আল-আমিন শাহরিয়ার
ভোলা, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : জেলা থেকে একসময় রাজধানী ঢাকা, নোয়াখালী, ফেনী আর লক্ষ্মীপুরের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল ভোলার দৌলতখান উপজেলার শহীদ সিপাহী বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাট।
৩১৬ দশমিক ৯৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের তৎকালীন সময়ের এ মহকুমা শহরটিতে এখন দেড় লাখ মানুষের বসবাস। এখানকার অধিবাসীদের সাথে দেশের বিভিন্ন জেলায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম-ই হচ্ছে নৌপথ। বিংশ শতাব্দীর শেষ নাগাদ এখানকার নদীপথে যোগাযোগে ছিলোনা কোন পন্টুন বা জেটি। হাজারো যাত্রীকে একহাঁটু কাদা আর পানির মধ্য দিয়েই লঞ্চে ওঠা নামা করতে হত।
তথ্য অনুযায়ী, জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ১৯৯৭ সালে ভোলার তৎসময়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান এবং দৌলতখান উপজেলার সাবেক ইউএনও জেএন বিশ্বাস এখানে একটি লঞ্চঘাট ও পন্টুন নির্মাণের পদক্ষেপ নেন। তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বহু চিঠি চালাচালি এবং তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০৫ সালে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহান তখন নৌপরিবহন মন্ত্রীর মাধ্যমে দৌলতখানের লঞ্চঘাটে একটি পন্টুন বরাদ্দ করেন। এরপর ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভোলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মো. বেলায়েত হোসেন এ পন্টুনটির নামকরণ করেন, ভোলার কৃতি সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের নামে।
সরেজমিনে দৌলতখানের ভবানীপুর ইউনিয়নের মেঘনা পাড়ের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, বহু বছর আগে স্থাপিত পন্টুনটি একেবারেই নাজুক ও বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে।
স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রতিদিন এ ঘাট থেকে দু'টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং ঢাকা থেকে দু'টি ছেড়ে আসে। ঢাকা-চরফ্যাশন ও হাতিয়া-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলোও এ ঘাটে নোঙ্গর করে। এ ঘাট থেকে আবার নোয়াখালীর আলেকজান্ডার রুটে আসা যাওয়া করে আরো বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী লঞ্চ। এখানকার ব্যবসা বাণিজ্যের সকল কারবারই হয়ে থাকে এ ঘাট দিয়ে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ওই লঞ্চঘাটের পন্টুনটি আর রক্ষণাবেক্ষণ না করায় মরিচা ধরে বিবর্ণ হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে গার্ডার। যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারছেনা। এমনকি পন্টুনের গায়ে লেখা বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের নামটিও মুছে গেছে। তাই তারা অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতি বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটের পন্টুনটির সংস্কারের দাবি জানান।
এ লঞ্চঘাটে ঢাকার উদ্দেশ্যে আসা লঞ্চযাত্রী আনোয়ার হোসেন, মহিউদ্দিন ও নারগিস বেগমের সাথে কথা হয়।
তারা বলেন, এই ঘাটের পন্টুনটি এখন একটি মরণফাঁদে রুপ নিয়েছে। লঞ্চে উঠতে গিয়ে শিশুসহ বহু নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। এখনো হচ্ছেন।
পন্টুনের বেহাল দশার কারণে অনেক সময় লঞ্চগুলো নদীর পাড়েই ভিড়ছে। ওই ঘাট হতে ঢাকা রুটে চলাচলকৃত "এমভি তাসরিফ" নামক লঞ্চের মালিক হাফিজ ইব্রাহিম জানান, ঘাটের এই পন্টুনটিকে আধুনিকীকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহুবার বলেছি। ঘাটের এই পন্টুনটিকে মেরামতের দাবি জানাই সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সাজু বলেন, আমাদের দাবি কিন্তু বড় কিছু নয়। আমাদের জেলাবাসীর অহঙ্কার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের স্মৃতি ধরে রাখতে এ ঘাটটিকে অতি দ্রুত আধুনিক সাজে সজ্জিত করা এখন সময়ের দাবি। প্রবীন সাংবাদিক গজনবী বলেন, এখানকার একমাত্র পন্টুনটি মেরামত কিম্বা নতুনভাবে স্থাপন করা পুরো দৌলতখানবাসীর একমাত্র দাবি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)'র ভোলা অঞ্চলের বন্দর কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, দৌলতখানের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল পন্টুনটি মেরামত ও যুগোপযোগী করতে ইতিমধ্যেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
ভোলার জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বাসস'কে বলেন, সেখানকার লঞ্চঘাটের পন্টুনটি আধুনিকায়ন করে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের স্মৃতিকে অক্ষুন্ন রাখতে সবরকমের পদক্ষেপ নেয়া হবে।