলনে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এখন লিচুকে ঘিরেই চলছে ব্যস্ততা। গ্রামে গ্রামে যেন লিচুর উৎসব চলছে। বাদুড়ের কবল থেকে লিচু রক্ষায় রাত জেগে পাহারা দেয়া এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাছ থেকে লিচু নামানো ও থোকা বাঁধার পরে তা গাড়িতে করে স্থানীয় বাজারে নিয়ে যাওয়া। লিচুকে ঘিরে এভাবেই ব্যস্ত সময় কাটছে শ্রীপুর উপজেলার অধিকাংশ মানুষের।
উঁচু চালা জমি সমৃদ্ধ শ্রীপুরের রসালো লিচুর কদর রয়েছে দেশজুড়ে। উপজেলাজুড়ে প্রায় ১২ হাজার কৃষক এই লিচুকে ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এই উপজেলায় চায়না-৩ জাতসহ অন্যান্য লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। ফলে এখন লিচুকে ঘিরেই এই এলাকার কৃষান-কৃষানী ব্যস্ত রয়েছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি লিচুর আবাদ হয় শ্রীপুর উপজেলায়। স্বাদের দিক দিয়ে শ্রীপুরের লিচুর ভিন্নতা থাকায় এর চাহিদাও বেশি। এবার শ্রীপুর উপজেলায় ৭৩০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়। চলতি বছর লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন।
এদিকে প্রতিনিয়ত শ্রীপুরের লিচুর চাহিদা বাড়ায় প্রতিবছরই এ উপজেলাজুড়ে সম্প্রসারণ হচ্ছে লিচু চাষ। এ লিচু চাষে কৃষকের রুচির ভিন্নতার সাথে জাতেরও পরিবর্তন হয়। এখানে আবাদ হচ্ছে চায়না-৩, বোম্বাই ও পাতি লিচু।
উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ী গ্রামের লিচু চাষি মানিক মিয়া বলেন, এবার লিচু গাছে মুকুল আসার পর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় লিচুর ফলন খুব ভালো হয়েছে। দামও বেশি পাওয়ার আশা করছি।
মানিক মিয়া দেশীয় চায়না-৩ জাতের লিচু গাছ লাগিয়েছেন। তার চায়না-৩ জাতসহ অন্যান্য ৩০টি লিচু গাছ রয়েছে। তিনি গত বছর লিচু বিক্রি করেছিলেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার। এবার আশা করছেন লিচু বিক্রি করবেন ৩ লাখ ৫০হাজার টাকার।
শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্ব খণ্ড ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জালাল ফরাজি বলেন, ফলনের দিক দিয়ে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাগানে উৎপাদিত লিচু কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য নিয়ে যান স্থানীয় বাজারগুলোতে। তবে অনেকে ভালো দাম পাওয়ার আশায় চলে যান রাজধানীতেও। জ্যৈষ্ঠ মাস পুরোটা সময়ই লিচু পাওয়া যায়। এবার অন্যান্য সময়ের চেয়ে ভালো ফলন ও দাম পাওয়া যাচ্ছে। তিনি ২৫টি গাছের লিচু বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বাসসকে বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরে স্থানীয় কৃষকদের লিচু চাষ সম্প্রসারণে উদ্বুদ্ধ করায় প্রতিনিয়ত বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে লিচু চাষ। এবার উপজেলাজুড়ে তীব্র দাবদাহ থাকার পরেও লিচুর ভালো ফলন হয়েছে।