দিনাজপুরে আগাম শিমে লাভবান কৃষকেরা

বাসস
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৪৪
দিনাজপুরে শীতকালীন সবজি শিম আগাম চাষ করছেন কৃষকেরা। ছবি: বাসস

\ রোস্তম আলী মণ্ডল \

দিনাজপুর, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দিনাজপুরের বিভিন্ন গ্রামে কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে আর্লি-৪৫ উন্নত জাতের শিম চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। মৌসুমের আগেই এ ধরণের শিম বাজারজাতে অধিক মূল্যে বিক্রি করতে পেয়ে হাসি ফুটেছে তাদের মুখে।

এ বিষয়ে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও ফসল) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণায় শীতকালীন সবজি শিম এখন গ্রীষ্মকালে বাণিজ্যিকভাবে সব উপজেলাতে কৃষকেরা চাষ করছেন। এ শিমে বেশি দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তারা। তাই আগামি জাতের শিম চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।

জেলার বিরল উপজেলার ফারাক্কাবাঁধ গ্রামের কৃষক মো. খাদেমুল ইসলাম (৪০) জানান,  ৩০ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। তার জমি সবুজ শিমে ছেয়ে গেছে। অধিক ফলন ও ভাল দাম পাওয়ায় তিনি খুব খুশী।

জানা গেছে, শনিবার বিকেলে কৃষক খাদেমুলের শিমের ক্ষেত পরিদর্শন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কৃষি পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সেক্টরের মহাপরিচালক এবং অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ।

দিনাজপুরে অঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন, দিনাজপুর কৃষিভিত্তিক অঞ্চলের টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু রেজা মো.আসাদুজ্জামান, মনিটরিং ও মূল্যায়ন অফিসার মো. মশিউর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আফজাল হোসেন ও বিরল কৃষি কর্মকর্তা মোছা. রুম্মান আক্তারসহ কৃষি কর্মকর্তাগণ মাছ পরিদর্শনের সময় অর্জিত শিমের ফলন দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

পরিদর্শন শেষে কৃষি বিভাগের মুখপাত্র উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানান, কৃষি সমৃদ্ধ জেলা দিনাজপুর বরাবরই কৃষিতে সাফল্য অর্জন করে আসছে। এবার বাজিমাত করেছে গ্রীম্মকালীন শিম উৎপাদন করে। কৃষি বিভাগের উদ্ভাবন করা উন্নত জাতের আর্লি ৪৫ জাতের এ শিম বিষমুক্ত ও পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা থাকায় কৃষকেরাও ভালো দাম পাচ্ছেন যা তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে কৃষকদের আগ্রহ ব্যাপকহারে বাড়ছে।

বিরল উপজেলার মোখলেসপুর গ্রামের টেকসই কৃষি উন্নয়ন কৃষক-কৃষানি দলের সহায়তায় কৃষক মো. সায়েদ আলী (৫০) তার ৩৫ শতাংশ জমিতে প্রাথমিকভাবে গ্রীষ্মকালীন এই শিম চাষ করেছেন। সাদা ও বেগুনি শিমের ফুল আর সবুজ শিমে ভরে উঠেছে তার খেত। গত ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি প্রায় ২৭ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। পাইকাররা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে জমি থেকে শিম কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বাজারে সেই শিম খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। 

সায়েদ আলীর সাফল্য দেখে ওই গ্রামের নজরুল, কাইয়ুম সহিদুল কার্তিক চন্দ্র, মিলন দেবসহ আরও অনেকে আগাম শিম চাষ শুরু করেছেন। তারা জানান, এ ধরনের শিমে কম খরচে লাভ বেশি। আর্লি-৪৫ জাতের এই শিম গ্রীষ্মকালীন চাষের উপযোগী এবং প্রতি হেক্টরে গড়ে ৭ থেকে ৮ টন পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে। 

দিনাজপুর সদর উপজেলার নশিপুর গ্রামের মো. রবিউল ইসলাম (৩৫) বলেন, ব্যবসার পাশাপাশি ২২ শতক জমিতে শিম চাষ করেছি। এবার অনুক’ল আবহাওয়া থাকায় কোনো বালাই ছাড়াই শিমের ভালো ফলন পাচ্ছি। আমার শিমের ফলন দেখে অনেকেই শিম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। 

শিম চাষে পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়ায় তিনি সদর কৃষি বিভাগের মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মোঃ ইউসুফ আলীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আবু রেজা মো.আসাদুজ্জামান জানান, শিম জাতীয় সবজি ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিনসহ নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এই শিম চাষে কৃষকদের আমরা নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। আর্লি-৪৫ জাতের গ্রীষ্মকালীন শিমের বীজ জুন-জুলাই মাসে রোপণ করা হয়। স্বল্প সময়ে বিষমুক্ত নিরাপদ এই শিম চাষের সাফল্য আগামীতে অন্য চাষিদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।  

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
রাঙ্গামাটিতে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত
দিনাজপুরে পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের
বাগেরহাটে প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে মতবিনিময় 
জীবনের সঙ্গে খাদ্যের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য : নিরাপদ খাদ্যের চেয়ারম্যান 
কামাল মজুমদারের ছেলে শাহেদ ৫ দিনের রিমান্ডে
আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবসে চুয়াডাঙ্গায় আলোচনা সভা 
সারাদেশে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ১,২৯৬
গাজা যুদ্ধের অবসানে চুক্তির দাবিতে ইসরাইলে বিক্ষোভ
২০২৩ সালের ডিগ্রী ও সার্টিফিকেট কোর্স পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন
খেলাপি ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা আদায়ে কাজ করছে টাস্কফোর্স: রূপালী ব্যাংকের এমডি
১০