বাসস
  ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪১
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে জিয়া

ঢাকা, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্তর্রর্তী সরকারের ১০০ দিনে স্থানীয় ও প্রবাসী উভয় ধরনের ভ্রমণকারীদের জন্য স্বপ্নের একটি নতুন অধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংস্কারের এক নতুন রূপ প্রত্যক্ষ করেছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির নীরব নায়ক প্রবাসীদের সেবা প্রদানের ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে গৃহীত এসব উদ্যোগ বিমানবন্দরের সুবিধা, যাত্রীদের সুবিধা ও সামগ্রিক পরিষেবার একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচত হবে।

প্রবাসী লাউঞ্জ:

সবচেয়ে আন্তরিক উদ্যোগগুলোর মধ্যে একটি হলো প্রবাসী লাউঞ্জ চালু করা। জিয়া বিমানবন্দরে
একটি নিবেদিত স্থান চালু করার লক্ষ্য হচ্ছে আগত ও বহির্মুখী অভিবাসী শ্রমিকদের আরামদায়ক ও সম্মানজনক পরিষেবা প্রদান করা।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস আনুষ্ঠানিকভাবে এটির উদ্বোধন করেছেন। লাউঞ্জে
যাত্রীদের জন্য বিশ্রামের জায়গা, ভর্তুকি মূল্যে খাবার সুবিধা এবং উন্নত ভ্রমণ সংক্রান্ত সহায়তা প্রদান করা হয়।

লাউঞ্জের উদ্বোধন করে অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন যে, সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের অবদানকে সম্মান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি আরো কিছু উদ্যোগ গ্রহনের ওপর জোর দেন। যেমন প্রবাসীদের জন্য ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন,
অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য পরিকল্পিত পদক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো এবং ভ্রমণ সহজ করার সুবিধা। অভিবাসী শ্রমিক ও
বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বিমানবন্দরের মাল্টিলেভেল কার পার্কিং এলাকার দ্বিতীয় তলায় প্রশন্ত ও আরামদায়ক ওয়েটিং লাউঞ্জেরও উদ্বোধন করেন, যা প্রবাসীদের ও তাদের পরিবারের সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল প্রবাসী কর্মী ও তাদের সঙ্গী বিশেষ করে যারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসেন এবং যারা প্রায়ই তাদের নির্ধারিত ফ্লাইটের সময়ের আগে বিমানবন্দরে পৌঁছেন, তাদের জন্য আনুসঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া।

নতুন ওয়েটিং লাউঞ্জে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ডেডিকেটেড ওয়েটিং এরিয়া, শিশু যত্ন কক্ষ, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের জায়গা এবং সুলভ মূল্যের ক্যাফেটেরিয়।

প্রবাসী কল্যাণ উন্নত করা:

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের সকল কর্মচারীকে সম্মানিত প্রবাসী কর্মীদের সর্বোচ্চ সম্মান ও আন্তরিকতার সাথে সেবা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে।

কর্মীদের প্রবাসীদের 'স্যার' বলে সম্বোধন করতে এবং সবার জন্য ঝামেলামুক্ত পরিষেবা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ  (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মনজুর কবির ভূঁইয়া বলেছেন, ৪০ টিরও বেশি এয়ারলাইনস, সরকারি মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি
সংস্থা এই রূপান্তরের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, যাত্রীদের, বিশেষ করে প্রবাসীদের জন্য সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে এখনো  কিছু কাজ
করা বাকি রয়েছে।

এক ঘণ্টার মধ্যে লাগেজ ডেলিভারি:

জিয়া বিমান বন্দরের গৃহীত নতুন ব্যবস্থায় ১৫ থেকে ৫৫ মিনিটের মধ্যে ৮৮ শতাংশের বেশি লাগেজ ডেলিভারি নিশ্চিত করা হয়েছে।  ফ্লাইটের
আগমনের ১৮ মিনিটের মধ্যে কনভেয়ার বেল্টে
লাগেজ উপস্থিত হচ্ছে। ভ্রমণকারীদের দীর্ঘ
দিনের সমস্যা অপেক্ষার সময় নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। 

জিয়া বিমান বন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, 'যাত্রীরা যাতে 
যুক্তিসঙ্গত সময়সীমার মধ্যে তাদের লাগেজ হাতে পান তা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রধান অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, উন্নততর সমন্বয় ও রিসোর্স অপ্টিমাইজেশান পরিষেবাগুলোর কার্যদক্ষতা উন্নত করেছে এবং লাগেজ পড়ে থাকার ঘটনা ৯৯.৮ শতাংশ সাফল্যের সাথে উল্লেখগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

মাঠ পর্যায়ের নজির:

সৌদি আরব থেকে প্রত্যাবর্তনকারী জাহাঙ্গীর আলম বাসসের সাথে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলন, ''পরিবর্তনগুলো বাস্তবসম্মত। ইমিগ্রেশন শেষ করার পরই, আমি বেল্টে আমার লাগেজ খুঁজে পেয়েছি।'

তিনি বলেন, 'আগে আমার লাগেজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এখন, প্রক্রিয়া
 অনেক দ্রুত। '

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশি মাহবুব হোসেনও অনুরূপ অনুভূতির প্রতিধ্বনি করে বলেন, 'আমি অল্পব সময়ের মধ্যেই বিমানবন্দর থেকে বের হতে পেরেছি। আমার অতীত সফরে সময় যেমন 
অভিজ্ঞতা ্হয়েছিল সেটির তুলানায় এবার বিলম্ব ও ঝামেলামুক্ত পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি।'

উন্নত বিমানবন্দর নিরাপত্তা:

জিয়া বিমান বন্দরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়ানো। কঠোর 
ব্যবস্থা, বর্ধিত সতর্কতা এবং উন্নত প্রযুক্তি- সবই নিরাপদ ও আরে নিরাপদ ভ্রমণ পরিবেশ তৈরিতে অবদান রেখেছে।

বিমানবন্দরটি ২৬টি স্বয়ংক্রিয় ই-গেট চালু করেছে, অভিবাসন প্রক্রিয়া সুগম করেছে এবং যাত্রীদের অপেক্ষার সময় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা কীভাবে আমাদের পরিষেবায় আন্তর্জাতিক মান পূরণ করতে আধুনিকীকরণ করছি স্বয়ংক্রিয় ই-গেটগুলি তার নজির।

আরো কিছু উদ্ভাবন:

প্রবাসী লাউঞ্জ ও লাগেজ হ্যান্ডলিং উন্নত করার পাশপাশি জিয়া বিমান বন্দর যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য আরো বেশ কিছু নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে।

এগুলোর মধ্যে একটি হলো, ২৪-ঘণ্টা হটলাইন এবং নতুন ওয়েব পোর্টাল চালু করা যাতে যাত্রীরা সহজে সহায়তা পেতে পারে এবং ১৩৬০০ হটলাইনে যেকোনো সময় কল করে অভিযোগের সমাধান করতে পারে। ওয়েবসাইটেও আপ-টু-ডেট তথ্য পাওয়া
যায়।

যাত্রীদের সংযুক্ত থাকার সুবিধা দেয়ার জন্য বিশেষ করে যদি তাদের স্থানীয় সিম কার্ড না থাকে, সে ক্ষেত্রে হোয়াটসএ্যাপস-এর মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যোগাযোগ করার সুবিধার্থে বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হয়েছে।

বিনামূল্যে টেলিফোন কল করা এবং যোগাযোগের সুবিধার্থে যাত্রীদের জন্য দশটি বিনামূল্যে ব্যবহাযোগ্য টেলিফোন বুথ স্থাপন করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যসম্মত পরিচ্ছন্নতা:

চত্বরটিকে দাগমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে তিন শিফটে কর্মরত ৪৫০ জন কর্মীর মধ্যে উচ্চমানের পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জিয়া বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ জলাশয়ে লার্ভা ব্যবস্থাপনার জন্য লার্ভিসাইড স্প্রে করা ও মাছ ছাড়ার পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, ভ্রমণকারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়ে যাত্রীদের প্রতি অঙ্গীকার পূরণ করেছে।

ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি:

জিয়া বিমান বন্দর ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে ২৬টি অতিরিক্ত বোর্ডিং ব্রিজ এবং অন্যান্য বিশ্ব-মানের সুবিধা সহ টার্মিনাল ৩ এর সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, 'আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি
হচ্ছে জিয়া বিমান বন্দরকে এমন একটি হাবে রূপান্তরিত করা যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করবে।

তিনি বলেন, 'এই ১০০ দিনে আমরা যা অর্জন
করেছি তার জন্য আমরা গর্বিত। তবে এটি  কেবল
শুরু। উদ্ভাবন ও পরিষেবার উৎকর্ষের লক্ষ্যে
আমাদের অঙ্গীকার অব্যাহত থাকবে।'