এস কে রাসেল
কিশোরগঞ্জ, ২৩ মে ২০২৫ (বাসস): জেলায় আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানির জন্য গবাদিপশুর চাহিদা একলাখ ৮০ হাজার ৯১১টি হলেও এজন্য প্রস্তুত রয়েছে মোট ২ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৯টি পশু। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ৩২ হাজার ৪৫৮টি পশু বেশি রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জেলায় এবার ৭০ হাজার ৭১টি ষাঁড়, ৪ হাজার ৬টি বলদ, ১৮ হাজার ৫৫৯টি গাভী, ১ হাজার ২৮৮টি মহিষ, ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৯৬টি ছাগল, ৫ হাজার ৫১৬টি ভেড়া এছাড়াও অন্যান্য ৩৩টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে।
এদিকে, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানি সামনে রেখে কিশোরগঞ্জে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে খামারগুলোয় কর্মচাঞ্চল্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে গরু-সহ গবাদিপশুর পরিচর্যায় নিবিড় ব্যস্ততা। বিশেষত. গরুগুলোর যত্নে রাখা হচ্ছে সর্বোচ্চ সতর্কতা—তীব্র গরম থেকে বাঁচাতে রাখা হচ্ছে ফ্যানের নিচে, আবার নিয়মিত গোসল করিয়ে রাখা হচ্ছে পরিষ্কার ও সতেজ।
জেলার ৫৪২টি খামারে ছোট-বড় সব ধরনের গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশি জাতের গরুর পাশাপাশি রয়েছে উন্নত জাতের ফ্রিজিয়ান, শাহীওয়াল, ব্রাহামা ও ইন্ডিয়ান বোল্ডারের মতো ভারী জাতের গরুও। এছাড়াও খামারগুলোতে রয়েছে মহিষ, বলদ এবং অন্যান্য গবাদি পশু। প্রাকৃতিক উপায়ে—ঘাস, খড়, কুটা, ভূষি ইত্যাদি দেশীয় খাদ্য খাইয়ে লালন-পালন করা হচ্ছে এসব পশু। ফলে এসব পশুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহও চোখে পড়ার মতো।
বাজারে দেশি গরুর চাহিদা বাড়ায় খামারিরাও ক্ষতিকর হরমোন বা কৃত্রিম ইনজেকশনের পরিবর্তে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও নিরাপদ উপায়ে পশু লালনে জোর দিয়েছেন। তারা মনে করছেন, দেশেই পর্যাপ্ত গবাদি পশু প্রস্তুত থাকায় ভারতীয় গরুর ওপর নির্ভর না করেও এবারের কোরবানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
স্থানীয় খামারি মো. সানজিদ জানান, তার খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১৮টি গরু। এসব গরু গত ৮ থেকে ৯ মাস ধরে নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করেছি। এছাড়া মাংস উৎপাদনের জন্য কিছু গরু রয়েছে যেগুলো ৩-৪ মাস ধরে পালন করা হচ্ছে। নিয়মিত দেশীয় খাদ্য যেমন ভূষি, কুড়া, কৈল, সমিল, ঘাস ও খেড় দিয়ে গরুদের খাওয়ানো হয়। তবে বর্তমানে গোখাদ্যের দাম অনেক বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ কিছুটা বাড়ছে।
স্থানীয় খামারি শাকিল মিয়া জানান, এবারে কোরবানিতে দেশীয় গরুর মাধ্যমেই চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে।তার খামার থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা গরু কিনে নিচ্ছেন। এতে স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদা যেমন মিটছে, তেমনি সরবরাহে করে দেশের চাহিদা মিটানো হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র পণ্ডিত জানান, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার ৬৩টি গরুর হাটে ক্রেতারা যেন নিরাপদ ও সুস্থ পশু ক্রয় করতে পারেন, সে লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি হাটে থাকবে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম, যা গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সনদ প্রদানে সহায়তা করবে।
তিনি জানান, জেলার ৬৩টি হাটে মোট ৪০টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে।এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদরে ৪টি, হোসেনপুরে ৩টি, পাকুন্দিয়ায় ২টি, কটিয়াদীতে ৬টি, করিমগঞ্জে ৪টি, তাড়াইলে ৩টি, কুলিয়ারচরে ২টি, ভৈরব উপজেলায় ৩টি, বাজিতপুরে ৩টি, নিকলীতে ২টি, ইটনায় ২টি, মিঠামইনে ৪টি ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় ২টি টিম কাজ করবে। ক্রেতারা যাতে সুস্থ ও মানসম্পন্ন কোরবানির পশু ক্রয় করতে পারেন, সেজন্য প্রতিটি হাটে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।