বাসস
  ২৩ মার্চ ২০২৩, ১৩:০৩

প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে উচ্ছ্বসিত পাহাড়ের দরিদ্র মানুষ

॥ মনসুর আহম্মেদ ॥
রাঙ্গামাটি, ২৩ মার্চ, ২০২৩ (বাসস)ঃ পাহাড়ের দুূর্গম অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত হত দরিদ্র মানুষ  প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে এখন উচ্ছ্বসিত। এক সময় জরাজীর্র্ণ ঘরে বসবাসকারী নুন আনতে পানতা ফুরানো মানুষগুলো বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় পেয়েছেন নতুন পাকা বাড়ি। এযেন তাদের কাছে অনেকটাই স্বপ্নের মতো। এখন তারা নিজ ঘরে বসেই পাহাড়ী তাতঁ বুনছে, কেউ বাড়ির আঙিনায় গড়ে তুলেছে সবজি বাগান।
পাহাড়ী এলাকা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। দেশের অন্যান্য সমতল জেলার চেয়ে এ পার্বত্য জেলায় দুর্গমতা অনেক বেশী। পার্বত্য এলাকার হত দরিদ্র মানুষের জন্য ঘর তৈরি করা একটি নতুন চ্যালেঞ্জ থাকলেও এ চ্যালেঞ্জকে জয় করে পাহাড়ের হত দরিদ্র অসহায় মানুষগুলো প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নতুন ঘর পেয়ে যেন আনন্দে আত্মহারা।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নতুন ঘর পাওয়া মালা চাকমা তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে(বাসস) বলেন, আগে কোনরকম কষ্ট করে ভাঙ্গা ঘরে থাকতাম, খুব কষ্ট করে চলতে হতো। তখন সৃষ্টিকর্তাকে বলতাম যদি আমার একটা ভালো ঘর থাকতো সৃষ্টিকর্তা আমার আশা পূরণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ঘর দিয়ে আমাদের সে আশা পূরণ করেছেন। আমি ঘর পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়েছি। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দোয়া করি, যেন তিনি আরো অনেক বছর বেচেঁ থাকেন এবং প্রধানমন্ত্রী ভালো থাকুন।
শুধু মালা চাকমা নয় প্রধানমন্ত্রীর নতুন ঘর পাওয়া অপর্ণা চাকমাসহ আরো অনেকেই রাঙ্গামাটির প্রত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে খুশি। অনেকে নিজের ঘরের আঙ্গিনায় বসেই এখন  কোমড় তাত, সেলাই কাজ করতে পারছেন। উপকারভোগীরা জানান, আগে জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করার ঘরে বৃষ্টির পানি ঢুকতো, এখন আর বৃষ্টির সময় তাদের ঘরে আর পানি আসবে না। এজন্য সকলেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে।
বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অমর চাকমা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে(বাসস) বলেন, এ দুূর্গম পাহাড়ী এলাকায় হত দরিদ্র সাধারণ মানুষ পাকা বাড়ি পাবে এটা ছিল কল্পনার মতো। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে এখানে পাহাড়ের দুর্গম প্রত্যন্ত এলাকায় এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারে নতুন ঘর দেখা যায়। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে(বাসস) বলেন, পার্বত্য দুর্গম এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর ঘর তৈরি করা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল ।কারণ এখানে ঘর করাটা সমতলের মতো এত সহজ ছিলনা। তারপরেও আমরা সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে পাহাড়ের দুর্গমতাকে জয় করে এবং সঠিক মান বজায় রেখে সকলকে মানসম্মত প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘরগুলো হস্তান্তর করতে পেরেছি।
চতুর্থ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের নতুন ঘরসহ রাঙ্গামাটি জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১হাজার ৯১৬টি অসহায় পরিবারের মাঝে ঘর প্রদান করা হয়েছে এবং আরো কিছু কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) জানান, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ৫৩৪টি।
তার মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে এক হাজার ৯১৬টি পরিবারের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নতুন ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রায় ৪০ কোটি ৫৭ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে এসব গৃহ নির্মাণ করা হয়।
এর মধ্যে রাঙ্গামাটি ১০টি উপজেলার মধ্যে  সদর উপজেলায় ৫৫০টি, কাপ্তাই উপজেলায় ৯৯টি, বিলাইছড়িতে ৩৭টি, জুরাছড়ি ৮০টি, কাউখালী ১৫০টি, বরকল ১৭৯টি, লংগদু ২৮৮টি, রাজস্থলী ২৫৩টি, নানিয়ারচর ১০০টি  এবং বাঘাইছড়ি উপজেলায় ২৪০টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া এ প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বাসসকে আরো জানান, রাঙ্গামাটির প্রত্যন্ত ও দুর্গম উপজেলায় যেসব পরিবার গৃহহীন ছিল, তাদের ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। হত দরিদ্রদের জন্য ঘর নির্মাণ কাজ গভীরভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শুধু আশ্রয় নয়, তাদের জীবন মানের উন্নয়নে খাদ্য, কৃষি, স্যানিটেশন, নিরাপদ পানিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণে সমতলের মতো পাহাড়ের দুর্গম এলাকার হত দরিদ্র মানুষ নতুন ঘর পেয়ে অত্যন্ত খুশী।প্রধানমন্ত্রীর জনকল্যাণমুখী এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পাহাড়ের মানুষ এবং ভবিষ্যতেও  পাহাড়ে সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা সকলের।