।। শুভব্রত দত্ত।।
বরিশাল, ২১ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে ভাগ্য গড়েছেন রাধা রানী ঘোষ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন নিজেকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবম্ববী করে গড়ে তুলতে হবে। তাই তিনি নিজের মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে আজ তিনি সমাজে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতিও পেয়েছেন বেশ।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. জাহিদ হোসেন ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মহানগর যুবদল নেতা সগির আহম্মেদ জানান, রাধা রানী একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। ১২ থেকে ১৬ মাস পূর্বেও রাধা রানীর আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। তাই তিনি ঘরের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে না রেখে বেড়িয়ে পড়েন কর্মসংস্থানের উদ্যেশ্যে। তারা আরো বলেন, পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল না হওয়ায় শুরু করেন জীবন সংগ্রাম। ছাত্র পড়ানোর পাশাপাশি তিনি শুরু করেন (ফ্লাইং ব্যবসা) উরন্ত শাড়ি ব্যবসার কাজ। আর সেই ব্যবসার বদৌলতে আজ তিনি বরিশাল নগরীর এক সফল নারী উদ্যোক্তা।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে নারী উদ্যোক্তা রাধা রানী ঘোষ (৬৫) বলেন, তিনি নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা সংলগ্ন নিজ বাড়িতে বসবাস করেন। পিতা প্রয়াত হরিপদ কংসবনিক ও মাতা প্রয়াত রেনু বালা কংসবনিক। তার স্বামী কমল চন্দ্র ঘোষ রাস্তার পাশে ছোট একটি রেস্টুরেন্ট চালাতেন। সারা বছর সংসার চলতো অভাব অনটন আর টানাটানির মধ্যে। ছাত্র পড়ানো চলাকালে ঘটনাক্রমে ভাইয়ের সাথে ঢাকায় গিয়ে বঙ্গবাজার সুপার মার্কেট ও গাউছিয়া পাইকারি সুপার মাকের্ট থেকে কয়েকটি শাড়ি কিনলেন নিজের ও প্রতিবেশীদের জন্য। প্রতিবেশীদের কাছে বিক্রি করতে ঢাকা থেকে আনা শাড়িগুলো প্রতিবেশীদের খুবই পছন্দ হয়। এর পর থেকে শুরু করি শাড়ির ব্যবসা।
আর সেই থেকেই ঘুরে গেল রাধা রানী ঘোষের জীবনের মোড়। এরপর ঢাকা থেকে ব্যবসা করার জন্য শাড়ি কিনে ঘরে বসেই বিক্রি করতে শুরু করলেন রাধা রানী। পরে ছাত্র পড়ানো ছেড়ে দিয়ে তিনি শাড়ী, থ্রীপিচ ও ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য তৈরি পোষাকের দোকান দিলেন। কিন্তু পুঁজির অভাবে ব্যবসার সম্প্রসারন করা যাচ্ছিল না।
তিনি বলেন, এ সময় নিজ এলাকার একাধিক বিশিষ্টজন ও শুভাকাঙ্খীদের পরামর্শে সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন থেকে ঋন পাওয়া যায়, এমন সংবাদের ভিত্তিত্বে তিনি চলে আসেন বেসিক ব্যাংকে।
ব্যাংকে যোগাযোগ করে রাধা রানী জানতে পারেন, বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক বিশেষ করে নারীদের সহজ শর্তে ব্যবসা বানিজ্যের জন্য সহায়তায় ঋন প্রদান করে থাকেন। স্বল্প সময়ের মধ্যেই নারীদের জন্য করা সরকারের এমন সু-ব্যবস্থা গ্রহণ করেই সমাজে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে জায়গা করে নেন রাধা রানী।
তিনি আরো বলেন, তখন আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বরিশাল বেসিক ব্যাংক লি.। ব্যাংকটি ২ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করে রাধা রানীকে। যদিও পরবর্তিতে তিনি আবার ৩ লাখ টাকা লোন নিয়ে ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে নগরীর অমৃত লাল দে সড়কের (নতুন বাজার পুলিশ ফাড়ি সংলগ্ন) এলাকায় মেসার্স রাধা বস্ত্রালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি নিজের কর্মক্ষমতায় নগরীতে ব্যপক পরিচিতি পেয়েছেন এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
এ প্রসঙ্গে নগরীর নতুন বাজার এলাকার প্রতিষ্ঠিত একাধিক প্রতিষ্টানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাম্সউদ্দিন কামাল বলেন, একজন প্রকৃত উদ্যোক্তা হতে হলে প্রথমেই নিজেকে প্রবল আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্নবিশ্বাসী হতে হবে। আমি যতটুকু দেখেছি সেই গুনগুলো রাধা রানীর মধ্যে ছিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। যে কোন ব্যবসা বা উদ্যোক্তা হওয়ার পূর্বে অবশ্যই তাকে ব্যবসার সকল বিষয় সম্পর্কে একটি পূর্ব পরিকল্পনা থাকতে হবে। একজন প্রতিবেশি হিসেবে এই নারী উদ্যেক্তার মধ্যে অদম্য ইচ্ছা শক্তি ছিল। বর্তমান সময়ে বরিশালে বহু নারী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন। ঠিক তেমনি বরিশাল নগরীতে রাধা রানী মেসার্স রাধা বস্ত্রালয়’র মাধ্যমে নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্টিত করতে পেরেছেন।
বরিশাল বেসিক ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মাহফুজুর রহমান বাসসকে বলেন, রাধা রানী ঘোষ যথেষ্ট পরিশ্রমী ও সাহসী নারী উদ্যোক্তা। তার একগ্রতা ও মনবল খুব প্রখর। তার জীবনে সাফল্য অনিবার্য। তিনি আরো বলেন, উন্নয়ন ও নারীর সফলতা প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। নগরীর যে সকল নারী উদ্যোক্তা রয়েছে তাদের সহজ শর্তে ঋন প্রদানে যে কোন ধরনের সহোযোগিতা করবে বেসিক ব্যাংক। একই সাথে নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে এ ব্যাংকের দেয়া ঋন যেন সঠিক ভাবে সঠিক ব্যবসায় পরিচালনা করা হয়। তাহলেই সফল নারী উদ্যোক্তা ও সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা হবে।
বরিশাল মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মেহেরুন নাহার মুন্নি বলেন, নারী উদ্যোক্তা হওয়া মানে শুধু ব্যবসা করা নয়, এটি নারীর ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করেন। আরো বলেন, যুগের পরিক্রমায় এবং বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। একই সাথে এই সুযোগগুলো নারীরা সকল বাঁধা অতিক্রম করেও এগিয়ে যাচ্ছে।