।। মো. আয়নাল হক ।।
রাজশাহী, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে উন্নত জাতের ফুলকপি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মৌসুমি ফুলকপি চাষের বাইরে গ্রীষ্মকালেও কৃষকরা ফুলকপি চাষ করে প্রচুর লাভের মুখ দেখছেন। এতে তাদের আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে।
ফুলকপি শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত হলেও গ্রীষ্মকালেও সফলভাবে চাষ করা হচ্ছে। বিশেষ করে দুর্গাপুর, গোদাগাড়ী, পবা ও পুঠিয়া উপজেলায় এটি চাষ করা হচ্ছে। বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি ও অসময়ে উৎপাদনে ভালো লাভ হওয়ায় এ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকরা বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালী উভয় পদ্ধতিতে ফুলকপি চাষ করছেন। অনেকেই পানির ওপর নির্ভরশীল ফসল ধান থেকে সরে এসে অসময়ে সবজি চাষে ঝুঁকছেন। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সহায়তা এই পরিবর্তনকে আরো উৎসাহিত করেছে, যা টেকসই ও লাভজনক কৃষির দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য সহায়ক।
ধামিলা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম পাঁচ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করছেন এবং ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সেগুলো বাজারে বিক্রির আশা করছেন।
তিনি বলেন, চাহিদা প্রচুর, দামও ভালো। খুচরা বাজারে বর্তমানে কেজি প্রতি ফুলকপি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। তবে, এক সপ্তাহ আগে দাম আরো বেশি ছিল।
গোদাগাড়ী উপজেলার গোলাই গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী মুহাম্মদ মিলন ইতোমধ্যেই লাভবান হতে শুরু করেছেন। তিনি ১২ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। গত সপ্তাহেই এক বিঘা জমি থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ফুলকপি বিক্রি করেছেন।
তিনি বলেন, উৎপাদন খরচ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। প্রথম দিকের ফসলের ফলন অনেক ভালো হয়।
মিলন জুন মাসে ৩০ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি রোপণ শুরু করেন এবং শীতকালে একাধিক পর্বে চাষ করার পরিকল্পনা করেছেন।
তিনি আরো বলেন, প্রথম দিকের ফসল শীত বা গরম যেটাই হোক সবসময় বেশি লাভজনক হয়।
শুধু দেওপাড়া ইউনিয়নে ছয়টি গ্রামের প্রায় ৪৫ জন কৃষক এখন প্রায় ৩৫০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করছেন।
কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা অতনু সরকার বলেন, গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বেশি দেখতে পাচ্ছি। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কৃষকদের সর্বাধিক মুনাফা অর্জনে সহায়তা করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে চাষ করে আসা শস্য ধানের তুলনায় সবজি চাষ বেশি লাভজনক প্রমাণিত হচ্ছে।
দুর্গাপুরের চুনিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক শাতাহার আলী (৪৬) তার গ্রামের অন্য কৃষকদের উৎসাহিত করছেন। তিনি দেড় বিঘা জমিতে উন্নত জাতের ফুলকপি চাষ করেছিলেন ২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে এবং ইতোমধ্যে ৮৫ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছেন।
দুর্গাপুরের চুনিয়াপাড়া গ্রামের ৪৬ বছর বয়সী কৃষক শাতাহার আলীর মতো কৃষকরা তাদের সম্প্রদায়ের অন্যদের অনুপ্রাণিত করছেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি ফুলকপি সরাসরি ক্ষেত থেকে ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং খুচরা বাজারে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এই মৌসুমে আমি দেড় লাখ টাকারও বেশি ফুলকপি বিক্রি করার আশা করছি।
রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে সালমার মতে, বর্তমানে জেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করা হচ্ছে। তিনি এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক চাষ ও গৃহস্থালি বাগান উভয়ের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, কৃষকরা উন্নত, উচ্চ-ফলনশীল জাতের দিকে ঝুঁকছেন। এতে ভালো দাম পাওয়া যায়। অনেকেই এখন কেবল শীতকালেই নয়, গ্রীষ্মকালেও ফুলকপি চাষ করছেন। যার ফলে তাদের লাভ বেশি হচ্ছে।
শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য পরিচিত বরেন্দ্র অঞ্চল এখন রূপান্তরের সাক্ষী। সেচনির্ভর ফসলের ওপর কম নির্ভরতা এবং কৃষি কর্মসূচি থেকে ক্রমবর্ধমান সহায়তার মাধ্যমে কৃষকরা বৈচিত্র্যময় ফসল ফলানোর দিকে ঝুঁকছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জোরদার করছে।
উম্মে সালমা বলেন, সবজি চাষ জীবন বদলে দিচ্ছে। এটি প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে।