ঢাকায় সীসা নির্গমণকারী শিল্প-স্থাপনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি

বাসস
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৪০
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৬ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : রাজধানীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) আয়োজিত বুধবার এক আলোচনা সভায় শিশুদের সীসা দূষণ থেকে রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 

‘বাংলাদেশে সীসা দূষণ প্রতিরোধ: অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় জানানো হয়, সীসা একটি মারাত্মক বিষাক্ত ভারী ধাতু। যা নীরবে লাখ লাখ মানুষের বিশেষত শিশু ও গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) শিশুদের রক্তে প্রতি লিটারে ৩৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সীসার উপস্থিতিকে উদ্বেগজনক মনে করে। ইউনিসেফের তথ্যমতে, বিশ্বে সীসা দূষণে আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে; এখানে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশুর রক্তে উচ্চ মাত্রার সীসা বিদ্যমান।

আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র ডিরেক্টর ড. সারাহ স্যালওয়ে বলেন, ‘সীসা দূষণ বাংলাদেশের একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। যা প্রায়ই আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। বিশেষ করে দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্প-কারখানার আশপাশের শিশুরা সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী।’

২০০৯ থেকে ২০১২ সালে ঢাকার বস্তি এলাকায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ২ বছরের কম বয়সী ৮৭ শতাংশ শিশুর রক্তে সীসার মাত্রা প্রতি লিটারে ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আইসিডিডিআর,বির সাবেক পরিচালক প্রফেসর স্টিভ লুবি বলেন, সীসা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে এবং তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা হ্রাস করে।

আইসিডিডিআর,বির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ডা. মো. মাহবুবুর রহমান জানান, সীসা দূষণের প্রধান উৎস হলো সীসা ও ব্যাটারি-সম্পর্কিত শিল্প, সীসাযুক্ত রঙ, প্রসাধনী এবং রান্নার পাত্র। তিনি জানান, রান্নায় ব্যবহৃত হলুদে সীসাযুক্ত ভেজাল প্রতিরোধে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে; ২০১৯ সালে যেখানে ৪৭ শতাংশ নমুনায় সীসা পাওয়া যেত। ২০২১ সালে তা প্রায় শূন্যে নেমে আসে।

আইসিডিডিআর,বির অ্যাসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট ডা. জেসমিন সুলতানা ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, ঢাকার ২ থেকে ৪ বছর বয়সী ৫০০ শিশুর প্রত্যেকের রক্তেই সীসা পাওয়া গেছে; এর মধ্যে ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে উদ্বেগজনক মাত্রার বেশি সীসা ছিল। সীসা-নির্ভর শিল্প এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের রক্তে সীসার মাত্রা ৫ কিলোমিটারের বেশি দূরে থাকা শিশুদের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।

সভায় বক্তারা বলেন, লেড-এসিড ব্যাটারি উৎপাদন বা রিসাইক্লিং কারখানা এবং সীসা গলানো বা পোড়ানো হয় এমন স্থাপনা সরিয়ে নিলে শিশুদের সীসা দূষণ থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘সীসার বিষক্রিয়া নীরবে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেড়ে নিচ্ছে। তাই দৃঢ় সংকল্প নিয়ে সীসা নিঃসরণকারী উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে। যাতে প্রতিটি শিশু সুস্থ ও বুদ্ধিদীপ্তভাবে বেড়ে উঠতে পারে।’

আলোচনা সভায় আইসিডিডিআর,বি ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সভা শেষে বাংলাদেশের শিশুদের জন্য একটি সুস্থ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ আর নেই
জিয়াউর রহমানের সমাধি জিয়ারত করলেন বেগম খালেদা জিয়া
‘নতুন কুঁড়ি’ ঢাকা পর্বে রাজশাহীর ১২০ প্রতিযোগী মনোনীত
শ্রমিকদের বেতন-মজুরি প্রদানের দায়িত্ব মালিকদের: শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা
আগামী নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটে গোপনীয়তা অটুট থাকবে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় আট বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত
গুমের সত্য উন্মোচনে প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করল গুম কমিশন
সরকার দেশের কর ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ ও ব্যবসা বান্ধব করতে কাজ করছে: এনবিআর চেয়ারম্যান
ফিলিস্তিনিদের অদম্য স্পৃহা একদিন তাঁদের মুক্তি এনে দেবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
সুরের মূর্ছনায় লালবাগ কেল্লায় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'র ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন
১০