তিস্তাপাড়ে মশাল জ্বালিয়ে লাখো মানুষের প্রতিবাদ

বাসস
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪:০৭ আপডেট: : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:৩৪
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায় তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে মশাল প্রজ্জ্বলন করেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। ছবি : বাসস

//রেজাউল করিম মানিক//

রংপুর, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত উত্তরাঞ্চলের মানুষ ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। প্রতিবাদ আর ক্ষোভের আগুনে মশাল প্রজ্জ্বলন করে তিস্তা অববাহিকাজুড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষ।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচির অংশ হিসেবে রংপুরের পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে একযোগে তারা মশাল প্রজ্জ্বলন করেন।

এ সময় বিক্ষুব্ধ তিস্তাবাসীর কণ্ঠে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’, ‘পানি আগ্রাসন মানি না মানব না’, ‘পানির ন্যায্য হিস্যা চাই, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু কর, করতে হবে’, ডাক দিয়েছেন দুলু ভাই, জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’সহ বিভিন্ন শ্লোগান শোনা যায়।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া তিস্তাপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে তিস্তাকে শুকিয়ে মারার জন্য ভারতকে পানি আগ্রাসী বলে দাবি করেন। তারা তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান।

এখন তিস্তা বিস্তৃত ১১টি পয়েন্টে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। এর আগে, জনতার গণসমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয় বা দিতে যদি দেরি করে, তিস্তা চুক্তি করতে অনীহা দেখায় তাহলে দেশ ও জনগণের স্বার্থে জনগণকে বাঁচাতে, কৃষিকে বাঁচাতে, কৃষককে বাঁচাতে, নদী বাঁচাতে, নাব্যতা রক্ষা করতে তিস্তা সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদেরকেই আমাদের বাঁচার পথ খুঁজে নিতে হবে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সব সম্ভাব্য বিকল্পকে কাজে লাগাতে হবে। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট সব আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালোভাবে বাংলাদেশের দাবি তুলে ধরতে হবে। একইসঙ্গে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেও আমাদেরকে কূটনৈতিকভাবে আলোচনা শুরু করতে হবে। আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে আর সময়ক্ষেপণ না করে বাংলাদেশকে ১৯৯২ সালের ওয়াটার কনভেনশন এবং ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশনে স্বাক্ষর করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

এদিকে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদীবেষ্টিত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার মানুষ পানি বৈষম্যের শিকার হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা বাকস্বাধীনতা পেয়েছি। রংপুরের মানুষ তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে জেগে উঠেছে। তিস্তা পানি নিয়ে ভারতীয় আগ্রাসন ও বৈষম্যের বিষয়টি গোটা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন যদি আমাদের দাবি আদায় না হয় তাহলে আগামীতে পুরো উত্তরাঞ্চল অচল করে দেওয়ার মতো বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এর আগে, সকালে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে গণপদযাত্রা শুরু করে তিস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটি। এ পদযাত্রায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীসহ তিস্তাপাড়ের সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিয়েছেন। গণপদযাত্রাটি লালমনিরহাট প্রান্তের তিস্তা ব্রিজ থেকে শুরু হয়ে রংপুরের কাউনিয়া বাজার প্রান্তে গিয়ে শেষ হয়।

এদিকে আজ বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার কর্মসূচি। সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছিল এই লাগাতার কর্মসূচি। ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ শ্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন এ কর্মসূচি দেয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সীমানা নির্ধারণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাস্তা অবরোধের অধিকার কারও নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
পাকিস্তানের ঘটনাকে বাংলাদেশের দাবি করা ভুয়া ভিডিও শনাক্ত বাংলাফ্যাক্টের
পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগ নেতা আটক
শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নেই উদযাপিত হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নেপালে ‘দুর্নীতি বন্ধের’ জন্য বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে চলার অঙ্গীকার কার্কির
চাকসুর মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু ইসির
আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু কাল
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় উপস্থিত থাকছেন প্রধান উপদেষ্টা
সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ৩০ নভেম্বর
১০