ঢাকা, ১৩ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও বাম রাজনীতির পুরাধা ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক যতীন সরকারের মৃত্যুতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার শোক জানিয়েছেন।
আজ এক শোকবার্তায় উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের প্রগতিশীল চিন্তাধারার অন্যতম উজ্জ্বল বাতিঘর, লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশের ইতিহাসের ভাষ্যকার, জনগণের শিক্ষক অধ্যাপক যতীন সরকারের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক ও বেদনার সঙ্গে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
উপদেষ্টা বলেন, অধ্যাপক যতীন সরকার শুধু একজন শিক্ষক ছিলেন না-তিনি ছিলেন এক চিন্তানায়ক, যিনি সমাজের প্রতিটি স্তরে যুক্তিবোধ, মানবিকতা ও মুক্তচিন্তার বীজ বপন করেছেন।
আজ তাঁর মৃত্যুতে আমরা শুধু একজন ব্যক্তিকে হারাইনি, হারিয়েছি এক আদর্শকে, এক দর্শনকে, এক অনুপ্রেরণাকে। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়-কীভাবে যুক্তি, মানবতা ও সাহসিকতার সঙ্গে সমাজের মুখোমুখি হতে হয়। তাঁর স্মৃতি আমাদের চিন্তাজগতে চিরকাল জাগ্রত থাকবে, এবং তাঁর আদর্শ আমাদের পথচলার প্রেরণা হয়ে থাকবে। কিন্তু তাঁর প্রকৃত সম্মান নিহিত ছিল মানুষের হৃদয়ে-যেখানে তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক, একজন পথপ্রদর্শক, একজন বন্ধু।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা অধ্যাপক যতীন সরকারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার, সহকর্মী, ছাত্রছাত্রী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা প্রকাশ করছি। এই মনীষীর প্রস্থান আমাদের জাতির চিন্তাজগতে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, যতীন সরকার আজ বিকেল ময়মনসিংহে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট তিনি নেত্রকোনায় কেন্দুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যতীন সরকার আজীবন ময়মনসিংহ শহরের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহে যেমন গভীর মননশীলতা প্রতিফলিত হয়েছে, তেমনি তাঁর বক্তৃতা ও লেখনীতে বারবার উঠে এসেছে সমাজের অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং মানবমুক্তির স্বপ্ন।
১৯৬০-এর দশক থেকে তিনি ময়মনসিংহ শহরের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন। তাঁর অসাধারণ বাগ্মিতা, যুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণ এবং সাহসী অবস্থান তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছে প্রিয় করে তুলেছিল। তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি জ্ঞানের আলোকে সমাজকে আলোকিত করতে চেয়েছেন, এবং সেই চেষ্টায় কখনো পিছপা হননি। তিনি শিক্ষকতার পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামে এবং বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে আজীবন যুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছেও দিশারী হয়ে থাকবেন।
২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে ভূষিত করে, যা তাঁর আজীবন অবদানের একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এছাড়াও তিনি ২০০৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেছেন।