বাসস
  ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৬:৫২

বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামালের প্রতি ফুলবানুর ভালোবাসা

॥ মো. শফিকুল ইসলাম ॥
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২৬ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অতুলনীয় সাহস ও আত্মত্যাগের নিদর্শন স্থাপনকারী হিসেবে দেশে ৭ জনকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দেয়া হয়। খেতাবপ্রাপ্ত ওই ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে একজন রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায়। যার নাম বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল। যার সমাধি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউপির দরুইন গ্রামে। 
বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামালের সমাধি দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন আর রক্ষণাবেক্ষণ করছেন স্থানীয় ফুলবানু নামে এক নারী। এর জন্য তেমন কোনো আর্থিক সহযোগিতা পান না তিনি। ফুলবানু উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামের মৃত মুতালিব মিয়ার স্ত্রী। 
দেশ স্বাধীন হওয়ার ২৬ বছর পর ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ রাইফেলসের কুমিল্লা সেক্টরের পক্ষ থেকে বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের কবরের জায়গাটিতে মাটি ফেলে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির কাজ শুরু করে। এসময় পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় ফুলবানু ও তার স্বামী মুতালিব মিয়া রাইফেলস সদস্যদের সঙ্গে থেকে এর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু করেন। স্বামী-স্ত্রীর কাজে মুগ্ধ হয়ে সেই সময় রাইফেলস থেকে তাদেরকে ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়। ফুলবানুর স্বামী মুতালিব মিয়া ২০০৩ সালে মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর ফুলবানু গত ১৯ বছর একাই পরিস্কার পরিচ্ছন্নসহ রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন।
ফুলবানু জানান, তার তিন ছেলে, ৩ মেয়ে রয়েছে। সন্তানের মতোই আমি মোস্তফা কামালকে ভালোবাসি। আমি ও আমার স্বামী এই কবর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতাম। স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি একাই এই কাজটি করে আসছি।  
তিনি আরও বলেন, মোস্তফা কামালের মা-বাবা ও বোন এখানে মাঝে-মাঝে এখানে আসতেন। একদিন তার মা বললেন, তোমার তিন ছেলের সঙ্গে আরো একটি ছেলে দিয়ে গেলাম। তার মা-বাবা মারা যাওয়ার পর আর কেউ এখানে আসেননি।
ফুলবানু বলেন, আমি আর কিছু চাই না। কবর এলাকা পরিষ্কার করে ফুলগাছ রোপণ করি। কিন্তু দেখা যায় সেই গাছগুলো চুরি করে নিয়ে যান। আমার একটাই দাবি সমাধির চারপাশে বাউন্ডারি দেয়াল দেয়া হোক। 
স্থানীয় মোগড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন বলেন, ফুলবানু নি:স্বার্থভাবে দীর্ঘ বছর ধরে এই সমাধির পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে। তার বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। 
এই ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমা বলেন, আমরা সৌভাগ্যবান ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে একজন এই আখাউড়ায় সমাহিত। সমাধির রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত ফুলবানুর প্রতি প্রশাসনের সু-দৃষ্টি থাকবে।