বাসস
  ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:০৯

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আইন সংস্কার ও যথাযথ প্রয়োগের আহ্বান 

ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : নারী ও কন্যার প্রতি দিনে-দিনে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলা সহিংসতা প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনের যুগোপযোগী সংস্কার ও কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‌‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 

সংবাদ-সম্মেলনে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন- সংগঠনের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা এ সময় বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে নারী-বান্ধব অনেক আইন থাকলেও বাস্তবে তার সঠিক প্রয়োগ নেই। এই পরিস্থিতিতে পারিবারিক আইনগুলোর সংস্কারের পাশাপাশি বিচার ব্যবস্থায় সংস্কারসহ জেন্ডার জাস্টিস সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে, এ সকল বিষয়ে রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি, প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে সাক্ষী সুরক্ষা আইন সংস্কার হওয়া জরুরি।’

লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতার অপ্রকাশিত ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনার চেয়ে অনেক বেশি। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ কেবল নারী আন্দোলনের কাজ নয়। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন।’
 
সম্মেলনে নারী ও কন্যার প্রতি সংঘটিত সহিংসতার একটি পরিসংখ্যানগত বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে নারীদের রয়েছে উল্লেখ্যযোগ্য দৃশ্যমান ভূমিকা। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সরকার, উন্নয়ন সংগঠন, নারী ও মানবাধিকার সংগঠন এবং নারী আন্দোলন বহুমাত্রিক কাজ করছে কিন্ত তবুও নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতাতো কমছেই না, বরং বাড়ছে এর মাত্রা এবং ধরণ।

বৈষম্যমূলক সামাজিক প্রথা, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ক্ষমতার দাপট নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে এবং এর ফলে নারী উন্নয়ন তথা দেশের উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে।

পরিসংখ্যানগত এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ ধরনের অসঙ্গতি ও অসমতার মূল জায়গাগুলোতে পরিবর্তন নিয়ে না আসলে লিঙ্গের সমতা এবং নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। নারীরাও দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য নির্যাতন আর সহিংতার চক্র থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না এবং এর ফলে ব্যহত হতে থাকবে রাষ্ট্রর উন্নয়ন।
এসব ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনা করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কিছু সুপারিশ প্রণয়ন করেছে।

এর মধ্যে আছে পরিবারের সব ক্ষেত্রে পুত্র ও কন্যার সম-অধিকার, বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন, নারীর জন্য ক্ষতিকর প্রথা (বাল্যবিবাহ, যৌতুক, পারিবারিক সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত সালিশী কার্যক্রম, বহুবিবাহ) বন্ধ, ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি সংবেদনশীলতা এবং তার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি, চিকিৎসাসহ ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিতিকরণ, নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া নিষিদ্ধকরণ এবং অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিতকরণ।

এর পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনসমূহের বাস্তবায়ন, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে এর বিরুদ্ধে শূন্য সহিংসতার নীতি গ্রহণ, নির্যাতন প্রতিরোধে তরুণসমাজকে সম্পৃক্তকরণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীবিদ্বেষী প্রচারণা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, জাতিসংঘের সিডও সনদের অনুচ্ছেদ-২ ও ১৬(১) (গ) এর উপর হতে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে এই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক নারী ও কন্যা নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’।

‘পারিবারিক আইনে সমতা আনি, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করি’-এই স্লোগান সামনে রেখে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আন্তর্জাতিক নারী ও কন্যা নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন করছে। এই পক্ষ উপলক্ষে এবারের জাতিসংঘের আহ্বান হচ্ছে- ‘সচেতনতা বৃদ্ধি করো, নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূল করো, সমাজ ও রাষ্ট্রকে দায়বদ্ধ করো।’