স্থানীয় যুবকদের উদ্যোগে লক্ষ্মীপুরে ভুলুয়া নদীতে নতুন প্রাণের সঞ্চার 

বাসস
প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৫২
ছবি: বাসস

আব্বাছ হোসেন

লক্ষ্মীপুর, ১২ আগস্ট, ২০২৫(বাসস) : স্থানীয় যুবক ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে জেলার রামগতি উপজেলার অংশে ভুলুয়া নদীর খনন কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ২০ বছর ধরে মৃতপ্রায় এ নদীর প্রাণ ফিরে পাবার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। 

ভুলুয়া নদী লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত। এটি মূলত লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলার পূর্বাঞ্চল দিয়ে এবং নোয়াখালীর কিছু অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দুই উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার নদী নাব্যতা হারানোয় নানা সংকটে ভুগছেন এলাকার প্রায় সাত লাখ মানুষ। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ভুলুয়া নদীর কোথাও পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। কোথাও আবার অবৈধ বাঁধ দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ। এতে জনজীবনে তৈরি হয়েছে নানা সংকট। বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ফসলের ক্ষতিসহ নানা বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। 

এমন অবস্থায়  মৃতপ্রায় নদীটিকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় যুবক ও বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর অর্থায়নে গত ২৪ জুলাই ভুলুয়া নদীর বাঁধ অপসারণ ও খনন শুরু হয়। নদীর খননে বাসিন্দাদের কেউ দিচ্ছেন ১০০, কেউ ৫০০, কেউ আবার ১০০০ টাকা। এইভাবে মানুষের কাছ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। 

এ টাকা দিয়েই নদীটির খনন কাজ করা হচ্ছে। গত ২০  দিনে নদীর প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা খনন করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৪ কিলোমিটার নদী এলাকা খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের আজাদ নগর স্টিল ব্রিজ এলাকা থেকে এক্সকেভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে নদী খননের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে সেখান থেকে কোডেক বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার নদী খননের কাজ চলছে। নদীর এ অংশে সবচেয়ে বেশি পলি জমে আছে। এ পর্যন্ত নদী খনন হয়েছে দুই কিলোমিটারের মতো। পর্যায়ক্রমে ৭৬ কিলোমিটার ভুলুয়া নদীর পুরোটা খননের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

খনন কাজের অন্যতম উদ্যোক্তা কমলনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ বাসসকে বলেন, ‘শুধু অভিযোগ করে বসে না থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিজেরাই কাজ শুরু করব। এলাকার প্রতিটি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভুলুয়া নদী খনন কাজে পাশে দাঁড়িয়েছেন। কেউ ১০০, কেউ ৫০০, কেউ ১০০০ টাকা করে নদী খননের জন্য দিচ্ছেন। কেউ আবার নদী খননের কাজে শ্রম দিচ্ছেন। 

তিনি বলেন, ‘ভুলুয়াকে আমরা আবার জীবিত দেখতে চাই। প্রশাসনের সহায়তা পেলে আরও ভালোভাবে কাজটি এগিয়ে নিতে পারব। আমরা চাই, সরকার আমাদের এই উদ্যোগে সহযোগিতা করুক। অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে দিয়ে নদীর গতি ফিরিয়ে দিক।’

আজাদ নগরের বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম নদী খননের কাজে ১০০ টাকা দিয়েছেন। তিনি বাসসকে বলেন, নদী বাঁচলে এলাকার উপকার হবে। আমরাও উপকৃত হব। বৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাড়িঘর পানির নিচে রয়েছে। পানি না নামার কারণে চরম দুর্ভোগে রয়েছি। বর্তমানে নদীটি খনন করায় পানি নামতে শুরু করেছে। এতে জলাবদ্ধতা যেমন কমবে, চাষাবাদ করা যাবে, মাছও মিলবে। তাই যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা করেছি।

চর মার্টিন এলাকার বাসিন্দা মুফতি মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘নদীটি খননের উদ্যোগ না নিয়ে বসে থাকলে হয়ত একসময় এটিকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না। তাই আমরা নিজেরাই খনন শুরু করেছি। এলাকার সবাই মিলে যতটুকু পারি করব।  সরকারের দিকে না তাকিয়ে গত ২০ দিন ধরে মানুষের দেয়া অর্থ দিয়ে দুইটি এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে খনন শুরু করেছি। ফলে পানির স্রোত অনেক বাড়ছে। এই অঞ্চল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড আশ্বাস দিয়েছেন, তারাও পাশে থাকবে এবং সার্বিক সহযোগিতা করবে।’ 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভুলুয়া নদীর প্রস্থ স্থানভেদে ১০০ থেকে ১৭৬ মিটার। এটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলা এবং নোয়াখালীর সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলা অংশে নদী রয়েছে ৪০ কিলোমিটার। নদীটি লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার ২০টি ইউনিয়নকে সংযুক্ত করেছে। আর এসব এলাকা থেকে একমাত্র এই নদীটি দিয়ে পানি চলে যায় মেঘনায়। নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়া ও বাঁধ দেওয়ার কারণে এলাকায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। 

এতে গত বছরের আগস্ট মাসে লক্ষ্মীপুরে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তা, ফসলের মাঠ ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লক্ষ্মীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বাসসকে বলেন, ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভুলুয়া নদীর প্রস্থ স্থানভেদে ১০০ থেকে ১৭৬ মিটার। এটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলা এবং নোয়াখালীর সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। নদী অনেক বেশি পলি বহন করে। সে পলিতে ভুলুয়া ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া অসংখ্য স্থানে দখল ও স্থাপনা নির্মাণ তো আছেই। যার কারণে আমরা গত বছর লক্ষ্মীপুরে জলাবদ্ধতা দেখেছি। ভুলুয়া নদীর দখল ও জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা করা হয়েছে। সেটি অনুমোদিত হলে কার্যক্রম শুরু করব।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘নদী খননে স্থানীয় মানুষের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা চেষ্টা করব প্রশাসনিক সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্যোগটিকে আরও কার্যকর ও টেকসই করতে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আহমেদীয়া সমবায় সমিতির ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক করেছে সিআইডি
সাতক্ষীরায় আলোচনা সভা ও ৭০ জন যুবকের মাঝে যুব ঋণের চেক প্রদান
সিরাজের ফিটনেস ও বোলিংয়ের প্রশংসায় ডেভিড গাওয়ার
ঢাবি আন্তঃবিভাগ বাস্কেটবল প্রতিযোগিতায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ চ্যাম্পিয়ন
ঠাকুরগাঁওয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত
লক্ষ্মীপুরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালন ও আলোচনা সভা 
বার্ডে দুগ্ধজাত পণ্য বিপণন বিষয়ক প্রশিক্ষণের সমাপনী
খুলনায় জাতীয় যুব দিবসে ১১১ জনকে ঋণের চেক বিতরণ
মুন্সীগঞ্জে আইসক্রিম কারখানাকে জরিমানা
ভোলায় আন্তর্জাতিক ও জাতীয় যুব দিবস উদযাপিত
১০