হারুন অর রশিদ খান হাসান
সিরাজগঞ্জ, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : সিরাজগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে তাঁতে বোনা গামছার ঐতিহ্য কয়েক শতাব্দীর। বাহারি রঙের ও নানা নকশার গামছা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খ্যাতি অর্জন করেছে। এক সময় এই শিল্প ছিল গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ। সদর, উল্লাপাড়া, কামারখন্দ, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুর উপজেলার গ্রামগুলোতে সকাল থেকে রাত অবধি তাঁতের খট খট শব্দে মুখর থাকত। প্রতিটি পরিবারে পুরুষ ও নারী কারিগররা যুগ যুগ ধরে গামছা বুনে আসছেন।
কিন্তু যুগের পরিবর্তনে এ শিল্প এখন নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। যন্ত্রচালিত তাঁতের বিস্তার, রং-সুতাসহ কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি তাঁতীদের আয় সীমিত করেছে। তাই এ শিল্পে জড়িতরা কোনোভাবে দিন পার করছেন। নিজেদের অস্তিত্ব টিকে রাখার লড়াই তাদের নিত্য দিনের।
তাঁতীরা জানান, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমরা এই শিল্পে অভ্যস্ত। এটি শুধুমাত্র জীবন-জীবিকার মাধ্যম নয় বরং আমাদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী পরিচয়। পঁচিলা, বেলকুচি, এনায়েতপুর, শাহজাদপুর ও সদর এলাকায় গড়ে উঠেছে বৃহৎ গামছার হাট। দূর-দূরান্তের পাইকাররা এখান থেকে গামছা কিনে সারা দেশে পৌঁছে দেয়। সপ্তাহজুড়ে তাঁতীরা নিজেদের তৈরি গামছা এনে এসব হাটে বিক্রি করেন। হাটে লাখ লাখ টাকার লেনদেন হলেও উৎপাদনকারীদের ভাগ খুবই সীমিত।
উল্লাপাড়া উপজেলার পাঁচিলা গ্রামের তাঁতী রফিকুল ইসলাম বলেন, একজন শ্রমিক দিনে ৮-১০টি গামছা বুনলেও পারিশ্রমিক মেলে মাত্র ১২০ টাকা। এতে সংসার চালানো কঠিন। আমরা বিকল্প জানি না, তাই বাধ্য হয়ে এই শিল্পের সঙ্গে আছি।
বেলকুচি হাটের পাইকারী ব্যবসায়ী মামুনুর রহমান ও কামারখন্দের মোহাম্মদ সেলিম জানান, ২০ বছর ধরে আমরা এ হাট থেকে গামছা কিনে সারা দেশে বিক্রি করি। সম্প্রতি প্রতি থান (৪ পিচ) গামছার দাম ৪০০ টাকা হলেও, উৎপাদন খরচ ও শ্রমিক পারিশ্রমিক মিটিয়ে লাভ খুব কম।
তাঁতীরা মনে করছেন, বাজারে রঙ-সুতার দামের মনিটরিং, সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা এবং আধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ে সরকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
আজও জেলায় তাঁতের খট খট শব্দে মুখর গ্রামগুলো প্রমাণ করছে, তাঁতীদের শ্রম ও ঐতিহ্য বাঁচানোর লড়াই এখনও চলমান। তাই তাদের পাশে তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, তাঁত শিল্পে সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জ। জেলার তাঁতীরা নানা প্রতিক’লতার মধ্যদিয়েও এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলে শিল্পটি আবার জৌলুস ফিরে পাবে। বর্তমানে তাঁতের গামছার চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। আমরা চেম্বারের পক্ষ থেকে তাঁতীদের সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। সরকার সহযোগিতা করলে জেলার গামছা শিল্প আবার বেগবান হবে।