নিরাপদ সড়ক আইন প্রণয়নে ‘সেফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ’ অনুসরণের আহ্বান

বাসস
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:১২

\ সৈয়দ এলতেফাত হোসাইন \

ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সবার জন্য নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সরকার নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রস্তাবিত এ আইনটিকে আরো বিস্তৃত এবং বৈশ্বিকভাবে সুপারিশকৃত ‘সেফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ’-এর সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ করার আহ্বান জানিয়েছেন একজন খ্যাতনামা সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ।

গত বছরের জানুয়ারিতে ‘রোড সেফটি অ্যাক্ট’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর লক্ষ্য জাতিসংঘ অনুমোদিত সেফ সিস্টেমের পাঁচটি স্তম্ভ- নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ গতি, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী এবং দুর্ঘটনার পর কার্যকর সাড়া গ্রহণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, প্রস্তাবিত আইনটি এখনো খসড়া পর্যায়ে রয়েছে।

প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যমান ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন (আরটিএ) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমাধান করতে ব্যর্থ হওয়ায় অংশীজনদের  দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী পৃথক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অগ্রগতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, একটি উপ-কমিটি খসড়া তৈরি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এখন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত মূল কমিটি অধ্যায়ভিত্তিক পর্যালোচনা করবে।

তিনি জানান, খসড়া জমা দেওয়ার পর কমিটি একবার বৈঠকে বসেছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের আগে আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ে অন্তত আরো পাঁচ-ছয়বার পর্যালোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পরিসংখ্যানও এ আইনের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৫ হাজার ৮৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৮৪০ জন নিহত হয়েছেন, যা ২০২৩ সালের ৫ হাজার ২৪ জনের তুলনায় বেশি।

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই অন্তত ২ হাজার ৯৪৩ জন নিহত হন। পরিবহন অর্থনীতিবিদদের হিসাব অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর বাংলাদেশের জিডিপি’র প্রায় ৩ শতাংশ ক্ষতি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) রোড সেফটি কর্মসূচির কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর শরিফুল আলম বলেন, প্রস্তাবিত আইনে বিদ্যমান আইন ও নীতির ঘাটতি পূরণ করা উচিত।

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশে মৃত্যু ও আহত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এবং এগুলো দেশের স্বাস্থ্য খাত ও অর্থনীতির ওপর বড় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বর্তমানে দেশে এমন কোনো আইন নেই, যা সামগ্রিকভাবে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

তিনি আরো বলেন, একটি আইন প্রণয়নের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে, যা সামগ্রিক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কভার করবে বিশেষ করে অতিরিক্ত গতি, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং হেলমেট, সিটবেল্ট ও শিশু সুরক্ষা বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ নির্ভর মূল আচরণগত ঝুঁকির কারণগুলো নিরসন করবে।

২০১৮ সালে ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আরটিএ প্রণয়ন করা হয়। শরিফুল আলম বলেন, আইনটি মূলত পরিবহন ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ওপর কেন্দ্রীভূত। আরটিএ-২০১৮ পথচারী, সাইকেল আরোহী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং শিশুদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর অধিকার যথাযথভাবে সুরক্ষিত করে না।

তিনি আরো বলেন, বিদ্যমান আইনে দুর্ঘটনার পর কার্যকর প্রতিক্রিয়ার বিধান নেই, অথচ এটি জাতিসংঘের গ্লোবাল প্ল্যান ফর রোড সেফটির একটি প্রধান কর্মক্ষেত্র। দুর্ঘটনা তদন্তের জন্য মানসম্মত প্রক্রিয়া বা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সঠিক রেকর্ড রাখার কোনো স্পষ্ট পদ্ধতি নেই। তিনি নতুন আইনে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৩.৬ ও ১১.২ এবং সড়ক দুর্ঘটনা থেকে মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে জাতিসংঘের গ্লোবাল প্ল্যান টার্গেট পূরণের জন্য শরিফুল আলম বলেন, বাংলাদেশকে দ্রুত সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও গুরুতর আহতের সংখ্যা কমাতে হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে এমন কোনো আইন নেই, যা গ্লোবাল প্ল্যানে সুপারিশ করা পাঁচটি কর্মক্ষেত্র- বহুমাধ্যম পরিবহন ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, নিরাপদ অবকাঠামো, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহার এবং দুর্ঘটনার পর প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি মানা হয়।

শরিফুল আলম প্রস্তাব করেন, সরকার এমনভাবে আইন প্রণয়ন করবে যাতে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়।

সরকারকে দ্রুত আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আইনটিতে সেফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আওতায় তথ্য প্রমাণ-ভিত্তিক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যা গ্লোবাল প্ল্যান ফর রোড সেফটিতে সুপারিশ করা পাঁচটি ক্ষেত্রই কভার করবে।

শরিফুল আলম বলেন, নতুন আইন অবশ্যই বৈশ্বিক সেরা চর্চার প্রতিফলন ঘটাবে। সর্বোচ্চ গতি সীমা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।

তিনি আরো প্রস্তাব করেন, আইনটি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজন অনুযায়ী গতি সীমা কমানোর ক্ষমতা দেবে এবং মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো কমাতে চালকদের রক্তে অ্যালকোহলের ঘনত্বের সীমা (বিএসি) বৈশ্বিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। 

মোটরযানে শিশুদের জন্য সুরক্ষিত আসন বাধ্যতামূলক করারও পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি সুপারিশ করেন, আইনটিতে মোটরসাইকেলের চালক ও পিছনের আরোহী উভয়ের জন্য হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। হেলমেট সঠিকভাবে বাঁধা নিশ্চিত করতে হবে এবং জাতিসংঘ অনুমোদিত মান অনুযায়ী হেলমেটের গুণগত মান নির্ধারণ করতে হবে।

তিনি বলেন, আইনটিতে অবশ্যই মোটরযানের সব চালক ও যাত্রীদের জন্য সিটবেল্ট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বিশেষজ্ঞ মতামত পর্যালোচনায় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক
জবিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি প্রতিযোগিতা
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে ১,২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সাথে ধর্ম উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
বেগম খালেদা জিয়াকে মৌসুমি ফল পাঠিয়েছেন ভুটানের রাষ্ট্রদূত
ঢাকাসহ তিন জেলায় দুদকের অভিযান : অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে
জুলাই আন্দোলনের যুবা ও জেন্ডার ডাইভার্সদের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
জামায়াত আমীরের সঙ্গে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির মানবাধিকার উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
শেখ হাসিনার ও পরিবারের নামের স্থাপনার নাম পরিবর্তন করেছে গৃহায়ন মন্ত্রণালয়
কুস্তিতে পুরুষ-নারী উভয় বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন আনসার
১০