সাব্বির আহমেদ
লালমনিরহাট, ১৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : উজানের দেশ ভারতের সিকিম ও বিভিন্ন রাজ্যে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফুলেফেঁপে ওঠা তিস্তার পানি গত কয়েকদিন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর আবার রাতারাতি কমে গেছে পানি।
আজ শুক্রবার দুপুর ২ টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল একই সময়ে সেখানে পানিপ্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে। অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় পানি কমেছে ৪১ সেন্টিমিটার।
দ্রুত নদীর পানি কমতে থাকায় জেলার নদীর তীরবর্তী বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল এলাকার পানি নেমে যেতে শুরু করেছে, তবে সব এলাকার পানি নামতে আরো সময় লাগবে, ফলে নদীপাড়ের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরছে। নিম্নাঞ্চলের মানুষ নিজেদের কাজকর্ম করতে শুরু করেছেন, অনেকে বাড়ি ঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করছেন।
তবে চলতি বছর ৪ বার বন্যায় রোপা আমনসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ভয়াবহ ক্ষতির চিহ্ন ভেসে উঠছে, জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে এখন পর্যন্ত ৯১৫ হেক্টর আবাদি রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রকৃত ক্ষতির চুড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করবে।
এর আগে বন্যার সময় ধানের বীজ চারা সংগ্রহ করে রোপণ করলেও এবার তার আর সুযোগ থাকছে না অনেক কৃষকের, ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকেরা। গবাদি পশু লালন পালনকারী খামারি ও কৃষকদের শুকনো খড় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা গরু ছাগল নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। নিম্নাঞ্চলের অনেক মৎষ চাষীদেরও মাথায় হাত, পুকুর ও মাছের ঘের ভেঙ্গে ও ভেসে যাওয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা।
লালমনিরহাট জেলার ২০ টি নিম্নাঞ্চলের ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি থাকলেও প্রকৃত পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে সরকারি সহযোগিতা না পৌঁছায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে বন্যার্ত মানুষেরা দাবি করেন, তারা কোন ত্রাণ সহযোগিতা চান না, তিস্তার স্থায়ী সমাধান চান।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল আরেফিন বলেন, প্রাথমিকভাবে ফসল নিমজ্জিত কৃষকদের তালিকা করা হলেও চুড়ান্তভাবে তালিকা প্রণয়ন করতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা করবেন তারা, এবং সরকারি কোন সহযোগিতা আসলে তা সঠিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বন্টন করা হবে বলে তিনি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, দ্রুত পানি কমার কারণে তিস্তায় ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে, এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মজুদ রয়েছে, যেখানেই ভাঙ্গন দেখা দেবে তাৎক্ষণিক সেখানে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, স্বল্প মেয়াদি এবারের বন্যায় গ্রামীণ রাস্তাঘাটসহ, মৎস্য ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তালিকা প্রণয়ন শেষে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা করা হবে।