
ঢাকা, ৮ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আগামীতে এ দেশে সকল ধর্মে ও গোত্রের মানুষের সমান মর্যাদা থাকবে। আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সেইভাবে গড়ে তুলতে চাই যেখানে সকল ধর্মের সকল গোত্রের মানুষের সমান মর্যাদা থাকবে। আমি একটা কথা বলতে চাই, এদেশটা আপনার, এই মাটি আপনার। একাত্তর সালে যখন আমরা যুদ্ধ করি সেই যুদ্ধের সময়ে কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিলো না, আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান, পাহাড়ি- সবাই একসাথে দেশকে স্বাধীন করতে লড়াই করেছিলাম। আজকে আবার সেই মন্ত্রে উদীপ্ত হয়ে আসুন সবাই সকল মানুষের বসবাস উপযোগী দেশে রুপান্তরিত করতে এক হই।’
আজ শনিবার বিকালে মতুয়া সম্প্রদায়ের এক প্রতিনিধি সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন।
রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের উদ্যোগে হিন্দু প্রতিনিধিদের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি তারেক রহমান যুক্ত হলে মিলনায়তনে হিন্দু সম্প্রদায়ে সদস্যরা উলু ধবনি দিয়ে স্বাগত জানান। এই সময়ে তারেক রহমান হাত তলে তাদের অভিবাদনের জবাব দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছে। তাদের একটা আশা সামনে আছে। সেই আশাটা হচ্ছে কী যে, আমরা বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে একটা নাগরিকের মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই বিএনপি বিজয়ী করুন। আপনাদের দাবি-দাওয়া তখনই সম্ভব হবে যখন আপনারা আমাদের নেতাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব দিতে পারব। আপনারা আজকে কী আমাদেরকে কথা দিচ্ছেন।’
এ সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপস্থিতরা ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিলে বিএনপি মহাসচিব শ্লোগান ধরেন, ‘হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই, ধানের শীষের ভোট চাই, মতুয়া মুসলমান ভাই ভাই, ধানের শীষে ভোট চাই।’
অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘মুসলমানদের দল তো বিএনপি না। এটা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সকল ধর্মের সম অধিকার নিয়ে দল, নো সংখ্যালঘু, নো সংখ্যাগুরু। সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের সমান অধিকার। সেটাকে ভিত্তি ধরে আমরা আত্বীয়তা করতে চাই। কিন্তু আত্মীয়তার বেশিদিন টিকে থাকে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কমপক্ষে ১০টা হিন্দু সমাবেশ করছেন। একটায় আমি নিজে ছিলাম, উনার সাথে ঘুরেছি, দেখছি, ভালো আগ্রহ দেখেছি।
ভগবানের সৃষ্টি কোন মানুষ ছোট না, বড়ও না, মধ্যও না অথবা যাদেরকে আপনারা নিকৃষ্ট মনে করেন তারা ভগবানের মূল আদর্শটা জানে না।’
হরি গুরুচাঁদ মতুয়া মিশনের সভাপতি সুবর্ণা রানী ঠাকুর বলেন, আজকে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে যে মহান ব্যক্তি বসে আছেন, যতই সুখে থাকুন না কেন শত শত মাইল দূরে থেকেও আজকে তার মন পড়ে রয়েছে এই বাংলাদেশের মাটিতে। জননী ও জন্মভূমির চাইতে সুখকর আর এমন উপযুক্ত স্থান আর কোথাও হতে পারে না। আজকে তারেক জিয়ার মন কাঁদছে এই বাংলার মানুষের সাথে আলিঙ্গন করার জন্য। আমি আশা রাখি তিনি অতি শীঘ্রই আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন এবং আমাদেরে এই সনতানী সম্প্রদায়ের সমস্ত দাবি-দাওয়া সবকিছু তিনি পূরণ করবেন।’
মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সদস্য সচিব কোপিল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ‘আজকে সারা দেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়েরর মানুষজন এই অনুষ্ঠানে প্রমাণ করে দিচ্ছে, হিন্দু সম্প্রদায় কারো ব্যক্তিগত ভোট বাক্স নয়। হিন্দু মানে, আওয়ামী লীগ নয়। আমাদের এই ক্রান্তিলগ্নে আপনি তারেক রহমান আমাদের এখন আশা-ভরসার প্রতীক। আমরাও চাই, এই মতুয়া সম্প্রদায় আপনার ভোট ব্যাংক হোক।’
মতুয়া বহুজন ঐক্যজোটের আহ্বায়ক সোমনাথ দে‘র সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি বিজন কান্তি সরকার, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক, মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সমেন সাহা, বিদুর কান্তি বিশ্বাস, রমেন্দ্র নাথ সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।