ব্রয়লারে গাবা সমৃদ্ধ খাদ্যে অধিক উৎপাদনের সম্ভাবনা

বাসস
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১৮:১৮
ছবি : বাসস

মো. সাকিব আল তানিউল করিম জীম

বাকৃবি (ময়মনসিংহ), ১৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : দেশে ব্রয়লার খামারিদের জন্য তীব্র গরমের মৌসুম একটি বড় চ্যালেঞ্জ। উচ্চ তাপমাত্রা (সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি) যখন দীর্ঘসময় ধরে থাকে, তখন মুরগির শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। এ সময় ব্রয়লারের খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়, ফলে ওজন বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়। 

এছাড়া বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট, কোষ নষ্ট হওয়া এমনকি মৃত্যুহারও বেড়ে যায়। এতে ব্রয়লারের উৎপাদন কমে যায়, যার প্রভাব পড়ে পুরো পোলট্রি শিল্পে। 

এ অবস্থায় নিরাপদ, রোগ প্রতিরোধসম্পন্ন ও অধিক উৎপাদনক্ষম ব্রয়লার মুরগির জন্য আদর্শ হতে পারে গাবা (গামা এমাইনোবিউটারিক এসিড) সমৃদ্ধ খাদ্য। 

গবেষণায় দেখা গেছে, গাবা সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের ফলে ব্রয়লারের গড় ওজন সাধারণ ব্রয়লারের তুলনায় প্রায় ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি হয়। পাশাপাশি, খাদ্যের রূপান্তর হার উন্নত এবং গরমে সৃষ্ট তাপমাত্রা জনিত চাপের (হিট-স্ট্রেস) লক্ষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ফলে, ব্রয়লার মুরগির মৃত্যু হার কমে।

উষ্ণ পরিবেশে ব্রয়লার পালনের চ্যালেঞ্জ ও গাবা সমৃদ্ধ খাদ্যের সমাধান বিষয়ে গবেষণা শেষে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহা. ইলিয়াছুর রহমান ভূঁইয়া। 

তিনি ‘ডেভেলপিং হিট রেসিস্টেন্ট ব্রয়লারস: ইনহেনসিং পারফরম্যান্স উইথ গাবা এনরিচড ফিড’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের সহযোগী গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন।

জানা যায়, ঢাকা ব্যাংক পিএলসির অর্থায়নে গত বছরের সেপ্টেম্বরে গবেষণা প্রকল্পটি শুরু হয়। শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ পরীক্ষামূলক ল্যাবরেটরি ও ফিল্ড ট্রায়াল গবেষণায় গাবা সমৃদ্ধ খাদ্যের সাফল্যের দাবি করেন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা।

ড. ইলিয়াছুর রহমান জানান, গাবা হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যামাইনো অ্যাসিড জাতীয় যৌগ, যা ব্রয়লারের স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাপ ও চাপ কমে গেলে মুরগির গ্রহণকৃত খাদ্যের কার্যকারিতা বাড়ে, যা দ্রুত ওজন বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে। এর ফলে মৃত্যুহার কমে এবং অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। গাবা সমৃদ্ধ খাদ্যের মাধ্যমে ব্রয়লার উৎপাদের খরচও অনেক কম। গাবা পানিতে মিশিয়েও খাওয়ানো যায়। 

তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গাবার চকলেট পাওয়া যায়। গাবা সমৃদ্ধ খাদ্য সহজলভ্য করার জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কথা চলছে, যেন খামারিরা উপকৃত হতে পারে।

প্রধান গবেষক ও শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি এন্ড টক্সিকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোছা. শরীফা জাহান লাবনী বলেন, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিলো ব্রয়লার মুরগির বৃদ্ধির উপর উচ্চ তাপজনিত প্রভাব মূল্যায়ন করা, তাপ ও  চাপের পরিস্থিতিতে ব্রয়লারদের তাপ স্থিতিস্থাপকতা এবং কর্মক্ষমতা উন্নত করতে গাবাসমৃদ্ধ খাদ্যের সম্ভাবনা যাচাই করা। 

এছাড়া ডোজের মাত্রা ও বিতরণ পদ্ধতি বিবেচনা করে গাবা-সমৃদ্ধ খাদ্যের প্রণয়ন করা এবং বাণিজ্যিক ব্রয়লার উৎপাদন ব্যবস্থায় গাবা-সমৃদ্ধ খাদ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহারিক সুপারিশ প্রদান করা।

গবেষণার সফলতার দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, গাবা সমৃদ্ধ বিশেষ খাদ্য গ্রহণের ফলে ব্রয়লারের ওজন বাড়ে, সঙ্গে পুষ্টি শোষণ ও হজম দক্ষতা বাড়ে। কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন কমায় তাপমাত্রা জনিত মানসিক ও শারীরিক চাপ কমে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। 

তিনি বলেন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোষের ক্ষয় রোধ, প্রদাহ হ্রাস ও ইমিউন সেল শক্তিশালী করতে উপযোগী গাবা সমৃদ্ধ খাদ্য। এর ফলে রোগের হার ও মৃত্যুহার কমে যায়, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার কমে। একইসঙ্গে উৎপাদন খরচ কম ও অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে লাভের হার বেড়ে যায়।

অধ্যাপক শরীফা জাহান বলেন, দেশের গ্রীষ্মকাল ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এই উদ্ভাবন ব্রয়লার শিল্পে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। গাবা-সমৃদ্ধ খাদ্যের প্রসার ঘটলে দেশের মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি ও খামারিদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হবে। 

গাবা সমৃদ্ধ খাদ্য ব্যবহার করে ব্রয়লার উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন ময়মনসিংহের খামারি আব্দুল হাই। তিনি বলেন, গত বছর তীব্র গরমে আমার খামারের তিনশ মুরগি মারা গিয়েছিল। পরে স্যারেরা আমাকে ছয়শ মুরগি দিলেন, যেগুলোতে গাবা সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করা হয়। পাশাপাশি আমি কিনলাম আরও ছয়শ মুরগি।

তিনি বলেন, মুরগির বয়স যখন ২৫ দিন হয়ে গেল, তখন আমার অংশের মুরগি মারা যেতে শুরু করে, তবে স্যারের মুরগি একটিও মারা যায়নি। ৩০ দিনে ওজন এসেছে দুই কেজির বেশি। আগে ১ হাজার ২০০ মুরগি পালন করতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার ওষুধ লাগত, এখন সেই ওষুধের খরচ সাশ্রয় হয়। মুরগিগুলো যাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে তারা জানিয়েছেন স্বাদ ও ঘ্রাণে সাধারণ ব্রয়লার মুরগির চেয়ে উন্নত ছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সেতু কর্তৃপক্ষের ‘উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ শুরু
মেহেরপুর সীমান্তে মার্কিন ডলারসহ আটক ১ 
উইজডেনের শতাব্দী সেরা ১৫ টেস্ট সিরিজে দু’টি বাংলাদেশের
খালেদা জিয়ার জন্মদিনে পথশিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ
খালেদা জিয়ার জন্মদিনে গাজীপুরে বস্ত্র বিতরণ
সনাতনীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আট দাবি উপস্থাপন
চট্টগ্রামে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু নিহত
মানুষের হৃদয়ে আওয়ামী লীগ-শেখ মুজিব ছিল না : এ্যানি
ফেনীতে বিএনপি'র সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম   
সাতক্ষীরায় মরিচ্চাপ নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, নদীগর্ভে বিলীনের আশংকায় ১০ টি স্থাপনা
১০