মহসিন বেপারী
ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারাদেশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণেরও নির্দেশ দিয়েছে।
এ ব্যাপারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বাসসকে বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপনে দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ চেকপোস্ট ও পেট্রোলিং চলমান রয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশব্যাপী বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকায় ৯৪টিসহ সারাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর ২৮১ টি টহল দল মোতায়েন থাকবে।
তিনি বলেন, দুর্গাপূজা ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে র্যাব-এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। পূজার নিরাপত্তা প্রস্তুতি হিসেবে র্যাব-এর বিভিন্ন আওতাধীন পূজামণ্ডপ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় টহল ও বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন এবং পূজামণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তাসংক্রান্ত তদারকির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো ধরনের গুজব বা উসকানিমূলক মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে র্যাব সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
আইজিপি বলেন, দুর্গোৎসবকে ঘিরে কেউ যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছে।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, সারা দেশে দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে।
তিনি বলেন,‘দুর্গাপূজা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য প্রতীক।
রেজাউল করিম আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা, পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা জোরদার, ভক্তদের নির্বিঘ্নে পূজা আয়োজনের ব্যবস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন ও পুলিশের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি) জানিয়েছে, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সীমান্তবর্তী এলাকা এবং রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের পূজামণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে সংস্থার ৪৩০ প্লাটুন সদস্য।
বিজিবির আওতাধীন ২ হাজার ৮৫৭ টি পূজামণ্ডপসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবির ২৪টি বেইজ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
বিজিবির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, বিজিবির আওতাধীন মোট পূজামণ্ডপের মধ্যে রয়েছে সীমান্তবর্তী (সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের মধ্যে ও পার্বত্য এলাকার ১৫ টি পূজামণ্ডপসহ) এলাকায় ১ হাজার ৪১১ টি। সীমান্তবর্তী এলাকার বাইরে রয়েছে ১ হাজার ৪৪৬ টি পূজামণ্ডপ। বাইরের পূজামণ্ডপসমূহের মধ্যে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৪১ টি, চট্টগ্রাম মহানগরী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় ৬৯৪ টি এবং অন্যান্য স্থানে ৩১১ টি পূজামণ্ডপ রয়েছে।
পূজা উপলক্ষে যে-কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে বিজিবির গোয়েন্দা নজরদারি শক্তিশালী করার পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বিশেষ টহল পরিচালনা করা হচ্ছে।
দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশের পূজামণ্ডপে আনসার বাহিনীর দুই লক্ষাধিক সদস্য মোতায়েন থাকবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপত্তা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ সদর দপ্তর এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী, আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য এবং আনসার-ভিডিপি সদস্যদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে অধিক গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে আটজন, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ পূজামণ্ডপে ছয়জন করে আনসার-ভিডিপি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। একইসাথে, দেশের ৬৪ জেলায় ৯২টি ব্যাটালিয়ন আনসার স্ট্রাইকিং ফোর্স টিম মোতায়েন থাকবে।
আগামীকাল (রোববার) মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ শারদীয় দুর্গোৎসব। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আগামী ২ অক্টোবর পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের শেষ হবে।
এ বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ১ হাজার ৮৯৪ টি বেশি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র ও মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা এবং বিজয়া শোভাযাত্রার আয়োজন থাকবে।