খুলনার কয়রা উপকূলে স্বাস্থ্য সেবায় সংকট নিরসনের দাবি 

বাসস
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৮
আজ বৃহস্পতিবার খুলনার কয়রা উপকূলে স্বাস্থ্য সেবায় সংকট নিরসনের দাবি । ছবি : বাসস

খুলনা, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার সংকট নিরসনে সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের সামনে বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো'র কয়রা উপজেলা শাখার উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

দাবিগুলোর সঙ্গে একত্বতা পোষণ করে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও এলাকার বিশিষ্টজন মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পেশ করার জন্য কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল বাকী'র কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

দাবিগুলো হলো, কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ানসহ অন্যান্য অপারেশন কার্যক্রম চালু, হাসপাতালে প্যাথলজি টেস্ট, আলট্রাসোনোগ্রাফি ও এক্স-রে সেবা নিশ্চিত করা, গাইনী, মেডিসিন ও সার্জারি বিশেষজ্ঞসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল পদায়ন, চিকিৎসকদের কর্মস্থলে রাখতে আধুনিক আবাসিক ভবন নির্মাণ ও উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, ৩১ শয্যার নতুন ভবনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা চালু, কয়রা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র সংস্কার এবং চিকিৎসক পদায়ন ও কয়রা সদরে ৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরম চিকিৎসক সংকট, অবকাঠামোগত দুরবস্থা ও প্রয়োজনীয় সেবা না থাকায় মানুষকে নূন্যতম চিকিৎসার জন্যও জেলা শহরে ছুটতে হয়। দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ সিজারিয়ানসহ সব ধরনের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। নেই কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা। দারিদ্রতার কারণে খরচ বহন করতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় রোগ জটিল হচ্ছে। ৫০ শয্যার হাসপাতাল কার্যত ১৯ শয্যার ভবনে সীমাবদ্ধ। ৩১ শয্যার ভবন পরিত্যক্ত, আর ২০২২ সালে বরাদ্দ পাওয়া নতুন ভবনের কাজও স্থবির হয়ে পড়েছে।

বক্তারা আরো জানান, উপজেলায় কোনো নারী চিকিৎসক নেই। শিশু বিশেষজ্ঞ ছাড়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গাইনী, সার্জারি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞসহ কোন জুনিয়র কনসালটেন্ট পদের বিপরীতে চিকিৎসক নেই। মন্ত্রণালয় থেকে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদায়ন করা হলেও আবাসিক ভবনের সুব্যবস্থা না থাকার চিকিৎসকরা অবস্থান করেন না।

কয়েকজন মেডিকেল অফিসার বিপুল জনগোষ্ঠীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়ছেন প্রসূতি নারীরা। জরুরী মুহূর্তে চরম ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় জেলা শহরে। ফলে প্রসূতি মা ও শিশুদের মৃত্যু ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। 

এছাড়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যস্থান কয়রা সদরে অবস্থিত একমাত্র উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি জনবল ও অবকাঠামো সংকটে বন্ধ রয়েছে। কয়রার দুঃখী জনমানুষকে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন নাগরিক নেতারা।

মানববন্ধনের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির কয়রা উপজেলার সভাপতি সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম। 

এতে বক্তৃতা করেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সমাজসেবক এইচএম শাহাবুদ্দিন, মহারাজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কয়রা প্রেসক্লাবের সভাপতি মাস্টার সদউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো'র কয়রা উপজেলা শাখার নির্বাহী সদস্য প্রভাষক নুরুজ্জামান, উপকূল ও সুন্দরবন সংরক্ষণ আন্দোলনের আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, ডেলিভারির সময় মৃত্যুবরণ করা এক বোনের ভাই রাসেল। 

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আয়োজক সংগঠনটির সহ-সভাপতি ও কয়রা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, জিএম মোনায়েম বিল্লাহ, নির্বাহী সদস্য মাওলানা সোহরাব হোসেন, সুন্দরবন চ্যারিটির চেয়ারম্যান আবুল হাসান প্রমুখ। 

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম আলোর কয়রা প্রতিনিধি মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন এবং আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত
শরীয়তপুরে জেলা পরিষদের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ
জাম্বিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সশ্রম কারাদণ্ড
ইয়েমেনে ইসরাইলের গুপ্তচর সন্দেহে জাতিসংঘ কর্মী আটক: হুতি কর্মকর্তা
নীলফামারী উত্তরা ইপিজেডে কাজে যোগ দিয়েছে শ্রমিকরা
শরীয়তপুরে কমিউিনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম জোরদারকরণ বিষয়ক সেমিনার
বেইজিংয়ে সি চিনপিংয়ের সঙ্গে কিম জং উনের বৈঠক
তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্রে সহযোগিতা করবে সরকার: তৌহিদ
ঝালকাঠিতে স্কাউট সদস্যদের সনদ বিতরণ
বাংলাদেশে এসডিজি অর্জনে তৃণমূল নেতৃত্বের ওপর জোর বিশেষজ্ঞদের
১০