চট্টগ্রাম, ৩০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : করোনার ভুল রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে ঢাকার প্রাভা হেলথের দুই চিকিৎসকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আব্দুস সাত্তার।
চার বছর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিরূপণের প্রতিবেদনে জালিয়াতির অভিযোগে আনা হয়েছে অভিযোগে। মামলায় ঢাকার বনানীর প্রাভা হেলথের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সিমিন এম আক্তার, পরিচালক ডা. জাহিদ হোসেন এবং প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা রেজোয়ান আল রিমনকে অভিযুক্ত করা হয়।
মামলার শুনানি শেষে সোমবার (৩০ জুন) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম ইব্রাহিম খলিল অভিযুক্তদের আদালতে হাজিরের জন্য সমন জারির আদেশ দিয়েছেন।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালের ৬ মার্চ এডভোকেট আব্দুস সাত্তার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ৯ মার্চ তিনি ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে এনজিওগ্রাম করার জন্য যান। সে সময় দেশজুড়ে করোনা মহামারি চলছিল। এনজিওগ্রামের আগে করানোর পরীক্ষার জন্য তিনি বনানীর প্রাভা হেলথ হাসপাতালে যান।
২০ মার্চ তাদের নির্ধারিত ৩ হাজার ৪৭৫ টাকা জমা দিয়ে তিনি প্রাভা হেলথের মিরপুর কালেকশন সেন্টারে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। পরদিন তাকে দেয়া প্রতিবেদনে তিনি করোনায় আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটিতে ডা. জাহিদ হোসাইন ও রেজোয়ান আল রিমনের নাম ও সই ছিল।
মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ওই প্রতিবেদন দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত আব্দুস সাত্তার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু পরবর্তীতে নিজের মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ না দেখে সন্দেহ হলে তিনি ভিন্ন একটি প্রতিষ্ঠানে আবার নমুনা দেন। সেখানে তিনি করোনায় আক্রান্ত নন বলে প্রতিবেদন দেয়া হয়। এরপর তিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন এবং সুস্থ হন।
আইনজীবী আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘হঠাৎ কোভিড আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট পেয়ে আমি মেন্টালি ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। অনেকটা মৃতপ্রায় অবস্থা থেকে আমি উঠে আসি। সুস্থ হওয়ার পর আমি প্রাভা হেলথ হাসপাতালকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই। তারা নোটিশের উত্তর দেননি। তবে মোবাইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে দোষ স্বীকার করেন।’
এ অবস্থায় আব্দুস সাত্তার কোভিড টেস্টের মনগড়া ও ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে মৃত্যুর মুখে নিয়ে যাওয়া এবং প্রাণহানির অপচেষ্টার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪২০, ৩০৪ (এ), ৫১১ ও ১০৯ ধারায় অভিযোগ এনে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমি তখনই মামলা করতে পারতাম। কিন্তু আসামিরা তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় থাকায় মামলা করা সম্ভব হয়নি। দেরিতে হলেও আমি ন্যায়বিচারের আশায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত সমন ইস্যু করেছেন। আশা করি, আমি ন্যায়বিচার পাব।’