
ঢাকা, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. মো. নাজমুল ইসলাম এবং মালদ্বীপের ধিভেহি ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবিষয়ক মন্ত্রী আদম নাসির ইব্রাহিমের মধ্যে এক সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাক্ষাৎকালে দুই দেশের সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও একাডেমিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে উভয়ের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে তারা দুই দেশের শতাব্দীব্যাপী ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ সহযোগিতা ও দ্বিপাক্ষিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে মন্ত্রী আদম নাসির ইব্রাহিম বাংলাদেশের সঙ্গে মালদ্বীপের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের কথা স্মরণ করে বলেন, বাংলা ও ধিভেহি ভাষার মধ্যে বহু শব্দ ও উচ্চারণে মিল রয়েছে, যা দুই দেশের ঐতিহাসিক যোগাযোগের প্রতিফলন।
উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলার ‘বটগাছ’ ধিভেহিতে ‘বোদগাছ’ এবং সংখ্যা ‘৬২’ বাংলায় ‘বাসৌট্টি’ হলেও ধিভেহিতে তা ‘বাহোত্তি’।
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘এই ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য আমাদের জনগণের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে। আমরা এই ঐতিহ্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাই।’
এ সময় তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরেন। যার মধ্যে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নবায়ন, নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সাংস্কৃতিক অধ্যয়নে বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের অংশগ্রহণ, স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও একাডেমিক বিনিময়, উপকূলীয় ঐতিহ্য, সামুদ্রিক প্রত্নতত্ত্ব ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে যৌথ গবেষণা এবং মালদ্বীপে প্রকাশিত ধিভেহি ভাষার বই অনুবাদ ও প্রচার উল্লেখযোগ্য।
এ সময় হাইকমিশনার ড. মো. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব উদ্যোগে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধনই কূটনৈতিক সম্পর্কের সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি। আমরা সেই বন্ধনকে ‘পাওয়ার অব বন্ডিং’-এর মাধ্যমে কাজে লাগাতে চাই।
হাইকমিশনার প্রস্তাব করেন, মালদ্বীপে যেসব সাহিত্য ও গবেষণায় বাংলাদেশের উল্লেখ রয়েছে, সেগুলো বাংলায় অনুবাদ করলে, তা দুই দেশের মানুষকে আরও কাছাকাছি আনবে। এছাড়া যৌথ সেমিনার, শিল্প প্রদর্শনী, একাডেমিক বিনিময় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি বাড়ানোর ওপর তিনি জোর দেন।
বৈঠক শেষে উভয়পক্ষ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের বিষয়ে সম্মত হয়।
এ সময় হাইকমিশনার নাজমুল ইসলাম মালদ্বীপ মন্ত্রীকে তার রচিত ‘পাওয়ার অব বন্ডিং’ শীর্ষক বই উপহার দেন।
বইটিতে তিনি সাংস্কৃতিক কূটনীতি, জনকূটনীতি ও সফট পাওয়ারের ধারণাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। জানা গেছে, বইটি ইতোমধ্যে হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত রয়েছে।