/রোস্তম আলী মণ্ডল/
দিনাজপুর, ৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বিজয়া দশমীর পর দিন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তরুণ-তরুণীদের জীবনসঙ্গী খোঁজার জন্য দিনাজপুরের বীরগঞ্জে স্থানীয়রা আয়োজন করেন বউ মেলার। শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে এ ঐতিহ্য। শুক্রবার উপজেলার গোপালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এ মেলা যেন এক উৎসবে পরিণত হয়।
স্থানীয়দের কাছে এটি মিলন মেলা নামেও পরিচিত।
দিনাজপুর জেলা আদিবাসী ফোরামের সভাপতি গণেশ সরেন জানান, বিকেল সাড়ে ৩ টা থেকে মেলা শুরু হয়। স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে শিশু ও বৃদ্ধদের আগমনে ব্যাপক সমাগম ঘটে মেলায়। বিপুল সংখ্যক লোকজনের উপস্থিতিতে মেলা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
বীরগঞ্জ উপজেলার আদিবাসী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জুলহাস মার্ডী বলেন, মেলায় আদিবাসী তরুণ-তরুণীরা জীবনসঙ্গী খুঁজতে অপরূপ সাজে দূর-দূরান্ত থেকে মেলায় হাজির হন। পরস্পরের মধ্যে পছন্দ হলেই বেজে উঠবে সানাইয়ের সুর। মেলায় আগতদের মধ্যে প্রথমে আলাপচারিতা, তারপর অভিভাবকদের সু সংবাদ জানানো হয়। শেষে ধুমধাম করে হয় বিয়ের আয়োজন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি সনাতন ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা উপস্থিত হন মেলায়।
উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়ন ও মোহনপুর ইউনিয়ন এবং বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির যৌথ আয়োজনে এ মিলন মেলায় আদিবাসীদের নাচ-গানের আসর ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির উপজেলার সভাপতি জোসেফ হেমরমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মো. মনজুরুল ইসলাম মন্জু।
বিষেশ অতিথির বক্তব্য দেন নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুর রহমান আনিস, মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহিনুর রহমান চৌধুরী শাহিন, দিনাজপুর কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক রবি মার্ডি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যান ফ্রন্টের আহ্বায়ক মনোজ কুমার রায় প্রমুখ।
এ সময় আদিবাসী ছেলে-মেয়েরা ঢোল, মন্দিরা, কাঁসর, কাড়া, হারমোনিয়ামের তালে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে অতিথিদের স্বাগতম জানায়।
ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস জানান, আগে মেলায় তরুণ-তরুণীরা পছন্দের মানুষ খুঁজে পেলে পরিবারের কাছে জানাতেন। পরের বছর মেলায় তাদের নাম-পরিচয় তুলে ধরে বিয়ের আয়োজন করা হতো।
এখনো অনেকেই মেলায় ছেলে-মেয়েরা জীবনসঙ্গী পছন্দ হলে বিয়ে দিয়ে দেন। তবে আগের মতো বিয়ের ব্যাপারগুলো এখন আর নেই। এরপরও ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন মেলার আয়োজকেরা।
আদিবাসী নেতা জোসেফ হেমরম জানান, মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। দিনাজপুর ছাড়াও পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলা থেকেও অনেক মানুষ মেলায় আসেন। বউ মেলা উপলক্ষে বিদ্যালয়ের মাঠে নানা পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। বিদ্যালয়ের মাঠসহ পুরো গোলাপগঞ্জ বাজার এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর হাসান জানান, আদিবাসী সম্প্রদায়ের বউ মেলার উৎসব একটি ব্যতিক্রম-ধর্মী মেলা। মেলায় যাতে কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।