বাসস
  ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:০৩
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৩৮

সরকার রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল সংস্কারের ভিত্তি গড়ে দিয়ে যেতে চায় : নাহিদ ইসলাম

আজ তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। ছবি বাসস

ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫  (বাসস): তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসিবাদ সমূলে উৎপাটন করতে বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল সংস্কারের ভিত্তি গড়ে দিয়ে যেতে চায়।

বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আয়োজিত 'জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহত সাংবাদিক এবং অসুস্থ/অসচ্ছল সাংবাদিকদের কল্যাণ অনুদান ও সাংবাদিক সন্তানদের বৃত্তির চেক বিতরণ' অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা আজ একথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, 'বিদ্যমান কাঠামো থেকে গেলে যে সরকারই আসুক, ফ্যাসিবাদ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। আমরা তা হতে দেব না। রাষ্ট্র সংস্কার এজন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এর জন্য সময় লাগবে। সেই কাঠামো তৈরি হবার পর যে সরকারই আসুক, তারা কাঠামোকে ধরে রাখবে।'

তিনি আরো বলেন, 'আন্দোলনে আমরা ধাপে ধাপে এগিয়েছি। কোটা সংস্কার, নির্যাতন ও হত্যার বিচার এবং ফ্যাসিবাদের বিচার করতে হবে। এ সকল ঘটনার আসামি শেখ হাসিনার অবশ্যই বিচার করা হবে। দমন-পীড়ন নয় বরং বিচারের মাধ্যমে দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা হবে।'

নাহিদ বলেন, 'গত পনেরো বছরে কার কি ভূমিকা ছিলো তা ভুলে না গিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে। জুলাই আমাদের ঐক্যের শিক্ষা দেয়, শিক্ষা দেয় যে, সমাজে অনেক ভিন্ন মত থাকবে, এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও মতের ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু দেশ, জনগণ ও জাতির সংকটের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।'

সচেতন ও বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য গণমাধ্যমগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ সময়ে বাংলাদেশকে নিয়ে বিভিন্নভাবে অনেকে ভ্রান্ত বা ভুল তথ্য দিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তারা বলছে আমাদের গণমাধ্যম স্বাধীন নয়। সরকারের ওপর থেকে আপনাদের ওপর কোনো ধরনের চাপ নেই। আপনারা সত্যটা প্রচার করুন।'

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সকল সমালোচনাকে স্বাগত জানান। আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে চাই। কিন্তু তাই বলে ফ্যাসিবাদের দোসররা যদি সুযোগ নিতে চায়, ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন করতে চায়, তবে আমরা কঠোর হব।

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, 'বিগত সময়ে সকল প্রতিষ্ঠানেই দলীয়করণ ছিল এবং গণমাধ্যমগুলোর অনেকেই তার ব্যতিক্রম ছিল না। তবুও অনেকে ঝুঁকি নিয়ে সত্যের ও ন্যায়ের পক্ষে থেকেছেন। যে সময়টা ইন্টারনেট ছিল না, সেইসময় তাঁদের কারণে প্রকৃত অবস্থাটা জানা গেছে।'

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেও সংবাদ প্রচার করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকার জন্য শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, 'ছাত্র ও শ্রমিকদের সাথে তারাও লড়াই করেছেন। তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'পাঁচটি শহীদ পরিবারকে আজকে আমরা একসাথে পেয়েছি, তাদের জন্য ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় কিছু করতে পেরেছি, এটা আমাদের জন্য আনন্দ ও গর্বের বিষয়। আমরা আশা করি এই বৃত্তি প্রদানের কাজ অব্যাহত থাকবে।'

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা ফারজানা।

জুলাই আগস্টে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তথ্য সচিব মাহবুবা ফারজানা বলেন, 'আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের কাছে আমাদের অনেক ঋণ রয়েছে। সেইসঙ্গে বিগত সতের বছরে সাংবাদিক ভাইয়েরা যারা শত লোভের প্ররোচনা সত্ত্বেও ন্যায় ও সত্যের সাথে থেকেছেন তাদের প্রতি আমরা ঋণী।'

তিনি বলেন, 'আজকের এ অনুদান আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও সাংবাদিকদের অধিকার। তথ্য উপদেষ্টার ঐকান্তিক চেষ্টায় তা সম্ভব হয়েছে। তার চেষ্টায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ২ (দুই) কোটি টাকার অনুদান অনুমোদিত হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রবীণ পেনসন ব্যবস্থা চালুর কাজ চলছে এবং নিয়মিত বৃত্তির ব্যবস্থা কার্যক্রম চালু থাকবে।'

শুভেচ্ছা বক্তৃতা দেন ট্রাস্ট সদস্য-এখন টিভির সাংবাদিক সাজিদ আরাফাত, বিএফইউজে নির্বাহী সদস্য শাহীন হাসনাত, ডিইউজে-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক  মুহাম্মদ বাকের হোসেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ূব ভূঁইয়া, বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, শহীদ সাংবাদিক মো. তাহির জামান প্রিয়’র মা শামসি আরা জামানসহ আরও অনেকে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহীদ সাংবাদিক মো. মেহেদী হাসান, মো. শাকিল হোসেন, আবু তাহের মোহম্মদ তোরাব, সোহেল আখঞ্জি, তাহির জামান প্রিয় ও প্রদীপ কুমার ভৌমিক এর পরিবারের সদস্যরা এবং অনুদান প্রাপ্ত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যরা।

অনুষ্ঠান শেষে তথ্য উপদেষ্টা উপস্থিত অনুদান প্রাপ্ত সকলের হাতে চেক তুলে দেন।