বাসস
  ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৮
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২

সংকট নিরসনে সংস্কার কার্যক্রম চলছে : ড. সালেহউদ্দিন

\ঢাকা, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিগত শাসনামল থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া  আর্থিক, পুঁজিবাজার ও ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন খাতের সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশ সচিবালয়ে তাঁর কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পূর্তি উপলক্ষে জাতীয় বার্তা সংস্থাকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।

শ্বেতপত্র কমিটি, অর্থনীতি পুনঃকৌশলীকরণ কমিটি এবং অন্যান্য কমিটি গঠন ও কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, এসব খাতে সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে, অন্যথায় সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আর্থিক খাত, ব্যাংকিং খাত এবং পুঁজিবাজার সংস্কার করা হচ্ছে।

পুঁজিবাজার সংস্কার সম্পর্কে তিনি বলেন, বাজারের প্রবণতা পর্যবেক্ষণ ও সিকিউরিটিজ ট্রেডিংয়ে হেরফের রোধে একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বিক্রি থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধন লাভের ওপর কর হার কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

করের হার কমানোর আগে পাঁচ বছরের মধ্যে যেকোন সময় লাভ হলে করদাতাদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধন লাভের ওপর ৩০ শতাংশ কর দিতে হতো। পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে আইসিবিকে ইতোমধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, 'এখন সংশোধনমূলক ব্যবস্থা চলছে। এগুলো সবই একটি বার্তা দেওয়ার জন্য-  করা না হলে আপনি সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নিতে পারবেন না।’

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এডিপির অধীনে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও পর্যালোচনা করছি। প্রয়োজনীয়তা  বিবেচনায় এবং উচ্চতর রিটার্নের হার রয়েছে  এমন  প্রকল্পগুলো  এখন একনেকে রাখা হচ্ছে... চলমান প্রকল্পগুলোও  অব্যাহত থাকবে।’

সরকার ঋণ পরিশোধে চিন্তিত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার ব্যবহারে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে এবং নিজের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

তিনি বলেন, বাজেটে আরও চাপ আসতে পারে, তবে বাজেট সংশোধনের সময় বিশেষ করে উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য রেখে তা পর্যালোচনা করা হবে।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, এডিপিকে যতদূর সম্ভব ন্যায়সঙ্গত করা হবে।  এটিকে বড় করা হবে না  আবার এটি খুব ছোট করা হবে না।

‘এডিপিকে খুব যৌক্তিক করা আমাদের সক্রিয় বিবেচনার মধ্যে রয়েছে’ বলেন  তিনি ।

পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাঁদাবাজি, বাজারে কাঠামোগত কিছু সমস্যা থাকায় এক-দুই মাসে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন,‘আমরা রমজানে ছোলা, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, খেজুর এবং সয়াবিন তেল নিশ্চিত করছি ... বিশ্ববাজারের কারণে চিনি, চাল এবং অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "আমাদের মূল্যস্ফীতির  একটি বড় কারণ আমদানিকৃত মূল্যস্ফীতি ... তা সত্ত্বেও, আমরা আমদানিকৃত জিনিসের ওপর শুল্ক কমিয়েছি ... টিসিবি প্রয়োজনে উঅঊ-এর পাশাপাশি ট্রাক সেলের মাধ্যমে পরিধি  বাড়াবে এবং আগামী ডিসেম্বর এবং তারপরও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকতে পারে।’

উপদেষ্টা বলেন, রমজানে উৎপাদন বাড়ানোর  লক্ষে মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ডিম উৎপাদনে প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশ্বস্ত করছি যে পবিত্র রমজান মাসে কোন ঘাটতি হবে না।’

তিনি বলেন, বেসরকারি আমদানিকারকরা চাল আমদানি না করলে খাদ্য অধিদপ্তর নিজস্ব ব্যবস্থায় টিসিবি কর্তৃক সয়াবিন তেলসহ  সরবরাহ নিশ্চিত করবে।

এদিকে, পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে পণ্য আমদানির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

বিশাল কর্মযজ্ঞের অংশ হিসেবে, টিসিবি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমদানির মাধ্যমে সারাদেশে পেঁয়াজ ও আলু বিক্রির পাশাপাশি প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল, ২ কোটি লিটার ভোজ্য তেল এবং ১০ হাজার  মেট্রিক টন চিনি বিক্রি করবে। .

এছাড়া রোজার মাসে টিসিবি ১০ হাজার মেট্রিক টন ছোলা এবং ১ হাজার ৫শত  মেট্রিক টন খেজুর বিক্রি করবে।

এদিকে, স্থানীয় বাজারে ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ন্ত্রনে  জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পেঁয়াজ আমদানির উপর ৫ শতাংশ শুল্ক মওকুফ করেছে।  এ ছাড়া  আলু আমদানিতে  শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে এবং কীটনাশক আমদানিতে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।
এনবিআর  সয়াবিন তেল, পাম তেল এবং অন্যান্য ভোজ্য তেলের স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মওকুফ করেছে।

সরকার অপরিশোধিত ও পরিশোধিত সয়াবিন তেল, পাম তেল এবং অন্যান্য ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট বর্তমান ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে।

বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়াতে এবং ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের দাম কমাতে ডিমের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে কর্তৃপক্ষ।

জেলা পর্যায়ে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন  এবং সরবরাহ  পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার জন্য একটি "বিশেষ টাস্কফোর্স" গঠন করেছে সরকার।