বান্দরবান, ২১ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : পার্বত্য জেলা বান্দরবানের স্থানীয়দের জনপ্রিয় খাবার মুন্ডি। এটা এক ধরনের বিশেষ নুডলস। এটি খেতে খুবই মজা। টক ঝাল মিশ্রিত। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছেও এটি স্থানীয় খাবার হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। বান্দরবান জেলা ও উপজেলা শহরের মুন্ডির দোকানগুলোতে বিকেল হলেই ভিড় বাড়তে থাকে।
সরেজমিনে বান্দরবানের থানচি উপজেলার থানচি বাজারে উয়ই রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড মুন্ডি কাবাব হাউসে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতার ভিড়। উয়ই রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড মুন্ডি কাবাব হাউসের মালিক উথোয়াইসা মারমা তার স্ত্রী ইয়াক্যনু মারমা ও কন্যা উমেচিং মারমাকে নিয়ে একসাথে ক্রেতা সামলাচ্ছেন।
রোববার থানচির সাপ্তাহিক বাজার বার হওয়ায় সকাল থেকেই দোকানগুলোতে স্থানীয়রা মুন্ডি খাওয়ার জন্য ভিড় করছেন। বাজারে কেনা বেচা শেষ করে একে একে ঢুকছেন মুন্ডির দোকানগুলোতে। আধ ঘণ্টার মধ্যে দোকানের বেঞ্চগুলো পরিপূর্ণ। অনেকে খাচ্ছেন দাঁড়িয়ে। আবার কেউ কেউ বসে। কেউ মুণ্ডির সাথে মিক্স করছেন গরম পানির ঝোল আবার কেউবা জুমের শুকনা মরিচের গুঁড়া। বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও খাচ্ছে এ খাবার। এই ভিড়ের মধ্যে পর্যটকদেরও দেখা যায় দোকানের ভেতরে মুন্ডি খেতে।
ইয়াক্যনু মারমা রান্নাঘরে তৈরি করা মুন্ডি টেবিলের উপরে সাজিয়ে রাখছেন। উমেচিং মারমা সেই মুন্ডি সবাইকে পরিবেশন করছেন। সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন উথোয়াইসা মারমা।
দুই হাতে কাজ সামলাতে সামলাতে উমেচিং মার্মা বাসস প্রতিবেদককে বলেন, মুন্ডি আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার। আগে নিজ হাতে চালের গুড়া দিয়ে বানানো হতো। আর এখন আধুনিক যুগ। এখন বাজারে প্যাকেট পাওয়া যায়। তাই কষ্ট করে হাতে আর বানানো হয় না।
মুন্ডির রেসিপি জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে স্টিকগুলো সিদ্ধ করতে হয়। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ঠান্ডা করতে হয়। এরপর নানা রকম উপাদান মিশিয়ে দেয়া হয়। যেমন- শুটকির গুড়া, মরিচের গুঁড়া, ডিম, ভাঁজা পেঁয়াজ, কালোজিরা, সেদ্ধ তেল, লবণ, তেতুঁলের রস ইত্যাদি স্বাদমতো দিতে হয়। তারপর গরম পানির ঝোল দিতে হয়। এরপর চামচ দিয়ে কাস্টমারকে পরিবেশন করি।
উথোয়ইসা মারমা বাসসকে বলেন, সকালের দিকে কাস্টমার কম থাকে। তবে বিকাল ৫টার পর থেকে কাস্টমারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেটা সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। তবে রবি আর বুধবার বাজার বার হওয়ায় ওই দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রেতার ভিড় বেশি থাকে। পর্যটকরাও এ খাবার পছন্দ করে খায়। আমার স্ত্রী, মেয়ে এবং আমি এ দোকানটি চালাই। মেয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের সাহায্য করে।
দোকানে মুন্ডি খেতে আসা চিং নুং মং বলেন, ছেলে মেয়েদের নিয়ে আমরা মুন্ডি খেতে আসছি। এটা খেতে খুব ভালো লাগে । মজাও। তবে এর সাথে একটু ডিম দিলে আরও ভালো লাগে।
তিনি বলেন, এই দোকানে সব সময় খেতে আসি। আমি একটু ঝালটা পছন্দ করি। তাই মুন্ডির সাথে ঝাল মিশিয়ে খাই। দামও কম। এক এক জায়গায় মুন্ডির দাম একেক রকম। এটার দাম ৩০ টাকা।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মহিউদ্দিন বলেন, আমরা কয়েকজন বন্ধু তিন্দুতে যাবো ঘুরতে। এখানে বিশেষ ধরনের খাবার খুঁজছিলাম। স্থানীয়রা বলেছেন, এখানকার বিশেষ খাবার মুন্ডি। যদিও আগে নাম শুনেছি কিন্তু খাওয়া হয়নি। এবার খেতে আসলাম এবং খেলাম। নুডলসের মত। কিন্তু খুব স্বাদ।
মুন্ডি প্রস্তুতকারকরা জানান, দুই থেকে তিন দিনের ভেজা আতপ চালকে ছোট ছিদ্রযুক্ত চালুনির ওপর রেখে পরিষ্কার করে পানি শুকিয়ে নিতে হয়। এরপর ঢেঁকিতে দিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয় । এই মণ্ডকে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে চাপ দিলে নিচের দিকে চলে আসে নুডলসের মতো চিকন লম্বা মুন্ডি । প্রতি কেজি চালে দুই কেজি মুন্ডি তৈরি করা সম্ভব। কেজি প্রতি মুন্ডির দাম হয় ৮০-১০০ টাকা । তবে এখন এ মুন্ডি তৈরি করা হয় না। প্যাকেটজাত পাওয়া যায়। কষ্ট নেই। চাল দিয়ে তৈরি মুন্ডির স্বাদ কিন্তু ভিন্ন।
বান্দরবানের উজানি পাড়ার নীলা মুন্ডি হাউসে কথা হয় এর স্বত্বাধিকারী অখ্য মারমার সাথে। তিনি বলেন, সকাল থেকে মুন্ডি হাউস বন্ধ থাকে। তবে বিকেল ৪ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখা হয়। এলাকার সবকটি দোকান বিকেলে খোলে । সকালে তেমন কাস্টমার থাকে না।
তিনি আরো বলেন, আমরা নিজেরা মুন্ডি তৈরি করি না। বালাঘাটা থেকে চালের মুন্ডি কিনে নিয়ে আসি। এটা একটু মোটা হয়। আর প্যাকেটজাত নুডুলসটি চিকন হয়। দাম প্যাকেট প্রতি ১১৫ টাকা।
দোকানে কাস্টমারের চাহিদা আছে। বেশির ভাগ দোকানে মুন্ডি ৩০ টাকা নিলেও আমরা ২০ টাকা করে নেই।