ঢাকা, ৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কনভেনশনে বক্তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে বৈষম্যহীন মানবিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে ‘মানবতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছেন।
তারা বলেন, মানবতন্ত্র এমন এক চিন্তাধারা, যা ন্যায়, সমতা ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে মানুষের মর্যাদা রক্ষার পথ দেখায়।
রাজধানীর সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশন মিলনায়তনে শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত ‘রয়েল ইউনিভার্সিটি নিবেদিত দ্বিতীয় ঢাকা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কনভেনশন ২০২৫’-এ বক্তারা এই আহ্বান জানান।
জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি আয়োজিত এ কনভেনশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি মীর হাসমত আলী। অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, কবি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব রেজাউদ্দিন স্টালিন।
বক্তারা বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় শুধু আইন নয়, প্রয়োজন একটি মানবিক চেতনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা। তারা উল্লেখ করেন, বৈষম্য, দারিদ্র্য ও সহিংসতা দূর না হলে মানবাধিকার কখনও প্রতিষ্ঠা পাবে না। সেই লক্ষ্যে মানবতন্ত্রের দার্শনিক মূল্যবোধ সমাজে বাস্তবায়ন করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন সিনিয়র সচিব ও ৩৬ জুলাই আন্দোলনের প্রবক্তা মো. শামসুল আলম, বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি সরদার তমিজউদ্দীন আহমেদ, কর্নেল এস. এম. ফয়সাল, কবি আসাদ কাজল, কবি জামসেদ ওয়াজেদ, এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটির গ্রুপ ইডি সৈয়দ জোবায়ের আহমেদ বাবু এবং মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী বাদলুর রহমান খান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি ইমরোজ সোহেল, মেজর (অব.) কাজী মনজুরুল ইসলাম প্রিন্স, আবদুর রহিম, গবেষক কাজী খায়রুল বাশার, প্রিন্সিপাল সালাউদ্দিন ভূঁইয়া এবং বাংলা৫২নিউজের এইচআর প্রধান মোহাম্মদ খায়রুল হাসান পলাশ প্রমুখ।
মানবাধিকারকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেন জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আফতাব উদ্দীন আহমেদ, আর মানবাধিকার শপথ পরিচালনা করেন বিচারপতি মীর হাসমত আলী।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের রূপকার ও সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ আবদুল অদুদ এবং কবি রলি আক্তার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মানবতন্ত্র প্রবর্তক কবি ও সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মু. নজরুল ইসলাম তামিজী।
অনুষ্ঠানে শিক্ষায় অবদানের জন্য রয়েল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আ. ন. ম. মেশকাত উদ্দীন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলামকে ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
এছাড়া শিশু শিক্ষায় প্রিন্সিপাল সামসুন নাহার লস্কর, মাদকবিরোধী প্রচারণায় ড. জাহিদ আহমেদ চৌধুরী, এবং ব্যবসায়িক খাতে খোরশেদ আলম অপু ও সবুর শেখ একই সম্মাননা পান।
সভায় বক্তারা গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীদের একত্রিত হতে হবে। তারা ফিলিস্তিনে নিরীহ মানুষের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান জানান।
কনভেনশনে জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটির আর্থ-সামাজিক প্রকল্প ‘যুব কল্যাণ’-এর লোগো উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ।
সাংস্কৃতিক পর্বে মানবাধিকারকর্মীরা নাচ, গান ও নাট্য পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানকে উৎসবমুখর করে তোলেন।
অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল এটিএন বাংলা, আর সমন্বয় করেন মাঈনউদ্দীন, এ. বি. বাদল ও নাজমুল হাসান মিলন।