কালাম আজাদ
বগুড়া, ২৮ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): সাধারণত জুলাইয়ের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমনের চারা রোপণ করা হয়। দুই থেকে তিন মাস পর নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ কৃষকের ঘরে ওঠে সোনালি ধান। সে হিসাবে মৌসুমে কয়েক দফা বৃষ্টির পর বগুড়া জেলায় মাঠে মাঠে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, বর্ষার পানির ওপর ভরসা করে প্রতিবছর আমন চাষ করে থাকেন কৃষকরা। এ বছর বৃষ্টির কারণে সেচ খরচ নেই বললেই চলে। তবে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বাড়ছে বলে জানান কৃষকরা।
তবে অনুকূল আবহাওয়া, ফসলের মাঠে কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, সময়মতো সার, কীটনাশক প্রয়োগ করলে আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষক ও বগুড়া কৃষি বিভাগ।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এতে ৯ লাখ ৯১ হাজার ৯১৭ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যা থেকে ৬ লাখ ৬১ হাজার ২৭৮ টন চাল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে জেলার গাবতলী, আদমদীঘি, শিবগঞ্জ, ধুনটসহ বিভিন্ন উপজেলায় দেখা গেছে জমি চাষ, বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন আর চারা রোপণে চলছে কৃষকের মহাকর্মযজ্ঞ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এসব কাজে এগিয়ে এসেছেন। এ সময় অনেকে জানান, এক বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এতে ১৬ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ মণ ধান পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে জেলায় উচ্চফলনশীল জাতের আমনের আবাদ বেড়েছে। এতে উৎপাদনও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে অতিরিক্ত বর্ষার পানিতে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১৫ হেক্টর আগাম আমন ধান ডুবে গেছে। এর মধ্যে কুতুবপুরের ধলিরকান্দি এলাকায় ১০ হেক্টর এবং উপজেলা সদর ও চন্দনবাইশা এলাকায় ৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে।
তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ডুবে যাওয়া ধান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো প্রায় ৩ হেক্টর জমির ধান পানির নিচে আছে। তবে এগুলোর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
কুতুবপুর পূর্বপাড়া এলাকার কৃষক মাহাবুর রহমান বলেন, এবার ছয় বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলাম। সবটাই পানিতে ডুবে গেছে। এর মধ্যে তিন বিঘার ধান পুরো নষ্ট। আর বাকি তিন বিঘার আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
ধলিরকান্দি এলাকার কৃষক হেলাল মন্ডল বলেন, দুই বিঘা ধান লাগিয়েছিলাম। পুরোটাই ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, এবার তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। বর্ষার পানিতে ১৫ হেক্টর জমির ধান ডুবলেও বেশিরভাগ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নামতে শুরু করেছে। গত বছর পানির অভাবে কৃষকেরা নিচু জমিতে চারা রোপণ করেছিলেন। এবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে সেসব জমির ধান তলিয়ে গেছে।