ঢাকা, ৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, 'আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশের পররাষ্ট্রনীতি হবে—‘সবার আগে বাংলাদেশ’।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, একে ‘দেশের মানুষের সিদ্ধান্ত’ বলে মনে করছেন তারেক রহমান।
বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শেখ হাসিনা এখন দিল্লিতে, একবছর ধরে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের শীতলতা চলছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সম্পর্কোন্নয়নে পদক্ষেপ নেবে কি না।
জবাবে তারেক রহমান বলেন, 'এখন তারা যদি স্বৈরাচারকে সেখানে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই।’
বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের সাথে শীতল থাকবে। সো, আমাকে আমার দেশের মানুষের সাথে থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিবিসি বাংলা জানতে চেয়েছিল, বিএনপি যদি সরকার গঠন করে, তখন কূটনীতির ক্ষেত্রে মূলনীতি কী হবে? উত্তরে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'বিএনপির মূলনীতি একটাই- সবার আগে বাংলাদেশ। কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির নীতি সবার আগে বাংলাদেশ। আমার জনগণ, আমার দেশ, আমার সার্বভৌমত্ব। এটিকে অক্ষুন্ন রেখে, এই স্বার্থ বিবেচনা করে এবং একে অটুট রেখেই বাকি সবকিছু।'
তারেক রহমানের সঙ্গে বিবিসি বাংলার দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব মঙ্গলবার সকালে প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি। এতে বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতির ভাবনা, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক নদীর পানির হিস্যা, এক এগারো সরকারসহ সমসাময়িক বিষয়ে তার ভাবনা উঠে এসেছে।
এর আগে সোমবার এই সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়। ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে নির্বাসিত তারেক রহমান দেড় যুগের মধ্যে এই প্রথম কোনো সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
বিগত সরকারের সময় প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যে ধরনের সম্পর্ক ছিল তা নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে বিএনপির নীতি কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, 'আমার মনে হয়, আপনি একটু আগে যে প্রশ্নগুলো করেছেন, সেখানে বোধহয় আমি ক্লিয়ার করেছি পুরো ব্যাপারটা। সবার আগে বাংলাদেশ। এখানে তো আপনি পার্টিকুলার (সুনির্দিষ্ট) একটি দেশের কথা বলেছেন।
'এখানে ওই দেশ বা অন্য দেশ তো বিষয় না। বিষয় তো হচ্ছে, ভাই বাংলাদেশ আমার কাছে আমার স্বার্থ, আমি আগে আমার দেশের মানুষের স্বার্থ দেখব, আমার দেশের স্বার্থ দেখব। ওটাকে আমি রেখে আপহোল্ড করে আমি যা যা করতে পারব, আমি তাই করব।'
বাংলাদেশের তিন পাশেই ভারতের সীমান্ত রয়েছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত বা কেমন থাকা প্রয়োজন- এ নিয়ে আপনার চিন্তা কী? উত্তরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, 'অবশ্যই, আমি আমার পানির হিস্যা চাই। অবশ্যই আমি দেখতে চাই না যে আরেক ফেলানী ঝুলে আছে। অবশ্যই আমরা এটা মেনে নেব না।'
তারেক রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, পানির হিস্যা এবং সীমান্ত হত্যার মতো বিষয় নিয়ে বিএনপি কি সোচ্চার থাকবে?
উত্তরে তিনি বলেন, ‘উদাহরণ দিয়ে বললাম। দুটো উদাহরণ দিয়ে বুঝালাম আপনাকে যে আমাদের স্ট্যান্ডটা কী হবে। আমরা আমাদের পানির হিস্যা চাই। অর্থাৎ আমার দেশের হিস্যা, মানুষের হিস্যা আমি চাই, হিসাব আমি চাই।’
'আমার যেটা ন্যায্য, সেটা আমি চাই। অবশ্যই ফেলানী হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আমি বোঝাতে চেয়েছি যে আমার মানুষের উপরে আঘাত আসলে অবশ্যই সেই আঘাতকে আমি মেনে নেব না।'
সংস্কারের কিছু বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের কিছুটা মতপার্থক্য বা মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে। যেমন- এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা বা দলের প্রধান থাকতে পারবেন না, এরকম একটা প্রস্তাব এসেছে, যাতে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। এক ব্যক্তি একইসঙ্গে তিন পদে থাকলে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরির সুযোগ থাকে কি না?
এমন প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান বলেন, 'সকলের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, এই যে বাংলাদেশে রাষ্ট্র মেরামতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন। একজন ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, থাকবেন না। এরকম আরো যে বিষয়গুলো আছে, এগুলো বাংলাদেশে যখন স্বৈরাচার ছিল- তাদের মুখের উপরে, তাদের চোখের দিকে চোখ রেখে আমরা বিএনপিই বলেছিলাম।
'এখন হয়তো অনেকে সংস্কারের কথা বলছেন। সেদিন কিন্তু সংস্কারের ‘স’-ও তারা বলেননি। তারপরেও সকলের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে আমি বলতে চাই, বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিলে সেটি সমস্যা, অর্থাৎ বিএনপিকে এগ্রি (সম্মত) করতে হবে সবার সাথে, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু বিএনপি যদি কোনোটার সাথে একমত না হয়, তাহলে বেঠিক। এটি তো গণতন্ত্র হলো না।’
'মানে, আমাকে অন্যের সাথে একমত হতে হবে, তাহলে গণতন্ত্র। আমি যদি অন্যের সাথে দ্বিমত করি, তাহলে গণতন্ত্র না। এটি কেমন গণতন্ত্র? কারণ গণতন্ত্রের মানেই তো হচ্ছে, বিভিন্ন মতামত থাকবে। আমরা অনেক ব্যাপারেই একমত হব হয়তো। সকল ব্যাপারে একমত হবো না, কিছু ব্যাপারে হয়তো দ্বিমত থাকতেই পারে, এটাই তো গণতন্ত্র, এটাই তো এসেন্স অব গণতন্ত্র।’
'আমরা তো কোনো হাইড অ্যান্ড সিক করছি না। আমি যেটা মনে করছি যেটা আমার দৃষ্টিতে ঠিক না, আমি বলছি ঠিক না।'
বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে বা সরকার গঠন করে, তখন ৩১ দফা নাকি জুলাই সনদ—কোনটা অগ্রাধিকার পাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা বলেন, 'আমরা যেগুলোতে একমত হয়েছি, প্রথমে আমরা সেগুলোর উপরেই জোর দেব। সেটা আপনি যে নামেই বলেন না কেন, স্বাভাবিকভাবে আমরা ঐকমত্য কমিশনে যেগুলোতে সকলে মিলে একমত হয়েছি, ইনশাআল্লাহ সরকার গঠনের সুযোগ পেলে আমরা প্রথমে সেগুলোতে অবশ্যই জোর দেব।
'আর, তারপরে আপনি যেটা ৩১ দফার কথা বললেন, অবশ্যই ৩১ দফা আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট জনগণের প্রতি। আমরা তো আমাদের ৩১ দফার মধ্যে যেগুলোর এটার সাথে মিলে গিয়েছে, সেগুলো তো আমরা করবই। এর বাইরে যেগুলো থাকবে ৩১ দফায় আছে, সেগুলোও বাস্তবায়ন করবো।
'কারণ ওটা তো আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট। এটাও যেমন পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট, ওটাও আমাদের পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট। এটা আমরা রাজনৈতিক দলগুলো মিলে একত্রিত হয়ে বলেছি। ওটাও আমরা অনেকগুলো রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়েই কিন্তু ৩১ দফা দিয়েছি।'
এক এগারো সরকার নিয়ে মূল্যায়ন প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, 'এক বাক্যে বা সংক্ষেপে যদি বলতে হয়, এক এগারোর সরকার তো অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটি সরকার ছিল।’
‘আমরা দেখেছি সেই সরকার আসলে কীভাবে দেশের যতটুকু যেমনই হোক বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে যতটুকুই রাজনীতি গড়ে উঠেছিল, গণতান্ত্রিক ভিত্তি ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল ভুল- ত্রুটি সবকিছুর ভিতর দিয়েই। কিন্তু আমরা দেখেছি যে কীভাবে তারা সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, বিরাজনীতিকরণ করতে চেয়েছিল। দেশকে একটি অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। পরবর্তীকালে দেখেছি যে খুব সম্ভবত তাদেরই ভিন্ন আরেকটি রূপ; অন্যভাবে দেখেছি আমরা ‘ইন দি নেম অফ ডেমোক্রেসি’।'
ভবিষ্যৎ বিএনপি কেমন হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, 'আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণ, দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্ব। আমরা দুটো বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে খুবই গর্ব করি, অহংকার করি, একটি হচ্ছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প, আরেকটি হচ্ছে প্রবাসীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান- এই দুটোই কিন্তু বিএনপি শুরু করেছিল।
তিনি বলেন, 'আমরা দেখেছি, বিএনপির সময় শুরু হয়েছিল প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়া, একই সাথে গার্মেন্টস শিল্পের প্রসার। এর বাইরেও যদি আমরা দেখি, ১৯৭৪ সালে যে দুর্ভিক্ষটা হয়েছিল, পরবর্তীকালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে ধীরে ধীরে দুর্ভিক্ষ পীড়িত একটি দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসপূর্ণ করে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ না, অল্প পরিমাণ করে হলেও আমরা কিন্তু সেই সময় বিদেশে খাদ্য রপ্তানি, চাল রপ্তানি করেছিলাম।
'আর রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা দেখি, যেখানে একসময় সকল দলকে নিষিদ্ধ করে একটি দল বাকশাল করা হয়েছিল। আমরা দেখেছি যে, বিএনপির কাঁধে যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে, তখন কীভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্র আবার চালু হয়।
'কাজেই আপনি বললেন অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ইয়েস, আমরা অতীতে এই ভালো কাজগুলো করেছি। ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ এই বিষয়গুলো কনসিডারেশনে (বিবেচনায়) রেখেই আমরা সামনে এগিয়ে যাব। আমাদের অন্যতম মূল লক্ষ্য হবে, ভবিষ্যৎ বিএনপির গণতন্ত্রের যে বুনিয়াদ, একটি শক্তিশালী বুনিয়াদ তৈরি করা। জবাবদিহিতা তৈরি করা।'
দল নিয়ে চিন্তাধারায় কোন ধরনের পরিবর্তন এসেছে কিনা জানতে চাওয়া হলে উত্তরে তিনি বলেন, 'গত ১৭ বছর প্রবাস জীবনে আছি এবং অনেকগুলো বছর আমি বাংলাদেশের সাথে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা টাইম ডিফারেন্সে, ডিস্টেন্স ডিফারেন্স তো আছেই। রিচিং ডিফারেন্স তো একটা ডিফিকাল্টিস। এটি একটি বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এক্ষেত্রে প্রথমেই আমি আমার পরিবার অর্থাৎ আমার স্ত্রী এবং আমার সন্তানকে ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ তাদের সহযোগিতা না থাকলে হয়তো এই ডিফিকাল্ট কাজটি করা আমার জন্য আরো ডিফিকাল্ট হতো। ওনাদের সহযোগিতা ছিল সেজন্য আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে।
'একই সাথে আমি আবারো ধন্যবাদ দিতে চাই আমার হাজারো- লক্ষ নেতাকর্মীকে। যারা এই ডিফিকাল্টিজের মধ্যে থেকেও আমাকে সহযোগিতা করেছেন, দলকে সুসংগঠিত রাখতে, দলকে রাজপথে নিয়ে যেতে শত অত্যাচার বাধা-বিঘ্নর মাঝেও জনগণের কথা তুলে ধরতে, জনগণের দাবির ব্যাপারে সোচ্চার থাকতে।
'আপনি জিজ্ঞেস করেছেন মনে হয় যে এখান (যুক্তরাজ্য) থেকে কী কী দেখেছি, শিখেছি বা জেনেছি- আমি মনে করি, এই দেশ থেকে ভালো যা কিছু দেখেছি বা শিখেছি, দেশের নাগরিক হিসেবে এবং যেহেতু আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হয়তো আমার একটি সুযোগ আছে দেশের জন্য ভালো কিছু করার।
‘যদি আমি ইনশাআল্লাহ সেই সুযোগটি পাই, তাহলে তা যতটুকু সম্ভব দেশের মানুষের জন্য বা দেশের জন্য কিছু করার জন্যে কাজে লাগাব, এভাবে বিষয়টিকে আমি বিবেচনা করি।'
বিগত সরকারের আমলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ছিল। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এমন পরিস্থিতি হবে না, তার নিশ্চয়তা কি দিতে পারেন?
উত্তরে তারেক বলেন, 'ইয়েস, পারি। একদম দিতে পারি। আপনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পত্রপত্রিকা খুলুন। আমি কারো নাম উল্লেখ করবো না, কোনো পত্রিকার কথা উল্লেখ করবো না। শুধু খুলে দেখুন কিভাবে অনেক খবর ছাপা হয়েছিল। যার সত্যতা কিন্তু ছিল না, অপপ্রচার ছিল। কিন্তু অপপ্রচারটা সংবাদ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
'আপনি কি শুনেছেন, আপনি কি আমাকে প্রমাণ দিতে পারবেন- বলতে পারবেন যে বিএনপির সময় এ কারণে সাংবাদিকদের নির্যাতন করা হয়েছিল, আমি কিন্তু বলতে পারবো অনেক অনেক সাংবাদিকের নাম যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্বৈরাচারের সময় এবং পরবর্তীকালে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ইভেন, এখনো অনেকে প্রবাস জীবনে আছেন, এরকম বহু সাংবাদিক।
'আমি বলতে পারব, স্বৈরাচারের সময় বহু সাংবাদিককে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন-ধমক দেওয়া হতো। বিএনপির সময় এগুলো করা হয়নি, কারণ তখন সংবাদপত্রে যে খবরগুলো প্রকাশিত হয়েছে তৎকালীন বিএনপি সরকার সম্পর্কে, আমার সম্পর্কে, যদি বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন-ধমক দেওয়া হতো তাহলে কিন্তু ওরকম খবর প্রকাশিত হতো না।’
'অর্থাৎ বিএনপির সময় যদি অত্যাচার- নির্যাতন থাকতো, তাহলে খবরগুলো প্রকাশিত হতো না স্বাভাবিকভাবে। যা হয়নি বিগত সরকারের সময়, স্বৈরাচারী সরকারের সময়। কাজেই আপনাকে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, বিএনপির অতীত সরকারের সময় যেরকম সাংবাদিকদের গুম করা হয়নি, সাংবাদিকদের নির্যাতন করা হয়নি, সাংবাদিকদের দেশ ছেড়ে যেতে হয়নি, বাধ্য হতে হয়নি। ইনশআল্লাহ ভবিষ্যতেও হবে না।'
সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করে-এ ধরনের আইন কি বিএনপি বাতিল করবে? উত্তরে তারেক রহমান বলেন, 'অবশ্যই, আমরা সকলে মিলে বসবো, আলোচনা করব। আপনাদের মত সাংবাদিকসহ যারা আছেন, তাদের সাথে আলোচনা করব। আলোচনা করে সেগুলোকে আমরা এরকম কালো আইন যা যা আছে, আমরা আস্তে আস্তে ঠিক করব।
তবে এখানে বোধহয় একটি বিষয় আবার আমাকে উল্লেখ করতে হয়- যেটি আমি সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে বলেছি। দেখুন, এটি তো সবাইকে মিলে করতে হবে। অপপ্রচারকে তো অবশ্যই সংবাদ হিসেবে তো প্রচার করা ঠিক নয়, তাই না?
'আমাদের কাছে আপনাদের যেরকম চাওয়া থাকবে, ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে, যারাই আসুক সরকারে, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদেরও অনুরোধ থাকবে আপনাদের প্রতি, যে অপপ্রচার সংবাদ হিসেবে যেন প্রচারিত না হয়, এই বিষয়টিকে একটু সকলকে সচেতন বা খেয়াল রাখতে হবে।'
তারেক রহমানের কাছে বিবিসি বাংলা জানতে চেয়েছিল, আপনাকে নিয়ে অনেক মিম তৈরি হয়, অনেক কার্টুন হয়। যেমন জুমে আপনার বক্তব্য দেওয়া বা ওয়ার্ক ফ্রম হোম নিয়ে একটা মিম অনেক শেয়ার হয়েছিল। এ ধরনের মিমকে আপনি কীভাবে দেখেন?
তারেক রহমানের ঝটপট উত্তর, 'আমি এনজয় করি বেশ, বেশ এনজয় করি।'
জানতে চাওয়া হয়, আপনি দেখেন এগুলো? আপনার চোখে পড়ে? বিএনপি নেতা বলেন, 'হ্যাঁ, চোখে পড়বে না কেন? অবশ্যই চোখে পড়ে। তবে এখানে একটি কথা আছে, যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়টি আসলো, আমার মনে হয়, এই বিষয়ে একটু এড করা উচিত।
তিনি বলেন, 'দেখুন সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটি বিষয় আমি নিজেও আছি সোশ্যাল মিডিয়াতে কমবেশি। বহু বহু মানুষ আছেন, লক্ষ কোটি মানুষ আছেন সোশ্যাল মিডিয়াতে। এটি দিয়ে যেমন খুব দ্রুত একজনের সাথে আরেকজনের যোগাযোগ করা যায়।
'আমরা মাঝে মাঝে বলি যে দেখেন অনেক সময় অনেক আলোচনায় আসে, সেমিনার বক্তব্যে আসে যে, ডিনামাইটটা যখন আবিষ্কৃত হয়, ডিনামাইটটা আবিষ্কৃত হয়েছিল আপনার পাহাড় ভেঙে কীভাবে মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তাঘাট তৈরি করা যায়; হয়তো কীভাবে চাষের জমি করা যায়। এরকম লক্ষ্যকে সামনে রেখেই, উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই কমবেশি ডিনামাইটের ব্যবহারটা শুরু হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি, এটি মানুষ হত্যার মত জঘন্য কাজেও ব্যবহার করা হয়েছে।
'সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, অবশ্যই প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার আছে। যেহেতু আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় আমরা বিশ্বাস করি। প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে, তার মতামত প্রকাশ করার।
'তবে আমরা যদি সকলে এতটুকু সচেতন হই যে আমি আমার মত প্রকাশ করলাম, কিন্তু এই মত প্রকাশের ফলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলো কি না? এই বিষয়টিকে যদি আমরা বিবেচনায় রাখি, একটি মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হলো কি না, ক্ষতিগ্রস্ত হলো কি না? এই বিষয়টিকে বোধহয় আমাদের বিবেচনায় রাখা উচিত; এটি এক নম্বর।
'দ্বিতীয় হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ার বহুল ব্যবহারের ফলে ডিসইনফরমেশন বা মিসইনফরমেশন এই বিষয়টিও চলে এসেছে সামনে। একটি জিনিস আমি দেখলাম বা শুনলাম, সাথে সাথেই আমি সেটিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম- তা না করে আমার মনে হয়, ফ্যাক্ট চেক বলে যেই কথাটি আছে সোশ্যাল মিডিয়াতে, এটা সব জায়গায় আছে- এ ব্যাপারেও যদি আমরা একটু এলার্ট থাকি সবাই, এ ব্যাপারে যদি একটু সচেতন থাকি যে ঠিক আছে, এটি একটু যাচাই বাচাই করে নেই।
'যদি সত্য হয় অবশ্যই আমার সেখানে মতামত থাকবে, কিন্তু যদি মিথ্যা হয় বিষয়টি, কেন আমি এখানে মতামত দেব। একটি মিথ্যার সাথে আমি কেন নিজেকে সংশ্লিষ্ট করব। একটি খারাপ কিছুর সাথে কেন আমি নিজেকে সংশ্লিষ্ট করব! বলুন।’
পোষা বিড়ালের সঙ্গে আপনার নিয়মিত ছবি দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আপনার কাছে বিড়ালটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কীভাবে? উত্তরে তারেক রহমান বলেন, 'প্রথমত এখানে একটু ক্লিয়ার করে নিই, বিড়ালটি আমার মেয়ের বিড়াল। ও এখন অবশ্য সবারই হয়ে গিয়েছে। আমরা সবাই ওকে আদর করি।’
'বিষয়টি হচ্ছে, এরকম শুধু বিড়াল নয়, আমি এবং আমার ভাই যখন ছোট ছিলাম আমাদের একটি ছোট কুকুরও ছিল। ইভেন, তখন আমাদের বাসায় আম্মা হাঁস মুরগি পালতেন, ছাগলও ছিল আমাদের বাসায়। উনি ছাগলও কয়েকটি পালতেন।
'স্বাভাবিকভাবেই আপনি যেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বলেন, পোষা কুকুর বিড়ালই বলেন, বাই দা ওয়ে কবুতরও ছিল আমাদের বাসায়। শুধু কবুতর না, আমাদের বাসায় একটি বিরাট বড় একটি খাঁচা ছিল। সেই খাঁচার মধ্যে কিন্তু পাখি ছিল, বিভিন্ন রকমের এবং আবার আরেকটি খাঁচা ছিল যেটার মধ্যে একটা ময়না ছিল।
'ময়নাটা আমরা বরিশাল থেকে এনেছিলাম। ও আবার বরিশালি ভাষায় কথাও বলতো। টুকটুক করে মাঝে মাঝে কিছু কথা বলতো। তো কাজেই এই বিষয়টি হঠাৎ করেই না। এই পশুপাখির প্রতি যেই বিষয়টি, এটির সাথে আমি কমবেশি ছোটবেলা থেকে জড়িত আছি। হয়তো এটি এখন প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্নভাবে। বাট এটির সাথে আমি বা আমার পরিবার, আমরা অনেক আগে থেকেই আছি।
'কুকুর- বিড়াল ছিল, গরু- ছাগল ছিল, হাঁস মুরগি ছিল, পাখি ছিল, ময়না ছিল, কবুতর ছিল। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা চিন্তা করি, আমাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছেন। আমাদের দায়িত্ব কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টি যা কিছু আছে, তার প্রতি যত্ন নেওয়া।