বাসস
  ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৩:৫৬

নওগাঁ’র সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা তছলিম উদ্দিন এখন স্বাবলম্বী

নওগাঁ, ২৮ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : জেলার সাপাহারে কৃষি খামার গড়ে তুলে তছলিম উদ্দীন নামের এক কৃষি উদ্যোক্তা এখন লাভের মুখ দেখছেন। সেইসাথে নিজের মুখেও হাসি ফুটিয়েছেন। উচ্চ শিক্ষিত তছলিম উদ্দিন স্থানীয় একজন সাংবাদিক। সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করে ৯০এর দশকে চাকুরীর পিছনে হন্যে হয়ে  খুঁজে ফিরে অনেক অর্থ খুইয়ে কোন চাকুরী লাভে ব্যর্থ তছলিম উদ্দিন এখন নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন পাশাপাশি তাঁর কৃষি ফার্মে চাকুরী দিয়েছেন  ১৪জন শ্রমিককে।  কর্মসংস্থানের পথ দেখিয়ে ১৪টি পরিবারে তিন বেলা অন্ন বস্ত্রের যোগান দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পেরে নিজকে ধন্য মনে করছেন।
বর্তমানে তার বরেন্দ্র বহুমূখী এ্যাগ্রো ফার্মে  বিদেশী হাইব্রিড জাতের দুগ্ধবতী গাভী ও বাচ্চা মিলে প্রায় অর্ধশত গরু রয়েছে। প্রতি দিন গড়ে সে ওই খামার হতে ১৫০লিটার দুধ সংগ্রহ করে থাকেন। এছাড়া তার খামারের ওই দুধ দিয়ে সে সাপাহার উপজেলা সদরের প্রাণ কেন্দ্র জিরো পয়েন্টে “তিজারাহ সুইট্স” নামের একটি মিষ্টির দোকানচালু করেছেন। তার দোকানে নিজস্ব খামারে প্রতিপালিত গাভীর খাঁটি  দুধের ছানার উন্নত মানের মিষ্টি বিক্রি করছেন। এতে  সাপাহার উপজেলা সদরসহ পাশর্^বর্তী পতœীতলা ও পোরশা উপজেলায় তার দোকানের মিষ্টির বেশ সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সকাল হতে রাত ১০টা পর্যন্ত তার দোকানে ক্রেতাদের ভিড় করে মিষ্টি কিনতে দেখা যায়। 
কৃষি উদ্যোক্তা তছলিম উদ্দীন বলেন যে, এক সময় তিনি সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন চাকুরীর পিছনে ছুটেছেন, পত্রিকায় কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখলেই ছুটে যেতেন ওই প্রতিষ্ঠানে। এর জন্য তিনি অনেক অর্থও খুইয়েছেন, শেষে চাকুরী না পেয়ে নিরুপায় হয়ে হতাশা গ্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছিলেন। হঠাৎ আমার অত্মীয়ের সাথে এ কৃষি খামারের বিষয়ে কথা বলি। এর পর তাদের দু’জনের পরিকল্পনায় সাপাহার উপজেলার বাসুলডাঙ্গা এলাকায় ৩০বিঘা জমির উপর একটি আমবাগান, মাঝখানে একটি পুকুর ও একটি ডেইরী এবং হৃষ্টপুষ্ট করণ খামার গড়ে তোলেন। সাপাহার উপজেলা ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্র এলাকা হওয়ায় খামারটির নাম করণ করা হয় বরেন্দ্র বহুমূখী এ্যাগ্রো ফার্ম। 
খামার সেড প্রতিস্থাপনের পর প্রথমে তিনি সেখানে ২৫লক্ষ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে ১৫টি ফ্রিজিয়ান হাই ব্রিড জাতের দুগ্ধবতী গাভী ক্রয় করেন। এর পর সে তার খামার হতে দুধ বিক্রির ব্যবস্থা চালু করেন। সাপাহারে কোন দুধ ক্রয়ের সেন্টার না থাকায় তাকে বিভিন্ন ব্যক্তিদের বাসায় বাসায়  গিয়ে দুধ বিক্রি করতে হতো। দিন দিন তার খামারে দুধের পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় একসময় তিনি অতিরিক্ত দুধ নিয়ে বিপাকে পড়ে যান । কি করা যায় আবারো নতুন পরিকল্পনা খুঁজতে থাকেন। এর পর তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের উৎপাদিত দুধ দিয়ে সাপাহারবাসীকে খাঁটি দই, মিষ্টি ও ঘি খাওয়াবেন বলে এক পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী  তিজারা সুইট্স নামের একটি দিনাজপুর শহরে। বর্তমানে তার বরেন্দ্র বহুমূখী এ্যাগ্রো ফার্ম হতে তিজারা সুইট্স পর্যন্ত সর্বমোট ১৪জন কর্মচারী কাজ করে চলেছেন। তাঁর এ দোকানে ৩০ থেকে ৪০ প্রকারের মিষ্টি তৈরী ও বিক্রি করে থাকেন। প্রতিদিন বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। দুধের মুল্য এবংে কারিগরদের খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিনি ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা নীট মুনাফা করেন বলে তিনি জানান। 
কৃষি উদ্যোক্তা তছলিম উদ্দীনের পরামর্শ ইচ্ছে থাকলে উপায় হয় তিনি নিজেই তার প্রমাণ। শিক্ষিত বেকার যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন যে, সোনার হরিণ চাকুরীর পিছনে না ছুটে বর্তমান সরকার শিক্ষিত যুবকদের মাঝে নানা মুখী কৃষি ঋণ প্রদান করছেন। সে ঋণ গ্রহণ করে মেধা ও পুঁজি খাটিয়ে ডেইরী, হৃষ্ট পুষ্ট করণ, পোল্ট্রি, ব্লাকব্যঙ্গল ছাগল, ভেঁড়াসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি খামার করে নিজের কর্মসংস্থানসহ অন্যদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব।  
নওগাঁ’র কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন সাপাহারের ঐ কৃষি খামারের কথা তিনি শুনেছেন। তছলিম উদ্দিন খামার গড়ে তুলে সাফল্য অর্জন করেছেন। বরেন্দ্র অঞ্চলে এ সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগ এ ব্যপারে সকল পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে।