কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী মাদারীপুরের রাশিদা

বাসস
প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৩৭ আপডেট: : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৪৪
পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী জেলার রাশিদা বেগম। ছবি : বাসস

।। বেলাল রিজভী।।

মাদারীপুর, ১২ আগস্ট, ২০২৫(বাসস) : পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী জেলার রাশিদা বেগম। সারের সঙ্গে উৎপাদিত কেঁচোও বিক্রি করছেন তিনি। তাকে দেখে অনেক নারীরা উৎসাহ পাচ্ছেন। রাসায়নিক সারের চেয়ে এই জৈব সারের বেশি উপকার হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার সদর উপজেলার পাচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর এলাকার আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের স্ত্রী রাশিদা বেগম (৪৫)। তার চার সন্তান। দুই মেয়ে শিরিনা আক্তার শিখা ও শিউলি আক্তারকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে হারুণ-অর-রশিদ মাদারীপুর সরকারী কলেজে অর্নাস তৃতীয় বর্ষে পড়েন। ছোট ছেলে রায়হান হাওলাদার খোয়াজপুরের সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। স্বামী সৌদি প্রবাসী ছিলেন। এখন দেশে এসে নিজের জমিতে কৃষি কাজ করে সংসার চালান। 

দিন দিন ছেলেদের পড়াশুনার খরচ বেড়ে যাওয়া ও পাশাপাশি সংসারের জন্য একটু আয় করার চিন্তা থেকেই রাশিদা বেগম প্রথমে সবজির বাগান শুরু করেন। লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ডাটা, শশা, ঢেড়শসহ নানা ধরণের সবজি বাড়ির পাশেই জমিতে চাষ করা শুরু করেন। এসময় তার সারের প্রয়োজন হলে নিজ উদ্যোগেই শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদন। প্রথমে জেলা কৃষি অফিস থেকে ট্রেনিং নেন। এরপর স্বামীর সহযোগিতায় প্রায় তিন বছর আগে বাড়ির পাশেই একটি টিনের চালা দিয়ে ঘর নির্মাণ করেন। সেখানে ৬টি সিমেন্টের রিং বসিয়ে কেঁচো সার উৎপাদনের ব্যবস্থা করেন। তবে বর্তমানে সার উৎপাদন ভালো হওয়ায় আরো তিনটি বাড়িয়ে ৯টি রিং বসানো হয়েছে। নিজের পালিত ২টি গাভী আছে। সেই গাভীর গোবর থেকেই এই কেঁচো সার উৎপাদন করেন তিনি। 

প্রথমে গোবর মাটির নিচে গর্ত করে রাখা হয়। এরপর রিং এর মধ্যে রাখেন। এভাবেই ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তৈরি হয় কেঁচো সার। একটি রিংয়ে এক মণ করে সার উৎপাদন হয়। এক মণ সার ৬০০ টাকা ও এক কেজি কেঁচো ১৫০০ টাকা করে বিক্রি করেন। জেলা কৃষি অফিসের জৈব সার প্রয়োজন হলে রাশিদা বেগমের কাছ থেকে কিনে নেন। এছাড়াও তার তৈরি সার এলাকার মানুষজনও কিনে নেন। দিনে দিনে এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রাশিদা এখন স্বপ্ন দেখছেন সার তৈরির ঘরটা আরো অনেক বড় করে রিং বাড়িয়ে উৎপাদন কয়েকগুন বাড়াবেন।তার এই কাজে তার স্বামীও তাকে সহযোগিতা করেন। প্রতিমাসে তিনি সার, কেঁচো, গরুর দুধ ও সবজি বিক্রি করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করেন। সেই টাকা দিয়ে তার ছেলেদের পড়াশুনায় তিনি সহযোগিতা করেন।

নারী উদ্যোক্তা রাশিদা বেগম বলেন, সার বিক্রি করে আয় হবে তা কোনদিন ভাবিনি। কৃষি অফিস থেকে ট্রেনিং নিয়ে আমি এই কাজ শুরু করেছি। তারা আমাকে যথেষ্ট পরিমাণ সহযোগিতা করেছেন। এখনও করছেন। কেঁচো সারটি প্রকৃতিভাবে তৈরি হয় বলে এর গুনগত মান অনেক ভালো। আমার উৎপাদিত সার মাদারীপর কৃষি অফিস কিনে নেন। তাছাড়া আমার এলাকার মানুষও এই সার আমার কাছ থেকে কিনে নেন।

 এই সারের চাহিদা অনেক বেশি। তাই আগামীতে এই সারের উৎপাদন আমি বাড়াবো। যাতে করে সকলের চাহিদা মেটাতে পারি। পাশাপাশি যেন বড় ধরণের আয় করতে পারি।

রাশিদার স্বামী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার স্ত্রী প্রায় তিন বছর ধরে কেঁচো সার উৎপাদন করছে। আমি তাকে সহযোগিতা করি। জৈব সার ফসলের জন্য  উপকারী। তাই বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেশি।

রাশিদার প্রতিবেশি তাহমিনা আক্তার বলেন, রাশিদা আপাকে কেঁচো সার বানানো দেখে আমারাও উৎসাহ পাচ্ছি। তাই ভাবছি ঘরে বসে না থেকে নিজেই এই সার উৎপাদন করার চেষ্টা করবো। এতে করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়া যাবে আর আয়ও করা যাবে।

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এ্যাড. মাসুদ পারভেজ বলেন, সামান্য পুঁজি দিয়ে এই সার উৎপাদন করা সম্ভব। দেশের কৃষিখাতের জন্য এই সার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে বিষমুক্ত সবজি ফলানো সম্ভব। তাই কৃষিতে বিষমুক্ত উৎপাদনের জন্য এই সারের ব্যাপক প্রসার প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাবরিনা আক্তার বলেন, রাশিদা একজন নারী উদ্যোক্তা। তিন বছর ধরে কেঁচো সার উৎপাদন করেছেন। তিনি আস্তে আস্তে এই উৎপাদন বাড়াচ্ছেন। তার নিজের সবজি বাগান আছে। তাই তিনি নিজেই সার উৎপাদন করে নিজের চাহিদা পূরণ করে আবার তা বিক্রি করছেন। এতে করে তিনি আয়ও করে নিজে স্বাবলম্বী হতে পেরেছেন। তাকে দেখে আরো নারীরা এই কাজে উৎসাহ পাচ্ছেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সকল ধরণের সহযোগিতা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আগামী নির্বাচন হবে গণতন্ত্রের নতুন ভিত্তি : প্যারিসের মেয়রকে অধ্যাপক ইউনূস
অস্ট্রেলিয়ায় অনূর্ধ্ব ১৬ বয়সীদের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারে সামাজিক মাধ্যম 
লালমনিরহাটে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি শেষ
জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনায় চীনের গুরুত্ব 
গাজায় ইসরাইলের হামলায় নিহত ১৫
সামাজিক উদ্ভাবন বিষয়ক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা
জাতিসংঘে সিনিয়র বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
আহত ফায়ার ফাইটারদের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক
প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ভুয়া প্রতিবাদ ভিডিও শনাক্ত ফ্যাক্টওয়াচের
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে বিশ্বকে অবহিত করবেন প্রধান উপদেষ্টা : প্রেস সচিব
১০