চাকরি ছেড়ে এখন সফল কৃষি উদ্যোক্তা পটুয়াখালীর খলিল

বাসস
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৫
নিজ বাগানে সফল কৃষি উদ্যোক্তা খলিল। ছবি : বাসস

।। এনামুল হক এনা ।।

পটুয়াখালী, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ছোট ডালিমা গ্রামের বাসিন্দা মো. খলিলুর রহমান (৫৫)। তিনি ১৯৯৭ সালে এসএসসি পাস করেন। এর পরে তিনি ঢাকায় একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করতেন। কিন্তু তার কোনো চাকরিতেই যেন মন বসে না। চলে এলেন গ্রামে। এসেই শুরু করলেন কৃষিতে মনোনিবেশ। অক্লান্ত পরিশ্রম আর সীমাহীন প্রচেষ্টায় খলিলের দুহাতে ধরা দিল সাফল্য। এখন তার উৎপাদিত কৃষি ফসলের বাহিরে শুধুমাত্র লবন আর কেরোসিন তেল কিনতে হয়। পরিবারের খাদ্য চাহিদার সব কিছু নিজেই উৎপাদন করেন এই সফল কৃষি উদ্যোক্তা খলিল।

সরেজমিনে মিষ্টি কুমড়া ও লাউয়ের ক্ষেতে গিয়ে কথা হলে কৃষক খলিলুর রহমান বাসসকে বলেন, প্রাইভেট ফার্মের চাকরি ছেড়ে ২০০০ সালে তিনি ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন। ২০০০ সালে ইন্টিগ্রেটেড পোস্ট ম্যানেজমেন্ট (ipm) কোর্স শুরু করেন, শেষ হয় ২০০৫ সালে। ২০০৬ সালে শুরু করেন ইন্টিগ্রেটেড ক্রপ ম্যানেজমেন্ট (icm), , শেষ করেন ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। এরপর ২০১২ সালে শুরু করেন ইন্টিগ্রেটেড ফার্ম ম্যানেজমেন্ট (ifmc)  কোর্স, শেষ হয় ২০১৮ সালে। এরপরে আমি একজন কৃষক হিসেবে আমার মূলত: লবন এবং কেরাসিন ছাড়া সব কিছুই নিজস্ব খামারে উৎপাদন শুরু করি। তৈল, সবজি, মসলা জাতীয়, মরিচ, হলুদ ইত্যাদি।

কৃষক খলিলের বাড়িতে ঘুরে দেখা যায়, পুরো বাড়ি তিনি পুষ্টি বাগানে পরিনত করেছেন। সেখানে আম, জাম, কাঠাল, লিচু পেয়ারা, আখ, জাম্বুরা, আমড়া, জলপাই থেকে শুরু করে অসংখ্য জাতের ফলজ ও বনজ বৃক্ষরোপণ করেছেন তিনি। বাড়ির এক কোনায় গরু মহিষের বর্জ্য থেকে তিনি সার উৎপাদন করছেন। ফলে খলিলের বাহির থেকে সারও কিনতে হচ্ছে না। এছাড়া তাঁর বাড়িতে সূর্যমূখির আবাদ করে তিনি সেখান থেকে যে তৈল উৎপাদন করেন, তা দিয়ে তার নিজের পরিবারের বছরের তেলের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, বাড়িজুড়ে হাস-মুরগিও পালন করেন তিনি। 

আমার মূল পেশা হলো সবজি চাষ উল্লেখ করে কৃষক খলিলুর বলেন, আমার বাড়িজুড়ে পুষ্টি বাগান। এছাড়া আমি সবজি চাষের আরো দুটো বাগান করছি। বাগানে আমার লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ধুন্দল এই তিনটে ফসল আছে এখন। আমি সর্বসাকুল্যে এই সবজি চাষ করে মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করি। এই টাকায় আমার চার সন্তান মাশাল্লাহ ভালো স্কুলে লেখাপড়া করে, এবং আমার মা-বাবার খরচও আমি বহন করি। আমার সাফল্যের পেছনে কৃষি অফিস বিভিন্ন সময় আমাকে সহযোগিতা করে আসছে।

খলিল তার বিলের মাঝে তিলে তিলে গড়ে তোলা ফুল-ফলে সমৃদ্ধ সবজির বাগান ঘুরে ঘুরে দেখিয়ে বলেন, মাচাং দিয়ে আমি ধুন্দল, লাউ এবং মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। এসব সবজি যেন মাটিতে পরিত্যক্ত না থাকে সেজন্য মাচাং দিয়েছি। শুধু তাই নয়, মাচাং এর নিচে লতিরাজ কচু চাষ করেছি। এতে করে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে কচু ও লতি বিক্রি করি। তাছাড়া লতি আমাদের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। শরীরের জন্য যথেষ্ট উপকারী ফসল এটি।

তিনি বলেন, আমি যে জমিতে সবজি চাষ করছি এটা প্রধানত ধানের জমি। এই ধানের পাশাপাশি চেষ্টা করলাম সবজি চাষ করতে। কৃষি অফিসারের পরামর্শ নিয়ে মাচাং দিয়ে সুন্দরভাবে সবজি চাষ করলাম। আমার দেখাদেখি অনেক লোক এখন সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

আত্মীড-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশিকে প্রতি মাসে কিছু না কিছু সবজি উপহার দেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের কাছে জোর অনুরোধ- আমরা যারা কৃষক পেশায় আছি। আমাদেরকে যেন আরেকটু সাহায্য সহযোগিতা করা হয়। তাহলে আমরা কৃষকরা নিত্য নতুন চাষে আগ্রহী হবো। দেশের কৃষি আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। আমরা সমরকারের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পেলে দেশ এবং গোটা জাতির জন্য ভালো কিছু উপহার দিতে পারবো। কেননা কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় দেলোয়ার সিকদার (৪০), আনসার তালুকদার (৫৫), ইব্রাহিম সিকদার (৪০) বলেন, আমরা আগে কৃষিতে মনোযোগী ছিলাম না। এখন আদর্শ কৃষক খলিল ভাইকে দেখে চাষবাসে আগ্রহী হচ্ছি। আমরা তাকে দেখে ব্রি, বিয়ার জাতীয় ধান, হাইব্রিড ভ ১ জাতের সবজি চাষ শিখছি। এছাড়া বিভিন্ন জাতের ফল বাগান থেকে শুরু করে এক জমিতে তিন ফসল চাষ করা শিখছি ভাইকে দেখে। তিনি আমাদের আদর্শ কৃষক। তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি।

তারা আরো বলেন, আমরা গরু মোটাতাজাকরণ, উন্নতজাতের ঘাস চাষ করাও শিখছি খলিল ভাইকে দেখে। এখন আমরা জার্মানি, নেপিয়ার জাতের ঘাসও চাষ করছি। এছাড়া ইউরিয়া মোলাসেস (ums)  বানিয়ে গরুকে পুষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়াচ্ছি। রাসায়নিক খাদ্য বয়কট করে এখন নিজস্ব তৈরিকৃত খাবার গরুকে দিতে পারছি। এছড়া হাঁস মুরগি পালনে উন্নত জাতের তিন তলার খোপ তৈরি করা শিখছি। খলিল ভাইয়ের জন্য শুভ কামনা।

এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বাসসকে বলেন, খলিলুর রহমান একজন সফল কৃষক উদ্যোক্তা। আমরা তাকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন সময়ে আধুনিক প্রযুক্তি সহযোগিতা দিয়েছি। তিনি কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। তারমধ্যে তিনি মালচিং দিয়ে অমৌসুমে উচ্চমূল্যের সবজি আবাদ করেছেন। রেইস বেট পদ্ধতিতে আধুনিক জাতের মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ধুন্দল আবাদ করে তিনি লাভবান হয়েছেন। তার জন্য শুভ কামনা রইলো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা
বিভিন্ন অপরাধে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গ্রেফতার ১৩
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতির সাক্ষাৎ
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেলেন ৫৯ কর্মকর্তা
ভোটার তালিকা ও এনআইডির গুরুত্ব পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্তির উদ্যোগ ইসির
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কর্মসংস্থানে কারিগরি প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই : সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা
খুবির কেন্দ্রীয় মসজিদে নতুন স্টাডি কর্নার উদ্বোধন
বান্দরবানে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপন
যুদ্ধাপরাধ তদন্তে জাতিসংঘের আহ্বান প্রত্যাখ্যান শ্রীলঙ্কার
রংপুর অঞ্চলে পাটের বাম্পার ফলন
১০