পটুয়াখালীতে আমন ধানে পোকার আক্রমণ, ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষকেরা 

বাসস
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৪
আমন ধানে পোকার আক্রমণ, ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষকেরা । ছবি : বাসস

এনামুল হক এনা

পটুয়াখালী, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আমন ধানে অস্বাভাবিক হারে পোকার আক্রমণ দেখা দেওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন। জেলার পটুয়াখালী সদর, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ, দুমকি, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল ও রাঙ্গাবালি উপজেলাজুড়ে বিস্তীর্ণ সবুজ ধান ক্ষেতের পাতা হলুদ হয়ে ঝলসে যাওয়ার ঘটনায় কৃষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সরেজমিনে মাঠপর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, বহু এলাকায় পাতা মোড়ানো পোকা এবং ঝলসানো পোকা ধানের গাছের কচি অংশ নষ্ট করছে, ফলে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে বলে জানান কৃষকেরা।

দুমকি উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের জলিশা, বাহেরচর, মুরাদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মুরাদিয়া, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের রাজাখালী, চরবয়েড়া, লেবুখালী ইউনিয়নের আঠারগাছিয়া এবং পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আলগি ও বাঁশবুনিয়া গ্রামজুড়ে আক্রান্ত জমির সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিনই। 

এসব এলাকার অধিকাংশ কৃষকই জানান, গত সপ্তাহ থেকেই পাতা মোড়ানো ও গাছ শুকিয়ে ফেলার পোকা ধানের গাছে আক্রমণ শুরু করেছে। বিশেষত উঁচু জমির ফসল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন।

জলিশা গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন বাসসকে বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে তার জমির একটি অংশ ঝলসে গেছে। তিনি বলেন, ‘পাতা আগে হলুদ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে, পরে শিষ নষ্ট হচ্ছে। ওষুধ দিয়েছি, কিন্তু তেমন কোনো ফল পাচ্ছি না।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে মৌসুমের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে।

দক্ষিণ মুরাদিয়ার কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, বিভিন্ন দোকান থেকে তিন ধরনের ওষুধ কিনে ছিটিয়েছি। কিন্তু উল্টো পাতা আরও শুকিয়ে যাচ্ছে। কোনটা ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়ে সঠিক পরামর্শ পাচ্ছি না। তিনি জানান, বাজার থেকে পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ নেওয়ার ফলে অনেকেই ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

রাজাখালী গ্রামের কৃষক আমির হোসেন জানান, উঁচু জমির ধানের গাছ আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। গাছের মাথা শুকিয়ে যাচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ফলন কমে যাবে। ধানের শিষে পোকা ঢুকে পড়লে আর কোনোভাবেই ফসল রক্ষা করা যাবে না।

বাউফল উপজেলার কনকদিয়া এলাকার কৃষক আবদুস সত্তার মিয়া, মালেক মিয়া ও ফারুক মিয়া জানান, এলাকাজুড়ে প্রায় সব ক্ষেতেই পোকার আক্রমণ দেখা গেছে। আবদুস সত্তার বলেন, নিয়মিত ওষুধ দিচ্ছি, তাও পোকা কমছে না। এভাবে চলতে থাকলে ধান ঘরে তোলা কঠিন হবে।

মালেক মিয়া অভিযোগ করে বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে এলে সঠিক পরামর্শ পাওয়া যেত। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, আক্রান্ত গাছের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।

মির্জাগঞ্জ উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, ফসল পাকতে আর বেশি সময় নেই। এর মধ্যে যদি পোকা আরও ছড়ায়, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। দ্রুত সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।

চরবয়েড়া গ্রামের কৃষক শাহেদ আলম বলেন, আমরা যারা প্রতিদিন মাঠে থাকি, তাই আমরা সবচেয়ে আগে সমস্যাটা বুঝতে পারি। কিন্তু এমন সমস্যার সময়ে মাঠপর্যায়ের সহায়তা তেমন একটা পাই না। পোকা এখনো নিয়ন্ত্রণে না এলে পুরো মৌসুমই ঝুঁকিতে পড়বে।

এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন ও দুমকি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বাসসকে বলেন, আমন ধানে পোকার আক্রমণের বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তারা বলেন, ‘মৌসুমি আবহাওয়ার পরিবর্তন, উচ্চ আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার ওঠানামার কারণে পোকা দেখা দিতে পারে। তবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত তদারকি করছেন।’

তারা আরও বলেন, আক্রান্ত গাছ চিহ্নিত হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করা, আক্রান্ত পাতা হাতে না ধরা এবং আক্রান্ত গাছ পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি। কৃষকদের যেকোনো প্রয়োজনে উপজেলা কৃষি দপ্তরে যোগাযোগের আহ্বান জানান তারা।

স্থানীয় কৃষকেরা দ্রুত মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে সক্রিয় এবং কীটনাশক ও পরামর্শে বিশেষ সহায়তা প্রদানের দাবি করেছেন। তারা বলেন, এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হলে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় আমন মৌসুম মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। 


 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন- কার্যাবলী বিষয়ে যা বলা হয়েছে
সাতক্ষীরা সীমান্তে ভারতীয় মালামাল জব্দ
কর্মস্থলে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন : প্রধান উপদেষ্টা
লকডাউনের প্রতিবাদে বগুড়ায় এনসিপির অবস্থান
আওয়ামী লীগের নাশকতা ঠেকাতে ফেনীতে এনসিপির লাঠি মিছিল
ছয়টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসি’র সংলাপ অনুষ্ঠিত
পুঁজিবাজারে দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিএসইসি-ডিএসই’র যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মশালা
ভিক্টর পরিবহনে অগ্নিসংযোগ : আওয়ামী লীগ নেতা শামীম রিমান্ডে
এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের বাণিজ্য রূপান্তরে ডব্লিউটিও’র দৃঢ় সমর্থন
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন অঙ্গীকারনামা অনুসারে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে
১০