ধান চাষে কৃষকের পাশে ব্রি : ২৪ ঘণ্টা কলসেন্টার সেবা চালু 

বাসস
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ২০:৪৭
ফাইল ছবি

গাজীপুর, ২৫ জুন, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি)’র উদ্যোগে ধান উৎপাদনে সার ব্যবস্থাপনা, আগাছা দমন, বালাই ব্যবস্থাপনা কিংবা সেচ সংক্রান্ত যাবতীয় পরামর্শ দিতে ২৪ ঘণ্টা কলসেন্টার সেবা চালু করা হয়েছে।

দেশের যেকোন প্রান্তের কৃষকরা ধান চাষের নানা বিষয়ে সপ্তাহের যে কোন দিন ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইনে ফোন করে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারবেন।

আজ বুধবার গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কার্যালয়ে 'আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ প্রচারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা' শীর্ষক কর্মশালায় এ কথা জানানো হয়েছে। 

ব্রি’র পরিচালক গবেষণা ও ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের চিফ ড. মো. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান। 

কর্মশালায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের কো-অর্ডিনেটর (সমন্বয়ক) ড. এবিএম জাহিদ হোসেন। 

ব্রির ঊধ্বর্তন যোগাযোগ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমিন এর উপস্থাপনায় কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের পিএসও এবং এগ্রোমেট ল্যাবের সদস্য নিয়াজ মো. ফারহাত রহমান।

কর্মশালায়  ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, আবহাওয়ার বৈরি পরিস্থিতির কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষক ভাইয়েরা ধান উৎপাদনে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এসব সমস্যা সমাধানে করণীয় সম্পর্কে জানাতে ধানের হেল্পলাইন নামে ২৪ ঘণ্টার কল সেন্টার চালু করা হলো। 

তিনি বলেন, এই (০৯৬৪৪৩০০৩০০) নম্বরে কল করে কৃষক তাদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান পাবেন এবং এই সেবা প্রদান করবেন সরাসরি ব্রি’র এগ্রোমেট ল্যাবের বিজ্ঞানীরা। ফলে এসব তথ্য উপাত্ত ও পরামর্শ পেতে কৃষকদের আর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। 

মহাপরিচালক বলেন, ব্রি ১৯৭০ থেকে এখন পর্যন্ত ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে যার মধ্যে ৮টি হাইব্রিড। ব্রি উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকের দৌড়গোড়ায় পৌঁছানোর ফলেই বর্তমানে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়। এসব প্রযুক্তির প্রচারে দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। 

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বিআর-৩ বা বিপ্লব ধানের জাতের মাধ্যমে ধান উৎপাদনে সত্যি সত্যি বিপ্লব সাধিত হয়। ১৯৯৪ সালে ব্রি ২৮ ও ২৯ জাতের ধান উদ্ভাবন করে, যা ব্যাপক ফলনের কারণে প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

তিনি বলেন, ব্রি’র ৩৭টি জাত রয়েছে যা বন্যা, খরা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন বৈরি পরিবেশেও উচ্চ ফলনশীল। ব্রি উদ্ভাবিত সবশেষ ৬টি জাতের মধ্যে ৫টিই বৈরি পরিবেশ সহনশীল।

তিনি বলেন, আগে একটি জাত উদ্ভাবনে ১৫-২০ বছর সময় লাগতো তবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই সময় কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এটি বর্তমানে ১০ বছরে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে ধানের ফলন বাড়াতে হলে সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কাজ করছে ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের সদস্যরা। 

ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, ধান চাষ শুধু কৃষকের জীবন-জীবিকা নয়, এটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি। কিন্তু কৃষকের সামনে চাষাবাদের প্রতিটি ধাপে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আসে যেমন-আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন, রোগবালাই, পোকামাকড়ের আক্রমণ কিংবা সারের সঠিক প্রয়োগ। এসবের সমাধানে সময়োপযোগী পরামর্শ জরুরি। ব্রি’র ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন অথবা কলসেন্টার চালুর মাধ্যমে আমরা কৃষকের দোরগোড়ায় সেই পরামর্শ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।

ব্রি’র পরিচালক গবেষণা ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ছিল ২০ শতাংশ, এখন তা ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ সময়ে লোকসংখ্যা আড়াই গুণ বেড়েছে কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণ। 

তিনি বলেন, দেশে এখনো ২৫ শতাংশ এলাকা পতিত পড়ে আছে, এসব জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আর দেশের বর্তমান ধান উৎপাদনের ধারা বজায় রাখতে হলে কোন ক্রমেই ধানি জমির পরিমাণ ৬ দশমিক ২ মিলিয়ন হেক্টরের নিচে আনা যাবে না। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৭১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রথম ফেজে ব্রি মাত্র ৩৭টি জাত উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু ১৯৯১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে দ্বিতীয় ফেজে ব্রি ৮৪টি ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। বর্তমানে আমরা জিংক, আয়রন ও পুষ্টিসমৃদ্ধ জাত উদ্ভাবনে মনোযোগ দিচ্ছি। তা ছাড়া আমাদের কাছে ৯ হাজার ৬০০ দেশি ধানের জাত সংরক্ষিত আছে যা গবেষণার রশদ হিসেবে আমরা কাজে লাগাচ্ছি।  

তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞান ভিত্তিক কৃষি ও প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদের যুগে প্রবেশ করতে হলে কৃষকদের হাতের নাগালে তথ্য ও সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের এগ্রোমেট ল্যাব অত্যন্ত কার্যকর একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। শুধু হেল্পলাইন নয়, আমরা ভবিষ্যতে অ্যাপ ও এসএমএসের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে আবহাওয়া ভিত্তিক চাষাবাদ তথ্য পৌঁছে দিতে চাই। এ লক্ষ্যে ব্রি গত ৫ বছরে ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।

এ সময় তিনি গণমাধ্যম, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয় কৃষকের সব চাহিদা পূরণ করা। তাই মিডিয়ার মাধ্যমে এই সেবার তথ্য ছড়িয়ে দিলে দেশব্যাপী কৃষকেরা উপকৃত হবেন। সবাই মিলে কাজ করলে প্রযুক্তি নির্ভর টেকসই কৃষি বাস্তবায়ন সম্ভব।

ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের সমন্বয়ক ড. এবিএম জাহিদ হোসেন তার মূল প্রবন্ধে বলেন, ১৯৯১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশে শীতের তীব্রতা কমেছে। 

বর্ষাকাল সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০০০-২০১০ সাল পর্যন্ত বর্ষা ১০-১৫ দিন দেরিতে শুরু হচ্ছে। এটির সাধারণ নিয়ম জুনের প্রথম সপ্তাহে হওয়ার কথা। 

নিয়াজ মো. ফারহাত রহমান বলেন, প্রাক শিল্প (১৮৫০-১৯০০) যুগের চেয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৪৭ ডিগ্রি। বাংলাদেশে গত ৫৪ বছরে কৃষকের কোন ডিজিটাল তথ্য-ভাণ্ডার তৈরি হয়নি যার মাধ্যমে যে কোন দ্রুত সময়ে কৃষকের কাছে পৌঁছানো যায়। 

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ডেল্টাপ্লান-২১০০ মোতাবেক স্মার্ট এগ্রো-এডভাইজরি ডেসিমিনেশন সিস্টেমের আওতায় দেশকে ৬ ভাগ করে ২৯ হাজার ৩৫৪ জন কৃষক, গণমাধ্যম এবং সম্প্রসারণ কর্মীদের তথ্য-ভাণ্ডার ইতিমধ্যে তৈরি করেছে ব্রি। এটিকে আমরা দেড় লাখে পরিণত করবো যাতে কৃষকদের কাছে সরাসরি তথ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
১৬ জুলাই 'শহীদ আবু সাঈদ দিবস' হিসেবে পালন ও দিবসটিকে 'খ' শ্রেণিভুক্ত হিসেবে ঘোষণা
৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন ও দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত হিসেবে ঘোষণা
যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৩ জন আটক 
পাঁচ আগস্টের পরে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলো প্রকৃতপক্ষে আগে থেকেই বন্ধ ছিল: শ্রম উপদেষ্টা
নাইক্ষ্যংছড়িতে ১ লাখ ইয়াবা উদ্ধার
৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে পরিপত্র জারি
বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের পক্ষে এগিয়ে আসার আহ্বান জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেলের
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য মোকাবেলায় আরও কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে মেটাকে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্র গড়তে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে : প্রধান উপদেষ্টা
আইসিসি’র গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে ব্রিকস সম্মেলনে যাচ্ছেন না পুতিন
১০