কুমিল্লার ভান্তির চরে সাদা মুলা চাষে সফলতা, খুশি কৃষক

বাসস
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:১৪
শীত এখনও দেরি, অথচ মুলা তুলতে শুরু করেছে ভান্তির চরের কৃষকেরা। ছবি : বাসস

।। দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ।।

কুমিল্লা, (দক্ষিণ) ৯ অক্টোবর, ২০২৫(বাসস) : জেলার গোমতী নদীর বুড়িচং উপজেলার ভান্তির চরের সকালটা অন্যান্য দিনের মতোই ব্যস্ত। তবে এখন চোখে পড়ছে সাদা মুলার স্তূপ—কেউ জমি থেকে তুলছে, কেউ গোছাচ্ছে, কেউ আঁটি বেঁধে বাজারে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। চরের প্রতিটি ধাপ যেন শীতের আগাম আনন্দকে বয়ে আনছে।

ভান্তি গ্রামে ঘুরে দেখলে বোঝা যায়, নারী-পুরুষ সবাই এই মৌসুমের মূল চাষ মুলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে।কৃষক  আব্দুল ওহাব, ফারুক হোসেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে চরের মাটিকে সাদা সবজির সঙ্গে পরিচিত করেছেন, তারা বলেন, “বর্ষার শেষে শরৎকাল শুরুতেই বীজ বুনেছি। শীত এখনও দেরি আছে তবুও মুলা তুলতে শুরু করেছি। পাইকারেরা খেত থেকে কিনে নিচ্ছে। প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমে এর চেয়ে বেশি দাম পাওয়া যায় না। তবে এতে কৃষকরা খুশি।

চরের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে মনির হোসেনের খেত দেখা যায়। মাঠে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘বেশির ভাগ কৃষকই পুরো জমির ফলন পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। আমি নিজে ২৪ শতাংশ জমির মুলা ৫৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়েছে। আমাদের চরের মুলা কুমিল্লার নিমসার বাজার হয়ে ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে যাচ্ছে।’

চরের চারপাশের মাঠ জুড়ে সবুজ পাতার মধ্যে সাদা মুলা এক অসাধারণ দৃশ্য । তবে সব জমি সমান ভাগ্যবান নয়। যেসব জায়গায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো ছিল না, সেসব জমিতে সাম্প্রতিক বৃষ্টির পানি জমে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা দ্রুত মুলা তুলতে বলছেন, না হলে নিচের অংশ পচে যাবে। দ্রুত তোলার পর আবারও নতুন বীজ বুনে চাষ চালানো সম্ভব।

আলমগীর হোসেন ও জাকির হোসেন পাইকারি ব্যবসায়ী, তারা বললেন, “আমরা পুরো জমির মুলাখেত চুক্তি কিনেছি। ভান্তির চরে ৪৪ শতাংশ জমির মুলা দেড় লাখ টাকায় কিনছি। দিনাজপুর ও রংপুর থেকে শ্রমিক এনেছি মুলা তুলতে। প্রতিদিন  তাদের  পারিশ্রমিক এক হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে মোট লাভ এখনো বলা সম্ভব নয়। বৃষ্টির কারণে কিছু ক্ষতি হলেও বাজারের দাম ভালো।’

চরের মাটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, মুলা তুলতে গিয়ে নারী-পুরুষ শ্রমিকরা সমানভাবে ব্যস্ত। কেউ খেত থেকে সরাসরি পাইকারের গাড়িতে লোড করছেন, কেউ আঁটি বেঁধে বাজারে পাঠাচ্ছেন। নারী শ্রমিকরা মুলা গোছানো ও বেঁধে রাখার কাজেও অংশ নিচ্ছেন। চরের এই দৃশ্য যেন একটি জীবন্ত ছবি-শ্রম, ব্যস্ততা, উৎসাহ এবং শীতের আগাম আনন্দের এক মিশ্রণ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিচালক শেখ আজিজুর রহমান বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো থাকায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছি। শীতের আগে মুলার সঙ্গে অন্যান্য শাকসবজি চাষও শুরু হয়েছে।’

কৃষক মনির হোসেনের বলেন, ‘চুক্তি থাকলে কিছুটা নিরাপত্তা থাকে, কিন্তু শ্রমিক ও পরিবহন খরচ, বৃষ্টির প্রভাব সব মিলিয়ে লাভের হিসাব এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বাজারের দাম ভালো থাকায় আশা করছি মোট মিলিয়ে লাভবান হব।’

ভান্তির চরের এই আগাম শীতকালীন মুলা শুধু কৃষকের মুখে হাসি এনে দিচ্ছে না, চরের নারী-পুরুষ শ্রমিকদের জন্যও কর্মসংস্থান তৈরি করছে। মুলার সঙ্গে অন্যান্য শাকসবজির চাষও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। ফলে শীতের আগাম এই সময় চরের কৃষকরা লাভবান হচ্ছে, স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়ছে এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় তারা আরও ভালো ফলন আশা করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
হত্যাচেষ্টা মামলায় নওগাঁ-৬ আসনের সাবেক এমপি ওমর ফারুক কারাগারে
নড়াইলে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ
গরু ছাড়াই ঘানি টানা সেই প্রবীণ দম্পতির পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান
দেশে রেমিট্যান্স আয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, জুলাই-অক্টোবর সময়ে প্রবৃদ্ধি ১৪.৪ শতাংশ
ভূমি অফিসকে মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে : ভূমি সচিব
সিরাজগঞ্জ ১০লাখ ৩৯ হাজার ৯৮৩ শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেয়া হবে
৪০ রান কম ছিল : মিরাজ
টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাংকিংয়ে স্থান পেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
রাসায়নিক দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় হাসপাতালসমূহের প্রস্তুতি শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা সমাপ্ত
চট্টগ্রামে জেলা পর্যায়ে ১৬ লাখ ৩২ হাজার শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া হবে-সিভিল সার্জন
১০