।। আল-আমিন শাহরিয়ার।।
ভোলা, ১২ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : দরিদ্র পিতার সংসারে নুন আনতে পান্থা ফুরাতো। যেখানে দুমুঠো ভাতের যোগান হতোনা, সেখানে পড়ালেখা করা কিম্বা ভালো জামাকাপড় পড়া ছিল দু-স্বপ্ন। সংসারের অভাব অনটন আর মৌলিক চাহিদার লেশমাত্র যেখানে ছিলনা, সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যে কত কষ্টসাধ্য তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। হতদরিদ্র পরিবারের এমনি এক সাহসী স্বপ্নবাজ ত্রিশোর্ধ্ব যুবকের নাম সজীব। দারিদ্রতার কষাঘাতে পিষ্ট হলেও জীবন সংগ্রামের হাল ছাড়েনি কখনো। সফলতা আর বিজয়ের নিশান উড়ানোর লক্ষ্য তাকে দমাতে পারেনি। সাফল্য ধরা দিতে হয়েছে তাকে। অভাব, ক্ষুধা আর দারিদ্রতার অন্ধকার ভেদ করে পরিবারে স্বচ্ছলতার আলো ছড়াতে জীবন সংগ্রামে নেমে পড়েন যুবক সজীব।
সীমাহীন কষ্টের পরিবারে বেড়ে উঠা এ ছেলেটির অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। সংসারের হাল ধরতে স্কুলের বই ফেলে সজিব নিজ গ্রাম ছেড়ে চলে যান সূদুর কুমিল্লায়। সেখানে গিয়ে একটি মিষ্টির দোকানে কারিগর হিসেবে যোগ দেন। কুমিল্লায় টানা সাত বছরের অভিজ্ঞতায় সজিব হয়ে ওঠেন হরেক রকম মিষ্টি তৈরির দক্ষ কারিগর। এরপর নিজ জেলায় ফিরে এসে বিভিন্ন মিষ্টির কারখানায় কারিগর হিসেবে কাজ করতে থাকেন। কিন্তু মনের কোনে সব সময় স্বপ্ন ছিল নিজের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। তবে তা মূল ধনের অভাবে অধরাই থেকে গেছে। তবুও হাল ছাড়েননি।
সজীব বাসস'কে জানান, ২০২৩ইং সালে ভোলার চরফ্যাশনের একটি কারখানায় কাজ করতে গিয়ে পরিচয় হয়, পরিবার সামাজিক সংগঠন উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহযোগী সংগঠন "নিরাপদ মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার উন্নয়ন" প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ পেয়ে নতুন করে আশার আলো দেখেন সজিব।
সেখান থেকে ঋণ নিয়ে নিজ এলাকা লালমোহন উপজেলার মঙ্গলসিকদার নামক বাজারে শুরু করেন “মিষ্টি মুখ এন্ড ফাস্টফুড”নামক নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শুরুটা ধীর হলেও পণ্যের গুণগত সঠিক মানের কারণে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে সজীবের দোকানের মিষ্টির। এরপর লালমোহন উপজেলা শহর ও শহরতলীর কুঞ্জেরহাট নামক বাজারে আরো দু'টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার মিষ্টির সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো জেলায়। এখন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শুধু মিষ্টি নয়, আছে রসমলাই, দই, ছানা, ঘিসহ নানা ধরনের সুস্বাদু মিষ্টি। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি গরুর দুধের মিষ্টি তৈরি হয় তার কারখানায়। ঈদ পার্বণ এলে তা বেড়ে দাঁড়য় কয়েক গুন।
তার কারখানায় কারিগরের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে ঘি, মাখন, রসমালাই, কাঁচাগোল্লা, সন্দেশসহ বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক সব খাবার। এসব খাবারের যেমনি স্বাদ, তেমনি ব্যতিক্রম এর নানা আকার। কারিগর থেকে পথচলা শুরু হলেও পরিবারের চরম দারিদ্রতা থেকে উঠে এসে গড়েছেন নিজের ব্যবসা। ভোলার বিভিন্ন এলাকায় একে একে গড়েছেন তিন তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। হাতেগড়া মিষ্টি ও দুগ্ধজাতসহ নানা খাদ্য উপকরণের ব্যবসার মাধ্যমে নিজে যেমন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তেমনি অন্যদের জন্য সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থানের সুযোগ। এখন তার প্রতিষ্ঠানে মাসে বেচাবিক্রি হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
উদ্যোক্তা সজীব জানান, সফলতার পাশাপাশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি। তার মিষ্টির দোকান ও কারখানায় এখন ২৫ জন কারিগর সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। তাদের সংসারেও ফিরেছে স্বচ্ছলতা।
বর্তমানে দূর-দূরান্ত থেকে মিষ্টি নিতে সজীবের দোকানে ছুটে আসেন ক্রেতারা। দোকানে বসে নিজেরাও খান এবং পরিবার-পরিজনের জন্য নিয়েও যান অনেকে।
অপরদিকে সজীবের জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর এই গল্প অন্যান্যদের জন্য একটি আদর্শ দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন, ভোলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খাঁন। তিনি বাসস'কে বলেন,সজীবের মতো উদ্যমী উদ্যোক্তাদের পাশে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা সবসময়ই থাকবে।