লালমনিরহাট, ১৩ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে লালমনিরহাটের আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট সদর ও পাটগ্রাম উপজেলার বহু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে তিস্তার বাম তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল তৃতীয় দফায় পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে শতাধিক গ্রামের রাস্তা-ঘাট, বসতভিটা, ফসলি জমি, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, আজ বুধবার দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার চেয়ে ৪ সেন্টিমিটার বেশি (বর্তমান পানি সমতল ৫২.১৯ মিটার, বিপদসীমা ৫২.১৫ মিটার) প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগের দিন মঙ্গলবার দুপুরে পানি প্রবাহ ছিল বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপরে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলের কারণে পানি বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, পাটগ্রামের দহগ্রাম, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া ও পলাশীসহ সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর এবং গোকুন্ডা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা।
উজানের ঢলের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। মহিষখোচা ইউনিয়নের আব্দুল হালিম বলেন, ‘গতকাল ও পরশু থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এরপর পানি বাড়তে থাকে। গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এখনো কোনো জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মকর্তা খোঁজ নেননি।’
গোবর্ধনের মজলুম হোসেন জানান, ‘সারারাত পানি ঢুকেছে ধীরে ধীরে। রান্নাবান্না বন্ধ। বাচ্চারা স্কুলেও যেতে পারছে না। কেউ দেখতে আসছে না।’
ডাউয়াবাড়ীর কৃষক হামিদুর রহমান বলেন, ‘নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। ফসলি জমি ও পশুপাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছি। প্রশাসনের দ্রুত সহায়তা প্রয়োজন।’
গোবর্ধনের আরেক বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর পানি বেড়ে চরাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। আকাশের পানি আর নদীর পানি এক হয়ে গেছে। মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।’
ডালিয়া ডিভিশনের উপসহকারী প্রকৌশলী তহিদুল ইসলাম জানান, ‘সন্ধ্যার মধ্যে পানি আরও বাড়তে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।’