শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার প্রথম সাক্ষী বললেন ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে’

বাসস
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৪০

ঢাকা, ৩ আগস্ট ২০২৫(বাসস): ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আজ রোববার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রথম সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমার এক চোখ শেষ হয়ে গেছে, আরেক চোখে ঝাপসা দেখি। আমার নাক-চোয়াল সব নষ্ট হয়ে গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’

একপর্যায়ে মাস্ক খুলে বিকৃত হয়ে যাওয়া নিজের মুখমণ্ডল দেখান খোকন। এরপর তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত আমার এই অবস্থা এবং আমাদের ভাইদের হত্যার আমি বিচার চাই। শেখ হাসিনা, কাউয়া কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি ও শামীম ওসমানের বিচার চাই।’

রোববার বেলা সাড়ে ১১ টায় বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল- ১ এ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের পরপরই এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন খোকন চন্দ্র বর্মন।

খোকন চন্দ্র বর্মন গত বছরের ১৮ জুলাই নারায়নগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় তার সামনে সংঘটিত হতাহতের ঘটনায় সাক্ষ্য দেন। এ সময় খোকন চন্দ্র বর্মন বলেন, ওইদিন যাত্রাবাড়ী থানা থেকে পুলিশ বের হয়ে পাখির মতো ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। একপর্যায়ে পুলিশ তাকে টার্গেট করে গুলি করলে তার হাতে পায়ে গুলি লাগে। পরে তিনি ফ্লাইওভারের নিচে থাকা কিছু ড্রামের পেছনে আশ্রয় নেন। কিন্তু পুলিশ কাছ থেকে তার মাথা টার্গেট করে গুলি করে এবং সেটা মুখে লাগলে তিনি ছটফট করতে থাকেন।

খোকন জানান, প্রথমে মুগদা মেডিকেল, তারপর ঢাকা মেডিকেল, মিরপুরের ডেন্টাল হসপিটাল ও বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে এক মাস চিকিৎসার পর সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য রাশিয়ায় পাঠায়। আগামী ১২ আগস্ট অপারেশনের জন্য আবারও তাকে রাশিয়া যেতে হবে বলে জানান খোকন।

আজকে প্রথম সাক্ষ্য দেওয়ার পর শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন খোকন চন্দ্র বর্মনকে জেরা করেন। আগামীকাল এই মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

চিফ প্রসিকিউটরের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের আগে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আজকের দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন। তিনি গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ন্যায়বিচার চেয়ে ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য রাখেন।

ট্রাইব্যুনাল চিফ প্রসিকিউটরের সাথে প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, শেখ হাসিনার পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।


এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এছাড়া এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। সেই সাথে এই মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ৩ আগস্ট ও সাক্ষ্যের জন্য ৪ আগস্ট দিন ধার্য করেন।

গত ১৬ জুন ট্র্যাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং পরদিন দুটি পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও কামালকে ৭ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক দুই আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী দিয়ে এই মামলায়  অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী শুনানি শেষে গত ১০ জুলাই এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্র্যাইব্যুনাল-১।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫টি অভিযোগ এনে অভিযোগ গঠনের আবেদন করে প্রসিকিউশন।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।

এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পলিথিন বিরোধী অভিযানে সাড়ে ৫ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ
সংবাদমাধ্যম জনগণের কাছে দায়বদ্ধ : মাহফুজ আলম
সিলেটে ডাবল মার্ডার মামলায় দুই সহোদরের মৃত্যুদণ্ড, একজনের যাবজ্জীবন
সৌদি আরবে ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
বিমসটেকে নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বৃহত্তর অঞ্চলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সহায়তা করবে : আইসিসিবি
৫ আগস্ট বন্ধ থাকবে ব্যাংক
গোমতীর পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্টের নির্দেশ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব শাকিল আখতার
জুলাই ঘোষণাপত্র মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ঘোষণা করা হবে
জিম্বাবুয়ে সফর থেকে ছিটকে গেলেন স্মিথ
১০