বাসস
  ১২ আগস্ট ২০২৪, ১৫:০৯

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে বিমুখ করবেন না প্রধান বিচারপতি : এটর্নি জেনারেল

ঢাকা, ১২ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস) : এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে বিমুখ করবেন না নবনিযুক্ত  প্রধান বিচারপতি।
নব নিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে আজ আপিল বিভাগে দেয়া সংবর্ধনায় এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আপিল বিভাগের ১নং এজলাস কক্ষে এ সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবীগণ ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতিসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দ্বিতীয় মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত এক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি আপনি। আপনাকে রাষ্ট্রপতিই শুধু পছন্দ করে নিয়োগ দেননি, আপনার নিয়োগের পেছনে রয়েছে এদেশের শত শত ছাত্রের বুকের তাজা রক্তে ভেজা রাজপথের কালজয়ী অমর কাব্যের এক বীরত্ব গাঁথা উপাখ্যান।  পৃথিবীর ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল। এটর্নি জেনারেল বলেন, গোটা দেশবাসীর মতো আমিও আশা করি আপনি (প্রধান বিচারপতি) তাদের বিমুখ করবেন না।
এটর্নি জেনারেল বলেন, বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো গুম হওয়া মানুষের আত্মা, অসংখ্য মানুষের বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হওয়ার বেদনা, অগণিত মানুষের নির্যাতন-নীপিড়নের গল্প, অনেক মৃত মানুষের মামলায় আসামি হওয়ার অভিশাপ ও অনেক পরিবারের নিঃস্ব হওয়ার হাহাকার থেকে উৎসারিত প্রতিবাদের ভাষা থেকে প্রতিরোধে রূপ নেয়ার অন্য অবয়ব আজকের বাংলাদেশ। এই দেশকে, এই দেশের সংবিধানকে, এ দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার্থে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে আপনার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবকত্ব প্রকাশ পাক, এটা আবু সাঈদ-মুগ্ধ-ফারাজসহ শত শহীদের প্রত্যাশা ছিল, তাদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্তর্নিহিত কারণ ছিল। আশা করি, আপনার নেতৃত্বে সবার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
তিনি আরও বলেন, গোটা জাতি প্রত্যাশা করে, বিচার বিভাগ সিন্ডিকেট মুক্ত হোক। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের ভেতর শুদ্ধি অভিযান করে সব ধরনের দুর্নীতি নির্মূল করার প্রত্যাশা রাখছি।  
গত দেড় দশকের কথা উল্লেখ করে এটর্নি জেনারেল বলেন, কারাগার, ব্যবসা পাড়া, এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যে, সরকারি দলের সংশ্লিষ্ঠতা থাকলে বিচাররকদের নিকট থেকে আনুকূল্য পাওয়া যায়। এটা আর ধারণার পর্যায়ে নেই, এটি আজ বিচার বিভাগ ধ্বংসের এক নির্মম বাস্তবতা। দুর্নীতির প্রচলিত ধারণায় অর্থনৈতিক লেনদেনকে বুঝালেও, বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি ডিনামাইটের চেয়েও ধ্বংসাত্মক, এটম বোমার চেয়েও ভয়াবহ, ক্যান্সারের চেয়েও মরণঘাতী।  
তিনি বলেন, দেশ আজ গণতন্ত্রহীন, মানুষ অধিকারহীন, গণমাধ্যমের কন্ঠরুদ্ধ। ওইসব মরণঘাতী বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতির কারণে এই অঙ্গণে মেধাবী আইনজীবীরা অনেকেই শুরুতেই ঝরে যায়, ফুটে ওঠে দুবৃত্তায়িত রাজনীতির কিছু বিবেকহীন আইনজীবী- যার ফলে ভালো আইনজীবী তৈরি হচ্ছে না।
ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে গত ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেন। তারপর আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গতকাল শপথ গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন  বঙ্গভবনে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে ১০ আগষ্ট নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এ বিষয়ে ওই দিনই  প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে দেয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের বিচারক  বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা ও সপ্রিম কোর্টের প্রয়াত জ্যেষ্ঠ বরেণ্য আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ ও প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদের ছেলে। সৈয়দ রেফাত আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ডিগ্রী অর্জন করেন। পরে যুক্তরাজ্য থেকে বিএ ও এমএ ডিগ্রী এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৫৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর জন্ম  সৈয়দ রেফাত আহমেদের। তিনি ১৯৮৪ সালে জেলা আদালতে, ১৯৮৬ সালে হাইকোর্ট ও ২০০২ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হন।
২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পান। দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হন।  তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, ভারত, পাকিস্তান, আরব আমিরাত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালসহ পৃথিবীর বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন।